দ্বন্দ্বের জেরে কর্মচারীকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সহায়ক পদে কর্মরত কাউছার আলী। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলার প্রশাসনিক কোয়ার্টার এলাকার রাস্তায় পুঠিয়া ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) রুমানা আফরোজের সঙ্গে সামান্য কথাকাটাকাটি হয় তার। ২৯ ফেব্রুয়ারি ছুটির দিনে কাউছারকে ভূমি অফিসে তলব করেন সহকারী কমিশনার। কাউছার সেখানে গেলে তাকে দীর্ঘক্ষণ ভূমি অফিসেই বসিয়ে রাখা হয়। পরে পাঠানো হয়- উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অফিসে। সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাকে মাদক সেবনে অভিযুক্ত করে মামলায় ছয় মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পুঠিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওলিউজ্জামান স্বাক্ষরিত মামলার রায়ে বলা হয়- ‘ইয়াবা সেবনের মাধ্যমে নেশাগ্রস্থ হয়ে জনসাধারণের শান্তি বিনষ্ট করেছে কাউছার আলী। ফলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ এর ৩৬ (৫) ধারায় তাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।’
কিন্তু কাউছার আলীর মা নুরুন্নাহার বেগমের দাবি- ‘মাদক সেবন তো দূরের কথা, তার ছেলে ধুমপানও কখনও করেনি। ‘আচার-ব্যবহার খারাপ’ অভিযোগ তুলে তার ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে।’
স্থানীয় বাসিন্দারাও বলছেন একই কথা। কাউছারকে মাদক সেবন করতে দেখেনি এবং কখনও শোনেননিও বলছেন স্থানীয়রা। তবে ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না। ফলে বিধবা নুরুন্নাহার বেগম তার একমাত্র সন্তানের মুক্তির জন্য গত তিনদিন ধরে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
সবশেষ সোমবার (২ মার্চ) বিকেলে নুরুন্নাহার বেগম রাজশাহী জেলা প্রশাসক হামিদুল হককে লিখিত অভিযোগও করেছেন। সেখানে তিনি ছেলে কাউছার আলীর ডোপ টেস্ট করানোর দাবি জানিয়ে উপজেলা প্রশাসনের খামখেয়ালি সিদ্ধান্তের চ্যালেঞ্জ করেছেন।
লিখিত অভিযোগে নুরুন্নাহার বেগম উল্লেখ করেন, আমি একজন বিধবা নারী। একমাত্র ছেলে কাউছার আলী আমার বাঁচার অবলম্বন। কিন্তু ২৭ ফেব্রুয়ারি পুঠিয়া উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুমানা আফরোজের সঙ্গে তার সামান্য কথা কাটাকাটি হয়। তখন এসিল্যান্ড রুমানা আফরোজ কাউছারকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। সেই ঘটনার জের ধরে ২৯ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) তাকে ছুটির দিনে বাড়ি থেকে ডেকে আনা হয়। পরে তাকে ইউএনও অফিসে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও পূর্ব শত্রুতার জেরে করা হয়েছে।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ওলিউজ্জামান বলেন, ‘দেখেন- গতকাল (২ মার্চ) এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে বলতে বিরক্ত আমি। এসিল্যান্ড ম্যাডামের সঙ্গে কী দ্বন্দ্ব হয়েছে, তা ভিন্ন বিষয়। সেটা আমার জানাও নেই।’
ইউএনও বলেন, ‘উপজেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কোয়ার্টারের দিকটা নির্জন। সেখানে কাউছার মাদক সেবন করার বিষয়টি তিনি জানতে পারেন। সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাকে দণ্ড দেন।’
কাউছারের মায়ের অভিযোগের উদ্ধৃতি করে ছুটির দিনে বাড়ি থেকে ডেকে এনে ভূমি অফিসে এবং পরে ইউএনও অফিসে বসিয়ে রাখার বিষয়টি উল্লেখ করলে তখন ভিন্ন কথা বলেন ইউএনও ওলিউজ্জমান। তিনি বলেন, ‘আসলে ওই দিন (২৯ ফেব্রুয়ারি, শনিবার) ভূমি উন্নয়ন কর আদায় চলছিল। এজন্য কিছুক্ষণ কাউছার আলীকে ভূমি অফিসে বসিয়ে রাখা হয়েছিল।’
কাউছার মাদকসেবী নয় মায়ের ও স্থানীয়দের এমন দাবির বিষয়ে তিনি পাল্টা দাবি করেন- ‘প্রকাশ্যে মাদক সেবন করা অবস্থায় কাউছার আলীকে পেয়েছেন তিনি।’
দ্বন্দ্বের জেরে কর্মচারীকে ফাঁসানোর অভিযোগ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুমানা আফরোজ বলেন, ‘আপরাধী অপরাধ থেকে বাঁচতে অজুহাত খাঁড়া করছে। তার নামে মাদক সেবনের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।’ কথা কাটাকাটির সময় দেখে নেওয়ার হুমকির একদিন পরেই কারাদণ্ড দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনার সঙ্গে এই ঘটনার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেন, ‘সাংবাদিকদের কাছ থেকে আমি বিষয়টি শুনেছি। এখনও অফিসিয়ালি কিছু পাইনি।’ নুরুন্নাহার বেগমের কাছে অভিযোগ গ্রহণের সিল সম্বলিত অভিযোগপত্রের কপি রয়েছে বিষয়টি উল্লেখ করলে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘তাহলে হয়তো এখনও আমার কাছে এসে পৌঁছেনি। আসলে অবশ্যেই খোঁজ নিয়ে দেখবো।’