৪৯ বছর পর রাজশাহী পুলিশ লাইন্স গণকবরে ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী, ছবি: বার্তা২৪.কম

শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী, ছবি: বার্তা২৪.কম

১৯৭১ সালের অগ্নিঝরা ২৮ মার্চ। দুপুরে খেতে বসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন রাজশাহী পুলিশ লাইন্সের কর্মরত পুলিশ সদস্যরা। হঠাৎ মর্টার ও ভারী মেশিনগান নিয়ে লাইন্সের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক দিয়ে অতর্কিত হামলা শুরু করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে পড়েন পুলিশ সদস্যরা।

যারা বাংকারে ছিলেন, তারা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ অস্ত্র-গুলি নিয়ে শুকনা ড্রেনে অবস্থান নেন। নেতৃত্ব শূণ্যতা এবং আকস্মিক আক্রমণে দিশেহারা পড়েন ট্রেনিংপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরাও। আগের দু-তিন দফার মতো আর সেদিন প্রতিরোধ করতে পারেনি।

বিজ্ঞাপন

হিংস্র হানাদার বাহিনীর নৃশংসতায় সেদিন শহীদ হন ১৯ জন পুলিশ সদস্য। তাদের মরদেহ সারি সারি করে পুলিশ লাইন্সের পূর্ব অংশে সমাহিত করা হয়। যা রাজশাহী পুলিশ লাইন্সের গণকবর বলে পরিচিত। দেশ স্বাধীনের ৪৯ বছর পার হলেও সেখানে শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়নি।

তবে এবার সেই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে পুলিশ। শহীদদের স্মৃতিতে সেখানে নির্মাণ করা হবে স্মৃতিস্তম্ভ। সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শুরু হবে কাজ।

বিজ্ঞাপন

কয়েকবছর আগেও স্থানটি ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ণ ছিলো বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা। তবে সোমবার সেখানে গিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেখা যায়। তিনজন পুলিশ সদস্যও ২৪ ঘণ্টা সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন। জঙ্গল কেটে মাটিভরাট করে জায়গাটি উঁচু করা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে সীমানা প্রাচীরও।

রাজশাহী পুলিশ লাইন্স গণকবরে নির্মিত হবে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ

প্রাচীরের পাশে রয়েছে শহীদ পুলিশ সদস্যদের নামফলক। এতে ১৭ জনের নাম লেখা রয়েছে। তারা হলেন- শহীদ আর্মড এসআই এনায়েত খান, কনস্টেবল আবদুল আজিজ, ওসমান খান, আবদুর রহমান, আককাস আলী, রইছ উদ্দীন, জয়নাল আবেদীন, আলাউদ্দীন, আলীমুদ্দিন, আবদুল হামিদ, সাদেকুল ইসলাম, মেছের উদ্দিন, আবু ইলিয়াছ, আবদুর রাজ্জাক, আবদুল মালেক, সিরাজুল ইসলাম ও আবদুল আজিজ মোল্লা।

তবে এই গণকবরে ১৯ জনের মরদেহ সমাহিত করা হয়েছিলো বলে জানিয়েছেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ২৮ মার্চের সম্মুখ সমরের পর ২৯ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী বোয়ালিয়া থানার ওসি দৌলত খানের কাছে ১৮ জন পুলিশ সদস্যের লাশ হস্তান্তর করে। আর একজনের লাশ পুলিশ লাইন্সে থেকে যায়। পরে পুলিশ লাইন্সের মধ্যেই আম ও বাবলাগাছে ঘেরা বাগানের মধ্যে ১৯ জন শহীদ পুলিশকে সমাহিত করা হয়।

রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘পুলিশ লাইনের পাশে শহীদ মামুন মাহমুদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে একটি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। সেখানে ১৯ জন শহীদের নামই লেখা আছে। গণকবরের স্থানে যখন স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে, তখন এখানেও ১৯ জনের নাম-পরিচয় রাখা হবে।’