সভাপতি লিটনই, মাইনাস শঙ্কায় ‘বিতর্কিত’ ডাবলু

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

রাজশাহী নগর আওয়ামী লীগের দৌড়ে এগিয়ে যারা

রাজশাহী নগর আওয়ামী লীগের দৌড়ে এগিয়ে যারা

সাড়ে পাঁচ বছর পর রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রোববার (২৯ ফেব্রুয়ারি)। সম্মেলন ঘিরে গেল সপ্তাহজুড়ে প্রকাশ্যে দৌড়ঝাঁপ করেছেন পদপ্রত্যাশী নেতারা। কাউন্সিলে ভোট হওয়ার সম্ভাবনা নেই, ফলে সিলেকশনে ঠিক হবে নেতৃত্ব। তাই তৃণমূল ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে রাজশাহী ফিরেছেন পদপ্রত্যাশীরা।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৫ অক্টোবর সম্মেলনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি হন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। আর কাউন্সিলরদের ভোটে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ডাবলু সরকার। ২০১৭ সালের অক্টোবরে কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। এরপর মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিতে কেটেছে আরও আড়াই বছর। তবে মহানগরের থানা ও ওয়ার্ডগুলোতে সম্মেলন করতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, সম্মেলন ঘিরে আগামী দিনে কারা নেতৃত্বে আসছেন গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিটে, তা নিয়ে চলছে হিসেব কষাকষি। সভাপতি পদে সিটি করপোরেশনের মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের বিকল্প দেখছেন না কেউ-ই। প্রবীণ নেতা বজলুর রহমান বজলার সভাপতি পদের জন্য দৌড়ঝাপ করলেও হালে পানি পাননি তিনি। ফলে সভাপতি পদে পুনরায় লিটনই থেকে যাচ্ছেন,  এটা একেবারে নিশ্চিত।

সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সেজেছে রাজশাহী নগরী

তবে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার পদ ধরে রাখতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। বিতর্কিত নানা কর্মকাণ্ডে জড়ানোর অভিযোগে কমিটি থেকে ‘মাইনাস’ হওয়ার শঙ্কার মুখে তিনি। ফলে সবার নজর এখন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে। পদটি বাগিয়ে নিতে অন্তত ১০ থেকে ১২ জন প্রবীণ-নবীন নেতা।

বিজ্ঞাপন

দলীয় সূত্রগুলোর দেওয়া তথ্যানুযায়ী- সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন- বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, যুগ্ম-সম্পাদক নাইমুল হুদা রানা, মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী, মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু।

তবে সূত্রগুলো বলছে- যদি ডাবলু সরকার সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে মাইনাস হন, তাহলে তরুণ নেতা হিসেবে কপাল খুলতে পারে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আহসানুল হক পিন্টুর। আর যদি দলের হাইকমান্ড বিশৃঙ্খলার শঙ্কা দেখেন- তবে খায়রুজ্জামান লিটনের রানিংমেট হিসেবে সিনিয়র নেতা অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশাকে দায়িত্ব আনার সম্ভাবনা বেশি।

সম্মেলন উপলক্ষে নগরীতে ব্যানার ফেস্টুন টানা হয়েছে

জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘দলে এখন স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বার্তা- মেধাবী এবং গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের দায়িত্ব আনার। অবশ্যই ক্লিন ইমেজধারীদের খুঁজবো আমরা। তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে, আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে বড়দল। শুধু ক্লিনইমেজ রয়েছে, কিন্তু নেতাকর্মীদের মধ্যে সমন্বয় করতে পারবে না; এমন কাউকেও নিশ্চয় আমরা চাপিয়ে দিয়ে যাব না। সকলে মিলেমিশে সেই সিদ্ধান্ত হবে। কারও মধ্যে কোনো ক্ষোভ-দুঃখ রেখে নয়।’

মাইনাস শঙ্কায় ডাবলুর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ:

সম্মেলন ঘিরে সবচেয়ে বেশি আলোচনা ও গুঞ্জন ছড়িয়েছে ডাবলু সরকারকে নিয়ে। গণমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের জমি দখলের অভিযোগ প্রকাশ হওয়ার পর থেকে গুঞ্জন ডালপালা মেলতে শুরু করে। উঠে আসে আরও নানা অপকর্মের অভিযোগ। সঙ্গে যোগ হয়- মুক্তিযুদ্ধে ডাবলু সরকারের বাবা আব্দুর রশিদের বিতর্কিত ভূমিকার প্রশ্ন। যে ব্যাপারে অভিযোগ পৌঁছেছে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছেও।

খোদ দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ- সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েই ভূমিদস্যু হয়ে উঠেন। মুক্তিযোদ্ধা, সংখ্যালঘু ও আইনজীবীর জমি দখল। নিজে ছাড়াও তার ভাইদের দিয়েও ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক বনে গেছেন। রাজশাহীর আওয়ামী লীগের ‘বিশিষ্ট কর্মী’ প্রধানমন্ত্রীর প্রিয় ‘শাহজাহান মামা’ তার পৈত্রিকভিটা রক্ষা করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে নালিশ দিয়ে। তখন দলীয় নেতার মাধ্যমে শাহজাহান মামার বাড়িটি রক্ষা পেলেও অসংখ্য সংখ্যালঘু, আইনজীবী, মুক্তিযোদ্ধাসহ অনেক স্থানীয় বাসিন্দা হারিয়েছেন বসতভিটা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা অভিযোগ করেন, ডাবলু ও তার ভাইয়েরা কৌশল অবলম্বন করে বাড়ি ও জমি দখল করেছেন। প্রথমে তারা একদম নিচের সারির কর্মীদের দিয়ে জমির মালিককে বিরক্ত করা শুরু করেন। পরে তৃতীয় কোনো পার্টিকে দিয়ে জমিটি দখলে নিতে ভূয়া মামলা কিংবা হুমকি-ধমকি দেয়া শুরু করেন। তখন অসহায় পরিবারের লোকজন মীমাংসার জন্য ক্ষমতাধর হিসেবে পরিচিত ডাবলু সরকার কিংবা তার ভাইদের কাছে ছুটে যান। সুযোগ বুঝে তারা নামমাত্র মূল্যে ওই জমি কবজা করে নেন।

অভিযোগের বিষয়ে ডাবলু সরকার বলেন, ‘এসব অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত। নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে আমার এবং আমার পরিারের বিরুদ্ধে একটি মহল এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।’