হকারদের দখলে সিলেটের রাস্তা ও ফুটপাত

  • নাবিল চৌধুরী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

'হকার বসা নিষেধ' পোস্টার থাকলেও কেউ তোয়াক্কা করছেন না, ছবি: আবু বক্কর, বার্তা২৪.কম

'হকার বসা নিষেধ' পোস্টার থাকলেও কেউ তোয়াক্কা করছেন না, ছবি: আবু বক্কর, বার্তা২৪.কম

কোনোভাবেই হকারদের কবল থেকে দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না সিলেট নগরের ফুটপাত। সিটি করপোরেশন দিনের পর দিন টানা অভিযান পরিচালনার করলেও ফুটপাত ছাড়ছেন না হকারেরা। অভিযান শেষ হলেই আবারও ফুটপাত দখল করে বসছেন তারা। চলতি শীত মৌসুমে তাদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়েছে।

ফুটপাতের পাশাপাশি মূল সড়কের অর্ধেকেরও বেশি দখল করে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসছেন হকারেরা। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। ফুটপাত ছেড়ে রাস্তার উপর দিয়ে হাটতে হচ্ছে তাদের। হকারদের কারণে নগরে যানজটও বেড়েছে।

বিজ্ঞাপন

নগরবাসী বলছেন, ফুটপাত দখলমুক্ত থাকলে নগরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেতো। সেই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সহজেই চলাচল করতে পারতেন তারা। হকার ও প্রশাসনে মধ্যে ইঁদুর-বিড়াল খেলা বন্ধ করে দ্রুত স্থায়ীভাবে ফুটপাত দখলমুক্ত করার দাবি তাদের। আর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের দাবি, ফুটপাত হকারমুক্ত করতে তাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

জানা গেছে, ২০১৩ সালে আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছেন। তবে গত ৭ বছরে স্থায়ীভাবে হকার উচ্ছেদে করতে পারেননি। অভিযানে বার বার মালামাল জব্দ করা হলেও হকাররা পুনরায় ফুটপাত দখল করে বসে যায়।

বিজ্ঞাপন

ফুটপাথে যাতে হকার না বসে, সেজন্য আদালতও দিয়েছেন নির্দেশনা। কিন্তু কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে তাদের অবৈধ দখলদারিত্ব চালিয়ে যাচ্ছে হকাররা। ২০১৭ সালে দখলদারের একটি তালিকা আদালতে জমা দেয় সিটি করপোরেশন। পাশাপাশি চলে হকার উচ্ছেদ অভিযান। কিন্তু সবকিছুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দখল ছাড়ছেন না তারা।

সিলেট নগরের চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, তালতলা, সুরমা মার্কেট পয়েন্ট, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, আম্বরখানা, মদিনা মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি এলাকার ফুটপাত হকারদের দখলে। সিলেট জেলা পরিষদের সামনে 'হকার বসা নিষেধ' লেখা সাইনবোর্ডের নিচে হকারদের বসে থাকতে দেখা যায়। জেলা পরিষদের সামনে দিনের বেলা ফুটপাতে কাপড় বিক্রি করেন হকারেরা। আর বিকেলে পর রাস্তার অর্ধেক দখল করে সবজি, মাছ ও ফল বিক্রি করা হয়।

এদিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে 'পথচারীর জন্য উন্মুক্ত' সাইনবোর্ড টাঙানো থাকলেও সেখানে ফলমূল বিক্রি করতে দেখা যায় হকারদের। খোদ নগর ভবনের ফটকের সামনেও রয়েছে হকারদের দৌরাত্ম্য। সেখানে বসে ঘড়ি, চশমা, চাবি, সবজির দোকান। নগরের বন্দরবাজার-জিন্দাবাজার এই সড়কের দুই পাশের ফুটপাত পুরোটাই হকারদের দখলে।

এছাড়া সন্ধ্যার পর রাস্তার অর্ধেকও দখল থাকে হকারদের। ফলে বিকেল থেকে তীব্র যানজটের কারণে এই সড়ক এড়িয়ে চলেন অনেকে। একইভাবে জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা-আম্বরখানা সড়কের দুই পাশেও রাজত্ব রয়েছে হকারদের। এসব সড়কের অনেক ব্যবসায়ী দোকানে সামনে হকার বসিয়ে টাকা আদায় করছেন। অনেক ব্যবসায়ী আবার দোকানের কিছু পণ্য ফুটপাতেও বিক্রি করেন। জিন্দাবাজারস্থ নজরুল একাডেমির পাশে ফুটপাতে মানিব্যাগ, হেডফোন, চেইন ইত্যাদি পণ্য বিক্রেতা একজন বলেন, ফুটপাতে ব্যবসা করলে সমস্যা কোথায়? পেছনের থাই ফ্যাশন নামে একটি দোকান দেখিয়ে তিনি বলেন, এই দোকানের মালিক হয়ে আমি এসব পণ্য ফুটপাতে বিক্রি করি। বাধা দিবে কে?

হকারদের দখলে ফুটপাত, ছবি: আবু বক্কর, বার্তা২৪.কম

আল-হামলা শপিং সিটির সামনে ফুটপাতে সিম কার্ড বিক্রি করা নগরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হৃদয় বলেন, দুই বছর ধরে এখানে বসে সিম কার্ড বিক্রি করি। কেউ বাধা দেয়নি। আমি মার্কেটের ইনচার্জের অনুমতি নিয়ে এখানে ব্যবসা করি, তাই কোনো ঝামেলা হয়না।

বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক নাহিদ হোসেন বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করতে কার্যকর পদক্ষেপের অভাব রয়েছে। কয়েকবছর ধরে নানান উদ্যোগ, অভিযান দেখছি। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অভিযান অভিযান খেলায় জনপ্রতিনিধিরা সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চান বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট জেলার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এখন ফুটপাতের পাশাপাশি রাস্তা হকারেরা দখল করেছে। হকার উচ্ছেদের কার্যকর কিছু হচ্ছেনা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত নিয়মিতভাবে হকার উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা। তবে হকারদের পুনর্বাসন করাও দরকার।

এ বিষয়ে একাধিকার যোগাযোগ করা হলেও সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরীকে পাওয়া যায়নি। আর নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর বলেন, হকার উচ্ছেদে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি। তবে অভিযান শেষেই হকারেরা আবারও বসে যায়। স্থায়ীভাবে হকার উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না কেনো জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে এই বিষয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দরকার।