তিন বছরে সিলেটের সড়কে ৩১৯ মৃত্যু

  • নাবিল চৌধুরী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

বেপরোয়া যান চলাচলের কারণে সিলেটের সড়কে মৃত্যুর মিছিল চলছেই। প্রায় প্রতিদিনই সিলেটের সড়কে ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। ছাত্রদের আন্দোলনে আর দায়িত্বশীলদের নানা আশ্বাসের ফুলঝুরি কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না এ মৃত্যুর মিছিল। অযোগ্য চালক, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, জনগণের অসচেতনতা ও অনিয়ন্ত্রিত গতিকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) জানিয়েছে ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সিলেট জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩১৯ জন জন।

বিজ্ঞাপন

নিসচা জানায়, ২০১৯ সালে সিলেট জেলায় ৭১টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় ১৫৭ জন। আহতের সংখ্যা ৭৩। ২০১৮ সালে সিলেট জেলায় ৫৫টি দুর্ঘটনায় নিহত হয় ৭১ জন ও আহত ২০৮ জন। ২০১৭ সালে সিলেট জেলায় ৪২টি দুর্ঘটনায় নিহত হয় ৮৪ জন ও ৫৭ জন আহত হয়েছে।

আর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের গত রবিবার (২৬ জানুয়ারি) পর্যন্ত আরও অন্তত ১০টি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৭ জন, আহত হয়েছেন প্রায় ১৫ জন।

বিজ্ঞাপন
গেল ডিসেম্বরে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় ট্রাক্টরচাপায় মোটরসাইকেলে থাকা দুই তরুণ-তরুণী নিহত হন

পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের একটি বড় অংশ মাদক সেবনের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে সড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। এসব চালকের অধিকাংশেরই ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। বেশিরভাগ বাসের নেই ফিটনেস। সন্ধ্যার পর প্রকৃত চালকের বদলে কিশোর হেলপার, কন্ডাক্টররাই গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে। তাদের হাতেই বড় দুর্ঘটনা ঘটে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিবহন মালিক সমিতির এক নেতা জানান, পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে বর্তমানে নেশাদ্রব্যের ব্যবহার অনেক বেশি। নেশার ঘোরে বেপরোয়া বাস চালান অনেক বাসচালক। ফলে সড়কে বাস চাপায় অহরহ মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। চালকদের একটা বড় অংশ মাদকাসক্ত হওয়ায় তারা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছেন না। তিনি বলেন, প্রতিদিন ১০ থেকে ১৪ ঘণ্টা স্টিয়ারিং ধরে বসে থাকার শক্তি জোগাতে ইয়াবা ও গাঁজা সেবন করেন অধিকাংশ বাসচালক। বিষয়টি ওপেন-সিক্রেট হলেও প্রতিকারের কোনো উদ্যোগ নেই।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মিশু বলেন, সিলেটের পরিবহন মালিক ও শ্রমিকেরা বেপরোয়া। তারা নিয়মনীতির কোনও তোয়াক্কা করে না। প্রতিদিনই সিলেটে দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় অনেকে নিহত ও আহত হলেও এসবের কোনো বিচার হয় না।

গেল নভেম্বরে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়লে ৩ জন নিহত হয়

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট জেলার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, শুধু সড়ক দুর্ঘটনা নয়, দেশে নেগেটিভ সবকিছু বেড়েছে। দেশে এখন কোনো আইনের শাসন নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকার দলের কারণে দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমুলক কোনো বিচার না হওয়ার সড়কে মৃত্যু থামছে না।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সিলেট বিভাগীয় কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সেলিম আহমদ ফলিক বলেন, সড়কে দুর্ঘটনার জন্য চালকদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তা উড়িয়ে দেবার মতো নয়। তবে একক ভাবে চালকদের দায়ী করা ঠিক নয়। যান্ত্রিক সমস্যা ও পথচারীদেরও দায় রয়েছে। সরকার ও আমরা চাচ্ছি সড়কে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে।