বেহাল দশায় চট্টগ্রাম মেডিকেলের মনোরোগ বিভাগ!
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনেকগুলো বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা থাকলেও সবচেয়ে বেহাল অবস্থায় রয়েছে মনোরোগ বিভাগ। মূল ভবনের নিচতলায় আলো-বাতাসহীন প্রায়-বদ্ধ পরিবেশে চলছে বিভাগটি। সেখানে নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও সেবা প্রদানকারী স্টাফ।
'চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সবচেয়ে অবহেলিত বিভাগ হলো মনোরোগ চিকিৎসা ওয়ার্ড', এমনই অভিমত চট্টগ্রামের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সামাজিক আন্দোলনরত বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের। সরেজমিনে পরিদর্শন করেও ৫০ বেডের ওয়ার্ডে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য আগত রোগীদের চরম ভোগান্তির চিত্র দেখা গেছে।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মনোরোগ ওয়ার্ডে গিয়ে অব্যবস্থা ও গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া যায়। ওয়ার্ডের বোর্ডে তিনজন চিকিৎসকের নাম থাকলেও পাওয়া যায়নি একজনকেও।
রোগীরা জানিয়েছেন, সপ্তাহে একদিন ডাক্তারের দেখা পাওয়া যায়। চিকিৎসার কথা বললেও তাদের পাত্তা পাওয়া যায়না।
ওয়ার্ডের স্টাফ সুমন জানান, একমাত্র ডাক্তার ডা. পঞ্চানন আচার্য্যকে পাওয়া যায় এপিক ক্লিনিকে। অণিমা নামের একজন মাত্র নার্স সামলাচ্ছেন সব কিছু।
পটিয়ার জহির আহমদে তার রোগী ১৩ নং বেডে সাইফুলের কোনও চিকিৎসাই পাচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেন।
মনোরোগ বিভাগ নিজেই যেন রোগাক্রান্ত! কারণ, চট্টগ্রামের ৮০ লাখ নাগরিকের মধ্যে প্রায় ২০ লাখ মানুষ মনোরোগে ভোগেন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। যার মধ্যে কমপক্ষে ৬ লাখ মানুষ গুরুতর ভাবে মানসিক সমস্যাগ্রস্ত। শিশু-কিশোর বয়সের মানসিক আঘাত, সুপ্ত ব্যাধি প্রবল হচ্ছে যুবক ও মধ্য বয়সে। এতে অনেকেই ক্রনিক লেভেলের মানসিক রোগীতে পরিণত হচ্ছেন। কিন্তু এজন্য চট্টগ্রামে মেডিকেলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধা নেই।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে বাড়ছে মনোরোগ!
শুধু চট্টগ্রামে বা বাংলাদেশেই নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে মানসিক রোগ। অথচ এ স্বাস্থ্যগত বিপদ মোকাবেলায় নেই পর্যাপ্ত প্রতিরোধমূলক উদ্যোগ।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ এশিয়া: মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক অঞ্চল
চট্টগ্রামের বিভিন্ন মহল থেকে মনোরোগের বিস্তার রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উত্থাপিত হলেও স্বাস্থ্য বিভাগ ও পৌর প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিপুল সংখ্যক মানসিক রোগীর চিকিৎসা ও পরিসেবার বিষয়টি দিন দিন উপেক্ষিত হওয়ায় নাগরিক সমাজ বার বার উদ্বেগ প্রকাশ করছে।