গাজীপুরের কালিয়াকৈর রেঞ্জে বন বিভাগের জমিতে লাগামহীন ভাবে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে চলছে ইঁদুর বিড়াল খেলা। পুরো রেঞ্জে অন্তত দুই হাজার কাঁচা-পাকা বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বহুতল ভবন নির্মাণ হলেও এখনো এক ভাগ উচ্ছেদ হয়নি। আবার বিভিন্ন এলাকায় উচ্ছেদ হলেও স্থানীয় দালাল, ভূমিদস্যু ও রেঞ্জেত কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতায় ফের মেরামতের কাজও চলছে।
সরকারী বন সংরক্ষক রেজাউল আলম বার্তা৩৪.কমকে বলেন, প্রতিনিয়তই বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চলছে। তবে পরিস্থিতি আমাদের অনূকূলে নেই। ধীরে ধীরে সব স্থানেই উচ্ছেদ হবে। আমরা বিষয়টি দেখব বলে তড়িঘড়ি করে মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দিলেন।
সরেজমিনে ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর কালিয়াকৈর রেঞ্জের চন্দ্রা বিট, মৌচাক বিট, বোয়ালী বিট ও সোনাতলা বিটে একের পর এক অবৈধ স্থাপনা নির্ণামের হিড়িক পড়ে। খুদ সরকারি বনের জমির গাছপালা কেটে ও ফাকা জমিতে লাগামহীন ভাবে স্থাপনা নির্মাণ শুরু হয়। স্থানীয় দালাল ও ভূমিদস্যুরা গোপনে বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে আতাত করে মোটা অংকের উৎকোচ বিনিময়ে এসব স্থাপনা নির্মাণে মদত দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বন বিভাগ এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে জড়িতদের তালিকা তৈরি করে কয়েকশত ব্যক্তিকে মামলার আওতায় আনেন। পরবর্তী সময়ে গত ২৩ অক্টোবর বন বিভাগ কালিয়াকৈর রেঞ্জের চন্দ্রা বিট অফিসের আওতাধীন বোর্ডমিল এলাকায় যৌথবাহিনী ও প্রশাসনের সহায়তায় বৃহদাকারে অভিযান চালিয়ে দেড়শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করেন। এতে পুরো রেঞ্জে একরকম আতংক ছড়িয়ে যায়। উচ্ছেদের ধারাবাহিকতা ঘোষণা দিয়ে বন বিভাগ বিভিন্ন এলাকায় মিটিং ও মাইকিং করেন ও বিভিন্ন এলাকায় হাতে গুণা কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও জোড়ালো ভাবে কোথাও উচ্ছের অভিযান দেখা যায়নি। যার ফলে দখলকারীরা পুনরায় সক্রিয় হয়ে স্থাপনা নির্মাণ শুরু করে।
একাধিক সূত্র জানায় কালিয়াকৈর রেঞ্জের কর্মকর্তা মনিরুল করিম উচ্ছেদে গড়িমসি চালিয়ে তার ব্যক্তিগত লোকজন দিয়ে অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দেয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন শিল্প কারখানায় বনের জমি ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েও নানা ভাবে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। অপরদিকে রেঞ্জ কর্মকর্তা কার্যালয়ের অদূরে বনের জমিতে থাকা গাছপালা ও বেত বাগান কেটে পুকুর বানিয়ে মাছ চাষ করলেও সেখানে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেননি বন বিভাগ। অভিযোগ রয়েছে ওই পুকুর খনন করা বাবদ স্থানীয় সাইফুল নামে এক ব্যক্তি রেঞ্জ কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ দুই প্রহরীর মাধ্যমে তিন লাখ টাকা লেনদেন করেছেন। এভাবেই একের পর এক অবৈধ স্থাপনা হলেও তা উচ্ছেদে দিনের পর দিন চলছে ইঁদুর বিড়াল খেলা।
নাম প্রকাশ না করে চন্দ্রা বিটের আওতাধীন বোর্ডমিল এলাকার এক ব্যক্তি জানান, ওই এলাকায় উচ্ছেদের পর বিভিন্ন লোকজন তাদের ঘরবাড়ি রক্ষা করতে বন বিভাগকে মোটা অংকের টাকা দিয়েছে। পরবর্তীতে সেখানে উচ্ছেদের কথা থাকলেও বন বিভাগ সেদিকে আর নজর দেননি।
একই বিটের সিনাবহ খন্দকার পাড়া এলাকার এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে বলেন, উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়ে দুইদিন পর বন বিভাগের লোকজন আমার বাড়িতে এসে আমাকে মামলার ভয় দেখালো। তারপর বললেন ঘর ভেঙে দিতে। তার পর এলাকার কিছু দালালরা সবাইকে ডেকে নিয়ে টাকা দাবি করে বললো অভিযান আসবেনা অফিসে টাকা দিতে হবে।
সিনাবহ বাজার এলাকায় অন্তত শতাধিক স্থাপনা হলেও সেখানে বন বিভাগ মিটিং করে মাত্র দুটি স্থাপনা ভেঙে নজর সরিয়ে নিয়েছেন। ওই স্থাপনার মালিক রিপন আহম্মেদ বলেন, আমার পুরনো বাড়ি অল্প মেরামত করেছিলাম। আর অন্যান্য লোকজন বড় বড় স্থাপনা নির্মান করেছে। কারো স্থাপনা উচ্ছেদ না করে আমার এখানে ভেঙে দিয়েছে।
তবে উচ্ছেদ অভিযানে গড়িমসিসহ এসব অভিযোগ অস্বিকার করেছেন কালিয়াকৈর রেঞ্জের কর্মকর্তা মনিরুল করিম। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা যতোটা সম্ভব করে যাচ্ছি। তাছাড়া আমি বা আমার অফিসের কেউ কোথাও থেকে যাতে কোন টাকা পয়সা না নেয় সে ব্যাপারেও নির্দেশনা রয়েছে। আমরা এসব থেকে দূরে রয়েছি। তবে স্থাপনা উচ্ছেদের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন সব হবে।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বশির আল মামুন বার্তা২৪. কম এর প্রতিবেদককে বলেন, ওই রেঞ্জের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী যদি এসব কাজের সাথে যুক্ত থেকে থাকে তার সঠিক তথ্য পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।