তাজা ফুলের দাম চড়া, প্লাস্টিকের মুকুটে ঝুঁকছে তরুণীরা

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

প্লাস্টিক ফুলে তৈরি মুকুটে ঝুঁকছে তরুণীরা/ছবি: বার্তা২৪.কম

প্লাস্টিক ফুলে তৈরি মুকুটে ঝুঁকছে তরুণীরা/ছবি: বার্তা২৪.কম

পরনে হলুদ কিংবা বাসন্তী রঙের শাড়ি। মাথায় ফুলের মুকুট। পহেলা ফাল্গুনে কিশোরী-তরুণী থেকে শুরু করে মধ্যবয়সী নারীদেরও এ যেন কমন সাজ! তবে তাজা ফুলের বাজার চড়া হওয়ায় প্লাস্টিকের তৈরি মুকুটে ঝুঁকছেন তরুণীরা। মিলছেও বাজেটের মধ্যেই।

কথা হলো তামান্না নামের এক তরুণীর সঙ্গে। বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, তাজা ফুলের দাম বেশ চড়া। সাধ আছে তবে সাধ্য নেই। আর তাই প্লাস্টিকের মুকুট কিনেছি। আর প্লাস্টিকের ফুলে ‘ছবি তোলা যায় দিনভরই। ‘প্লাস্টিক ফুল’ ঝরেও পড়ে না, শুকিয়েও যায় না! কিন্তু তাজা ফুল নষ্ট হয়ে যায় ঘণ্টাখানেকের ব্যবধানেই!

বিজ্ঞাপন
দোকানে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ছোট-বড় প্লাস্টিকের মুকুট

বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসের উৎসব ঘিরে রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে ফুল বিকিকিনির বড় হাট বসেছে। তবে শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ভোর থেকে সেখানে উপচেপড়া ভিড়। নগরবাসীর উৎসবের শুরু যেন ফুলের বাজার থেকেই!

সেখানে ঘুরে দেখা গেছে, দুই ধরনের ফুলের সবচেয়ে বেশি চাহিদা ক্রেতাদের। এক লাল টকটকে তাজা গোলাপ! আর দুই লাল-হলুদ প্লাস্টিকের ছোট-বড় ফুল দিয়ে বানানো মাথায় পরা বেণী। জিরোপয়েন্টের সবচেয়ে বড় ফুলের দোকান রোজ পুষ্পবিতান। সেখানে চারিদিকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ছোট-বড় মুকুট। কিন্তু সেগুলোর সবই প্লাস্টিকের। তাজা ফুল দিয়ে বানানো একটি মুকুট নেই।

বিজ্ঞাপন
দোকানগুলোতে তাজা ফুলের একটি মুকুট নেই

জানতে চাইলে দোকানের মালিক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মেয়েরা এখন তাজা ফুলের মুকুট কেনে না। তারা প্লাস্টিক খোঁজে। প্লাস্টিক টেকসই বেশি, দামও কম। চাহিদা থাকায় আমরা প্লাস্টিক মুকুট ঢাকা থেকে কিনে এনেছি। তবে তাজা ফুল বিক্রি করতে পারলে ভালো লাগে।’

জয়কৃষ্ণ নামে আরেক দোকানি বলেন, ‘গতবার আমি প্লাস্টিকের মুকুট না রাখায় বেচাকেনা খুব কম ছিল। তাজা ফুল দিয়ে আমি মুকুট বানিয়ে রেখেছিলাম, সেগুলো বিক্রিই হয়নি। এবার তাজা ফুলের কোনো মুকুট বিক্রি করছি না। কেউ আগে থেকে অর্ডার করলে বানিয়ে দিচ্ছি।’

রোজ পুষ্পবিতানে ফুলের মুকুট কিনতে আসা রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী সাজিয়া সুলতানা বলেন, ‘তাজা ফুলের মুকুটের দাম বেশি। দুটো গোলাপ আর অন্য কয়েকটা ফুল বা পাপড়ি নিতে গেলে ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা পড়ছে। ফুল বেশি নিয়ে দামও বেশি। আর প্লাস্টিকের বড় মুকুটের দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা। এখানে কমপক্ষে ১০ থেকে ১২টা ফুল থাকে।’

দাম কম হওয়ায় প্লাস্টিকের ফুলে তৈরি মুকুটের চাহিদা বেশি

আরেক তরুণী আফসানা মিমি বলেন, ‘তাজা ফুলের মুকুট পরার অনুভূতি তো আলাদাই। কিন্তু রিকশায় উঠলেই ঝাঁকি খেয়ে ফুল ঝরে পড়া শুরু করে। বাজার থেকে কিনে তা পরে রিকশায় ভার্সিটিতে যাওয়ার আগেই ঝরে যায়। ওই মুকুট পরে আর ঘোরা যায় না, ছবি তোলা যায় না; পুরোটাই লস।’

এদিকে, প্লাস্টিকের মুকুটে তরুণীদের এই ঝোঁকে নাখোশ ফুল ব্যবসায়ী ও চাষীরা। রাজশাহীর পবার তরুণ উদ্যোক্তা ফুলচাষী সুমন হোসেন। তিনি নগরীর ১৩টি দোকানে তার বাগানের দুই/তিন জাতের ফুল সরবরাহ করেছেন। বিক্রি কেমন তা দেখতে বাজারে দোকান দোকান ঘুরছেন।

প্লাস্টিকের ফুলে তৈরি মুকুট

ফুলচাষী সুমন হোসেন বলেন, ‘রাজশাহীতে ফুলচাষ খুব একটা হয় না। সবাই যশোর থেকে ফুল এনে ব্যবসা করে। আমি সেদিকে লক্ষ্য রেখে ফুলচাষ শুরু করেছি। এবার কিছু ফুল বাজারে দোকানীদেরও দিয়েছি। যা সম্পূর্ণ বাকিতে। বিক্রির পর তারা টাকা দেবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে এসেছিলাম কোন ফুল কেমন বিক্রি হচ্ছে তা দেখতে। এসে তো চমকে গেছি! দেখছি প্লাস্টিকের ফুল দিয়ে বানানো বেণী সবচেয়ে বেশি কিনতে মেয়েরা। তাজা ফুলের দিকে তাকাচ্ছেই না। খোলাভাবে কিছু গোলাপও বিক্রি হচ্ছে। তবে প্লাস্টিকে ঝোঁক বেশি সবার।’