মধ্যমাঘে সোনারঙা মুকুলে মৌ মৌ ঘ্রাণ

  • হাসান আদিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মাঘের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে রাজশাহী জেলার অনেক আম বাগানে দেখা যাচ্ছে আমের মুকুল

মাঘের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে রাজশাহী জেলার অনেক আম বাগানে দেখা যাচ্ছে আমের মুকুল

মাঘের মাঝামঝি সময়ে রাজশাহীর গাছে গাছে ফুটছে আমের সোনালি মুকুল। মৌ মৌ গন্ধে মুকুলে ওড়াউড়ি করছে মৌমাছি। আর মুকুল ফোটার এই দৃশ্যে নতুন স্বপ্নে বিভোর আমের রাজধানী রাজশাহীর আম চাষিরা।

সোমবার (২৭ জানুয়ারি) রাজশাহীতে আম উৎপাদনের প্রসিদ্ধ কয়েকটি উপজেলা ও নগরীর আশেপাশের বেশকিছু এলাকার আম বাগান ঘুরে মুকুল ফোটার দৃশ্য চোখে পড়ে। জেলার পুঠিয়ার বানেশ্বর, মোহনপুর, বাঘা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার বাগানগুলোতেও এখন শোভা পাচ্ছে আমের মুকুল।

বিজ্ঞাপন

তবে আম চাষিরা বলছেন, আগাম জাতের কিছু আম গাছে মাঘের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মুকুল ফুটতে শুরু করেছে। এগুলোর বেশির ভাগই গুঁটিজাতের আম গাছ। তবে অধিকাংশ গাছেই মুকুল ফোটার কাছাকাছি পর্যায়ে রয়েছে। গাছের ডগায় ডগায় এখন অঙ্কুরিত হচ্ছে মুকুল। মাঘের শেষ দিকে সব জাতের আম গাছে মুকুল ফুটবে।

মাঘের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে রাজশাহী জেলার অনেক আম বাগানে দেখা যাচ্ছে আমের মুকুল

রাজশাহীর পুঠিয়ার আম চাষি রইছউদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমার বাগানে কিছু গাছে পুরোপুরি মুকুল এসেছে। অন্য গাছগুলোর ডগায় ডগায় মুকুল ফুটি ফুটি করছে। গত দেড় মাস থেকে বাগানের গাছ পরিচর্যা করছি। মাঘের শেষ দিকের মধ্যেই সবগাছে মুকুল আসলে তবেই স্বস্তি।

বিজ্ঞাপন

একই উপজেলার বানেশ্বর এলাকায় আরেক আম চাষী হাবিবুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, মাঘ মাসের মধ্যেই গাছে মুকুল না আসলে লোকসান হয়। কারণ, বেশি দেরিতে গাছে মুকুল এলে সেই মুকুলের আমও দেরিতে পাকে। বাজারে আমের ছড়াছড়ি হয়ে গেলে আর ভালো দাম পাওয়া যায় না।

রাজশাহী নগরের মেহেরচন্ডী এলাকার রমজান আলীর পুরো বাগানজুড়ে গাছে গাছে মুকুল এসেছে। এজন্য বেজায় খুশি তিনি। রমজান আলী বার্তা২৪.কমকে জানান, তার বাগানে গুঁটি জাতের কিছু আম গাছ বাদে সবই ল্যাংড়া, ফজলি আর আম্রপালি। গত সপ্তাহ থেকে তার বাগানের গাছে মুকুল আসা শুরু হয়। গেল ১০ দিনে পুরো বাগানে গাছে গাছে মুকুল ফুটেছে। ভালো ফলনের আশায় এখন দিনরাত বাগানের পরিচর্যা করছেন তিনি।

মাঘের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে রাজশাহী জেলার অনেক আম বাগানে দেখা যাচ্ছে আমের মুকুল

আমের মুকুল আসা নিয়ে আম চাষি রমজানের সাথে কথোপকথন শুনে নগরের বুধপাড়া এলাকার বাসিন্দা ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধা ইসমত আরা বলতে শুরু করেন, ছোটকাল থেকে শুনে আসছি— ‘পৌষে কুঁশি, মাঘে বোল (মুকুল), ফাল্গুনে গুঁটি, চৈত্রে আঁটি, বৈশাখে বাজাই বাঁশি, জ্যৈষ্ঠে আম-দুধের বাটি।’ কিন্তু জমানা বদলিয়ে গেছে। এখন ঠিক সময়ে কিছুই হতে দেখি না। মাঘ মাসে সারা বাগানে বোল (মুকুল) আসে দেখেছি। ইদানীং দেখছি নানা যত্ন-তদবির করেও গাছে বোল (মুকুল) আসছে না। দুনিয়ার হাওয়া (পৃথিবীর আবহাওয়া) বদলিয়ে গেছে।

মাঘের মাঝামাঝি সময়ে গাছে মুকুল আসা ভালো লক্ষণ বলছেন ফল গবেষকরা। মাঘের শুরুতে এক পশলা বৃষ্টি হওয়ায় মুকুল দ্রুত ফোটার ক্ষেত্রে উপকার হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত রাজশাহীর আবহাওয়াও আমের জন্য অনুকূলে আছে বলেও মনে করছেন তারা।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক ড. আলীম উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রতিকূল আবহাওয়ার ফল আম। শীতে কুয়াশার মধ্যে মুকুল আসবে, ফাল্গুনের হালকা শীত-বৃষ্টিতে গুঁটি হবে, গ্রীষ্মের খরতাপ ও কালবৈশাখী ঝড় উপেক্ষা করে গাছের বোটায় ঝুলে থাকবে, তারপর পুষ্ট হয়ে পাকবে। সেজন্য আমি বলি- প্রতিকূল আবহাওয়া কখনো আমের ফলনে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারে না।

আগেভাগে ফোটা মুকুলে ধরেছে গুঁটি

মাঘের শুরুতে মাঝামাঝি কিংবা শেষে যখনই মুকুল আসুক না কেন তা আমের ভালো ফলনের লক্ষণ উল্লেখ করেন ফল গবেষক আলীম উদ্দিন।

তিনি বলেন, চাষিদের কাজ হবে মুকুল না আসা পর্যন্ত গাছের গোড়ায় ও পাতায় পাতায় পানি ছিটানো। খুব বেশি ভিটামিন বা অন্য ওষুধও দেয়ার প্রয়োজন নেই। বরং মুকুল আসার পর গুঁটি বাঁধার আগে অল্প পরিমাণে ভিটামিন স্প্রে করা যেতে পারে। স্বাভাবিক পরিচর্যা ধারাবাহিকভাবে করলেই ভালো ফলন পাবেন রাজশাহী অঞ্চলের আম চাষিরা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মোছা. উম্মে সালমা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ১৭ হাজার ৫৭৪ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ মেট্রিকটন। তবে আবাদ ও উৎপাদন উভয় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি আমরা।