সিলেটে ১৮ লাখ ৬৪ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের আশা
বোরো ধান আবাদ করে গত কয়েক বছরে লোকসানে আছেন সিলেট অঞ্চলের কৃষকেরা। উৎপাদন খরচ উঠেনি অনেক কৃষকের। ফলে বোরো আবাদে নিয়ে কৃষকদের মধ্যে অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে। ফলে চলতি বোরো মৌসুমে প্রচুর কৃষি জমি আনাবাদি থাকার শঙ্কা রয়েছে। তবে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, লোকসান হলেও বোরো আবাদ করছেন সিলেটের কৃষকেরা। চলতি মৌসুমে সিলেটে বিভাগে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৭৩ হাজার হেক্টর। ইতোমধ্যে তা পূরণও হয়েছে। যা থেকে সিলেটে বিভাগে ১৮ লাখ ৬৪ হাজার ২০৬ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেট বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কেয়া আচার্য্য জানান, বোরো ধানের উৎপাদনের হিসাব চাল দিয়ে করা হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, হাইব্রিড, স্থানীয় ও উফশী (উচ্চ ফলনশীল) এই তিন জাতের বোরো ধান আবাদ করা হয়। তবে বেশিরভাগ কৃষকই উফশী জাতের ধান আবাদ করেন। বোরো ধান থেকে সিলেট বিভাগে সবচেয়ে বেশি চাল উৎপাদন হবে সুনামগঞ্জ জেলায়। এই জেলায় চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ লাখ ৬২ হাজার ৮শ’ মেট্রিন টন। সিলেট জেলায় চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২ হাজার ৪১৪ মেট্রিক টন। মৌলভীবাজার জেলায় চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪ হাজার ৮২২ মেট্রিক টন এবং হবিগঞ্জে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৯৪ হাজার ১৭০ মেট্রিক টন।
জানা যায়, চলতি মৌসুমে সিলেট বিভাগে বোরো ধানের বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২২ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে। আর বীজতলা হয়েছে ২৫ হাজার ৩৯২ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৪ হাজার ৮০৫ হেক্টর, মৌলভীবাজার জেলায় ২ হাজার ৯৪২ হেক্টর, হবিগঞ্জ জেলায় ৫ হাজার ৬৫৮ হেক্টর ও সুনামগঞ্জ জেলায় ১১ হাজার ৯৮৭ হেক্টর। সিলেটে বোরো ধানের বীজতলা হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেট বিভাগে এবার বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৩ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুনামগঞ্জ জেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৯ হাজার ৪৫০ হেক্টরে। এছাড়া সিলেট জেলায় ৮০ হাজার ৫০ হেক্টর, মৌলভীবাজার জেলায় ৫৩ হাজার ৫০০ হেক্টর ও হবিগঞ্জ জেলায় ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ইতোমধ্যে সিলেট বিভাগে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এখন কিছু এলাকায় বোরো আবাদ হচ্ছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি।
সিলেট সদর ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কয়েকজন কৃষক জানান, গত কয়েক বছর ধরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হচ্ছে। তবে ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না তারা। ইতোমধ্যে অনেক কৃষক বিকল্প পেশায় যুক্ত হয়েছেন। কেউ আবার এলাকা ছেড়ে পারি জমাচ্ছেন শহরে। ফলে দেখা দিচ্ছে শ্রমিক সংকট। সব মিলিয়ে হতাশাগ্রস্থ কৃষক পতিত রেখে দিচ্ছেন অনেক জমি। সদর উপজেলার কৃষক সফিক মিয়া বলেন, দিন দিন কমছে ধানের দাম। অন্যদিকে বাজারে বীজের দাম, শ্রমিকের মজুরি, সেচ-হালের ব্যায় দিন দিন বাড়ছে। এসব কারণে বোরো চাষ করে প্রতি বছরই লোকসান গুণতে হয় কৃষকদের। সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সরকার বেশি পরিমাণে ধান কিনলে কৃষক বাঁচবে বলে মন্তব্য করে তিনি।
হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অদিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. তামিজ উদ্দিন খান বলেন, বোরো ধান আবাদের জন্য আমরা কৃষকদের সকল ধরনের সহযোগিতা দিয়ে আসছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার বাম্পার ফলনের আশা করছি আমরা।
সিলেট বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অদিদপ্তরের উপ-পরিচালক মজুমদার মো. ইলিয়াস বলেন, সিলেট বিভাগে এবার বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৩ হাজার হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এখনও আবাদ হচ্ছে। বোরো আবাদের কৃষকদের বিভিন্নভাবে সহায়ত দিচ্ছি আমরা।