খোকন-নাছিরের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ

  • লুৎফে আলি মহব্বত, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সাঈদ খোকন ও আজম নাছির/ ছবি: সংগৃহীত

সাঈদ খোকন ও আজম নাছির/ ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের টক অব দ্যা টাউন এখন মেয়র পদে রেজাউলের উত্থান ও আজম নাছিরের ছিটকে যাওয়ার ঘটনায় আবর্তিত হচ্ছে। শুধু চট্টগ্রাম নয়, সারা বাংলাদেশেই আলোচিত হচ্ছে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের চমকপ্রদ সিদ্ধান্তের বিষয়টি।

ক'দিন আগে, এমনই আলোচনা চলেছিল ঢাকায়, যখন মেয়র পদে তাপস ইন করেন আর সাঈদ খোকন আউট হন। ঢাকার দৃশ্যপটই যেন ফিরে এসেছে চট্টগ্রামে। মানুষের মধ্যে আলোচনাও তাই চলছে সমান তালে।

বিজ্ঞাপন

রাজনীতিকে অনেক সময় রেসের ঘোড়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়। রেস থেকে ছিটকে পড়লে খুব কম ক্ষেত্রেই ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়। সবাই তখন হর্ষধ্বনি দিয়ে বলতে থাকে, 'জো জিৎ গ্যাঁয়া, ও সিকান্দার'।

ক্ষমতায় থেকে ও মেয়র পদের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়েও ঢাকায় খোকন আর চট্টগ্রামে নাছির জিততে পারেননি। জেতার প্রাথমিক শর্ত দলীয় মনোনয়ন, সেটাই তারা পাননি। খোকন তো ঢাকা-১০ নির্বাচনী এলাকায় তাপসের শূন্য পদে দলীয় প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

এই দুই নেতার সফলতা ও ব্যর্থতার পাশাপাশি সাধারণ মানুষ তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও নানামুখী আলোচনা করছেন। আওয়ামী লীগ যেভাবে আত্মশুদ্ধির পথে এগুচ্ছে, দলের নানা স্তরে নতুন রক্ত সঞ্চালনের মতো নতুন নতুন ক্লিন মুখ নিয়ে আসছে, তাতে ছিটকে পড়াদের ভবিষ্যৎ পরিণাম নিয়ে আলাপ-আলোচনা হওয়া স্বাভাবিক।

আওয়ামী লীগ বলেই এতো আলোচনা। কারণ প্রাচীন ও সুসংগঠিত দল আওয়ামী লীগে মন্ত্রিত্ব, এমপিত্ব বা কোনও পদ নেওয়ার জন্য কমপক্ষে তিন-চার সেট নেতা আছেন। দলের বর্ষীয়ান নেতাদের পেছনে তৈরি হয়ে আছেন পরবর্তী কয়েক প্রজন্মের তরুণ নেতৃত্ব, যারা শিক্ষা, সততা, রাজনৈতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকারের দিক থেকে বিশ্বস্ত ও উজ্জ্বলতর।

ফলে এমন একটি জীবন্ত রাজনৈতিক দলের ক্ষমতা কাঠামো থেকে একবার ছিটকে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে একাধিক জন সেই স্থান পূর্ণ করে ফেলেন, যা পুনরুদ্ধার করা প্রায়-অসম্ভব হয়ে পড়ে। দলের অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতায় প্রতিনিয়ত নেতৃত্বের যে সুপ্ত লড়াই চলছে, তার নিয়ম মেনেই নেতা যেতে থাকেন, নেতা আসতে থাকেন। এজন্যই সবদিক থেকে নিজের অবস্থান ধরে রাখা রাজনীতিবিদের জন্য আসলেই একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়।

খোকন ও নাছির সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছিলেন। দলের সাংগঠনিক পদ ছাড়াও তারা পেয়েছিলেন প্রশাসনিক পদ। ঢাকার সাবেক মেয়র হানিফের পুত্র খোকন বিশেষ কোনো বিঘ্ন ছাড়াই কাজ করতে পেরেছেন। কিন্তু জনমত ও দলের কাছে তিনি পাস মার্ক পাননি।

চট্টগ্রামের হেভিওয়েট নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আখতারুজ্জামান বাবু চৌধুরীর মৃত্যুজনিত শূন্যতায় আজম নাছিরও বাধাহীনভাবে সাংগঠনিক ও মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু তার কার্যক্রমও দলের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়নি।

উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, খোকন ও নাছিরকে মনোনয়ন না দেওয়ায় দলে বা বাইরে জনতার মধ্যে কেউই সামান্য প্রতিবাদসূচক শব্দও করেনি। সাধারণত পদে থাকলে একদল সমর্থক ও পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত লোক পক্ষে দাঁড়িয়ে যায়। এদের ক্ষেত্রে তা হয়নি। সবাই স্বস্তির সঙ্গে প্রার্থী বদলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। এতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত যে দলীয় ও জনমতের নিরিখে সঠিক, তা স্পষ্ট বুঝতে পারা যায়।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশ ও দল চালাচ্ছেন সুদক্ষভাবে। সরকার ও দলের ব্যাপারে সময় সময় তিনি তড়িৎ গতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন এবং সঠিক, অবিতর্কিত, সৎ ও ক্লিন ব্যক্তিদের দায়িত্বপূর্ণ পদে নিয়ে আসছেন। এক্ষেত্রে ব্যক্তির কার্যক্রমের চুলচেরা বিশ্লেষণের পরই করা হচ্ছে মূল্যায়ন। এভাবেই কাউকে সামনে আনা হচ্ছে কিংবা কাউকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

প্রায়-সকল ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দেশ ও দল পরিচালনায় দৃঢ়তার সঙ্গে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিভিন্ন ইস্যু ও ব্যক্তির ক্ষেত্রে। আপাত কঠিন মনে হলেও সিদ্ধান্তগুলো প্রমাণিত হয়েছে সঠিক হিসেবে । এক্ষেত্রে জনমত, দলীয় নেতাকর্মীদের মতামত এবং কাজের সততা, স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার প্রতিই জোর দেওয়া হয়েছে। খোকন ও নাছিরের রাজনৈতিক ভবিষ্যতও সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে দলের এই মূল্যায়নের কষ্টিপাথরের ওপর।

তবে উভয়েই দলের পোড়-খাওয়া, পরীক্ষিত ও দুঃসময়ের সাথী। দুজনেরই রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা কম নয়। ফলে আপাতত ছিটকে পড়লেও তাদের সম্পর্কে শেষ কথা বলে দেওয়ার সময় আসেনি। উত্থান-পতনে ভরপুর রাজনীতিতে কে কখন উঠে আর কে কখন নামে, সেটাও আগাম বলে দেওয়া যায় না।

ফলে নিজের বিরূপ রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য কে কী পদক্ষেপ নেন, সে বিষয়ে আরও অনেক কিছু দেখার বাকি আছে। রাজনৈতিক টেক্কায় কে, কখন, কাকে, পেছনে ফেলে দেয়, সেটাও আগেভাগে বলা যায় না। অতএব, খোকন ও নাছিরের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বহুলাংশে নির্ভর করছে তাদের অতীত কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সামনের দিনগুলোতে তাদের পদক্ষেপের রাজনৈতিক ও কৌশলগত সফলতার ওপর।