৯০০ টাকার ‘ডোপ টেস্ট’ ফি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৪০০০!
![ডোপ টেস্টে গলাকাটা ফি নেওয়া হচ্ছে/ছবি:বার্তা২৪.কম](https://imaginary.barta24.com/resize?width=800&height=450&format=webp&quality=85&path=uploads/news/2020/Feb/03/1580723205803.jpg)
ডোপ টেস্টে গলাকাটা ফি নেওয়া হচ্ছে/ছবি:বার্তা২৪.কম
রাজশাহীর পবা উপজেলার বাসিন্দা ইশতিয়াক আহমেদ। জানুয়ারির শুরুতে তিনি একটি সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পেয়েছেন। তবে যোগদানের আগে তাকে ডোপ টেস্ট করাতে হবে। গেল সপ্তাহে তা করাতে গিয়েছিলেন রাজশাহীর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখানে ডোপ টেস্টের রিপোর্ট পেতে তাকে গুণতে হয় চার হাজার টাকা। অথচ স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক ডোপ টেস্টের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ ফি ৯০০ টাকা। অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত ফি’র চেয়ে চার গুণেরও বেশি!
শুধু পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার নয়, রাজশাহীর সব বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে ডোপ টেস্টের জন্য গলাকাটা ফি আদায় করা হচ্ছে। কেউ-ই তোয়াক্কা করছে না সরকার নির্ধারিত ফি। প্রয়োজনের তাগিদে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ব্যয়ে ডোপ টেস্ট করাচ্ছেন চাকরিপ্রার্থী ও বিদেশগামীসহ অন্যরা।
তবে এ নিয়ে বিভাগীয় ও জেলা স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোনো মাথাব্যাথা নেই। আর অভিযোগ পাননি তাই ব্যবস্থা নেননি বলে জানান ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা।
![](https://imaginary.barta24.com/resize?width=700&quality=75&path=uploads/news/2020/Feb/03/1580723229927.jpg)
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর সব শ্রেণির সরকারি চাকরিতে যোগদানের আগে প্রার্থীর ‘ডোপ টেস্ট’ বাধ্যতামূলক করা হয়। সেসময় স্বাস্থ্য অধিদফতরের তৎকালীন পরিচালক (প্রশাসন) ডা. আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত পরিপত্রও জারি করা হয়। পরিপত্রে বলা হয়- ‘সব শ্রেণির সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় বিদ্যমান অন্যান্য ব্যবস্থার সঙ্গে ডোপ টেস্ট অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’
এর পরই ডোপ টেস্টের সরকারি একটি ফি নির্ধারণ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপ-সচিব মোহাম্মদ আবু রায়হান মিঞা স্বাক্ষরিত এক পরিপত্র জারি করা হয়।
সেখানে উল্লেখ করা হয়- সরকারি চাকরিতে যোগদানের আগে বাছাইকৃত ব্যক্তির স্বাস্থ্য পরীক্ষার সঙ্গে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ডোপ টেস্ট ফি নির্ধারণ করেছে সরকার। ডোপ টেস্ট বা মাদক পরীক্ষার জন্য সর্বোচ্চ ফি হবে ৯০০ টাকা। নন-স্পেসিফিক পরীক্ষা যেমন- বেঞ্জোডায়াজেপিন, এমফেটামাইনস, অপিয়েটস ও কেননাবিনেয়েডস- এই চারটির প্রতিটির ফি ১৫০ টাকা এবং অ্যালকোহল পরীক্ষার ফি ৩০০ টাকা।
গত ৩০, ৩১ ও ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বেসরকারি ক্লিনিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারা ৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে চার হাজার টাকা ফি নিয়ে ডোপ টেস্ট রিপোর্ট দিয়ে থাকেন। পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার আদায় করছে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ পর্যন্ত। আর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল নিচ্ছে চার হাজার টাকা। অন্য ক্লিনিকগুলোতেও একই হারে ফি আদায় করা হচ্ছে।
তাদের দাবি- সরকারিভাবে ডোপ টেস্ট ফি বিষয়ে তাদেরকে কোনো নির্দেশনা আসেনি। স্থানীয় স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকেও কিছু জানানো হয়নি। ফলে তারা নিজেদের মতো করে ফি আদায় করছে।
রাজশাহীর লক্ষ্মীপুরের পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপক ফরিদ মোহাম্মদ শামীম বলেন, ‘ডোপ টেস্ট রেট নির্ধারণ করা হয়েছে শুনেছিলাম। তবে সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আমাদের কাছে আসেনি। সরকার যদি নির্ধারণ করে থাকে এবং সে বিষয়ে আমাদের অবগত করা হয় তবে অবশ্যই আমরা মেনে চলবো। ডেঙ্গু টেস্টের সময় আমরা সরকারি নিয়ম মেনে ফি নিয়েছি। এটা নিতেও আমাদের কোনো সমস্যা নেই।’
ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দেখুন ডোপ টেস্ট নিয়ে কেউ কোনো খোঁজ এখনও নেয়নি। স্বাস্থ্য অধিদফতরও কিছু বলেনি। আমরা যেটা নিলে আমাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য ভালো হয়, সেটাই নিচ্ছি। তবে সরকারি নির্ধারিত ফি সম্পর্কে জেনেছি।’
রাজশাহী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারি পরিচালক হাসান আল মারুফ বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত ফি’র চেয়ে বেশি নেয়াটা অবশ্যই অপরাধ। তবে আমরা এখনও এনিয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আমরা সেখানে অভিযান চালাবো।’
রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক বলেন, ‘দ্রুত আমরা রাজশাহীর বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে চিঠি দিয়ে নির্দেশনা দেব। এরপরেও যদি তারা ৯০০ টাকা বেশি ফি আদায় করে তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
তবে ডোপ টেস্ট ফি নির্ধারণ এবং তা না মেনে চলার বিষয়ে কথা বলতে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচাক ডা. গোপেন্দ্রনাথ আচার্যের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করে হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমাকে বিস্তারিত জানতে হবে। তারপর কথা বলবো।’