দুদক ক্ষমতাসীনদের প্রতি নমনীয়: টিআইবি
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিরোধী দলের রাজনীতিকদের হয়রানি এবং ক্ষমতাসীন দল ও জোটের রাজনীতিকদের প্রতি নমনীয়তা প্রদর্শনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে টিআইবি।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) অফিসে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের ওপর ফলোআপ গবেষণা উপস্থাপন করে টিআইবি। ওই গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সংবাদ সম্মেলনে গবেষণাপত্র তুলে ধরেন টিআইবির রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাম্মী লায়লা ইসলাম ও সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম। গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, দুদকের কার্যক্রম ও ক্ষমতার অব্যবহারের কারণে এর স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
গবেষণাপত্রে উল্লেখিত বিশেষজ্ঞদের মতে, দুদক বিরোধী দলের রাজনীতিকদের হয়রানি করা এবং ক্ষমতাসীন দল ও জোটের রাজনীতিকদের প্রতি নমনীয়তা দেখানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যার প্রমাণ পাওয়া যায় ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় দুদকের কার্যক্রমে।
এতে আরও ধারণা করা হয়, দুদক রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ নয়। কারণ দুর্নীতির ঘটনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে এটি নিরপেক্ষ আচরণ করতে পারেনি। সংবাদ সম্মেলনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদকের সাড়া দেওয়ার হার কম হওয়ার একটি কারণ হচ্ছে দুদকের অভিযোগ বাছাই ব্যবস্থা। দেখা গেছে, ২০১৬-২০১৮ সালে মোট ৪৭,৫৪৯টি অভিযোগের মধ্যে ৩২০৯টি (৬.৭৫ শতাংশ) অনুসন্ধানের জন্য গৃহীত হয়। অথচ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে এ হার ৬৬ শতাংশের বেশি হওয়ার কথা। তবে দুদকের মতে অধিকাংশ অভিযোগ দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধের মধ্যে পড়ে না। এছাড়া প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ২৩৬৯টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিভাগে পাঠানো হয়। এছাড়া দুদক ২০১৬-২০১৮ সালে ৪০৩৮টি অনুসন্ধানের মধ্য থেকে ৮৪৮টি মামলা (২১%) করেছে (আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ৭৫ শতাংশের বেশি)।
অপরদিকে, গত কয়েক বছর দুদকের দুর্নীতির মামলায় সাজা হওয়ার হার গড়ে ৪০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫৭.৭ শতাংশ হলেও তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড থেকে (আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ৭৫ শতাংশের বেশি) কম। গত তিন বছরে (২০১৬-১৮) নিষ্পত্তি হওয়া ৮৫৭টি মামলার মধ্যে মোট ৪৯৫টিতে সাজার রায় হয়েছে।
একই ধরনের মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে দুদকের নিরপেক্ষতার বিষয়ে মানুষের ধারণা খুব ইতিবাচক নয়। দুদক কর্মকর্তাদের মতে, দুদকের ওপর আস্থার অভাব রয়েছে। বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজের সদস্য ও সাংবাদিকদের মতে, দুদককে দু্নীতি দমনের
জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষমতা অর্পণ করা হলেও একই ধরনের দুর্নীতির মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে এটি নিরপেক্ষ নয়। জনগণের ধারণায় দুদক ক্ষুদ্র দুর্নীতির ওপর বেশি মনযোগী এবং বড় দু্র্নীতিবাজ ধরার ক্ষেত্রে দুদকের দৃশ্যমান সাফল্য নেই।
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কাগজে কলমে দুদকের স্বাধীন হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে না।
তিনি বলেন, দুদক বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারের আগে অনুমতি নেওয়ার যে বিষয় রয়েছে, সেটি বৈষম্যমূলক এবং অসাংবিধানিক। আমরা আশা করি, আদালতে এ ধারাটি বাতিল হবে।