সুতা সংকটে রাজশাহী সিল্ক, ঈদ-বৈশাখে চাহিদা পূরণে শঙ্কা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
‘রাজশাহী সিল্ক ফ্যাশন’ কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা, ছবি: বার্তা২৪.কম

‘রাজশাহী সিল্ক ফ্যাশন’ কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা, ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

গুঁটি পোকার জীবন থেকে নেওয়া রেশমশিল্প ঘিরেই ঐতিহ্যবাহী সিল্কসিটি হয়ে ওঠে রাজশাহী। রেশম মথের শুঁয়াপোকা থেকে রেশমগুটি এবং তা থেকে তৈরি হয় সুতা। সেই সুতা দিয়ে হ্যান্ডলুম বা পাওয়ার লুমে তৈরি করা হয় থান কাপড়। যা দিয়ে রঙ-বেরঙের শাড়ি, পাঞ্জাবি, থ্রি-পিছ, কামিজ, শার্ট-ফতুয়াসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরি হয়।

সিল্কশিল্প ঘিরে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওসহ উত্তরের জেলাগুলোতে চাষ করা হতো রেশম পোকা। তা দিয়ে স্থানীয়ভাবে সুতা তৈরি করে বাহারি সিল্কপোশাক উৎপাদন করা হতো। রেশমশিল্পের সেই স্বর্ণযুগ এখন অতীত। দেখা মেলেনা রেশম চাষ, তৈরি হয়না সুতাও। ফলে বন্ধ সিল্কসিটি খ্যাত রাজশাহীর অধিকাংশ কারখানা।

হাতেগোনা যে কারখানাগুলো চালু রয়েছে, তারাও পোশাক উৎপাদনে চীন থেকে আমদানিকৃত সুতার উপর নির্ভরশীল। রাজশাহী নগরীর সপুরা এলাকায় সচল থাকা সিল্কের কারখানাগুলো চীন থেকেই ৯৫ শতাংশ সুতা আমদানি করে। তবে চীনে সম্প্রতি মহামারি করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় প্রায় দুই মাস সুতা আমদানি বন্ধ। মজুত সুতায় এখন চলছে পোশাক উৎপাদন। তবে তা একেবারে শেষ পর্যায়ে।

থান কাপড় দিয়ে সিল্কের পোশাক তৈরি

কারখানাগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মাস থেকে পুনরায় সুতা আমদানি করা সম্ভব না হলে রাজশাহীর সিল্ক কারখানাগুলোতে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। সুতা সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আসছে পহেলা বৈশাখ, ঈদ ও পূজায় চাহিদা অনুযায়ী বাজারে পোশাক সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। ফলে সিল্কের পোশাকের দামও আরো বাড়বে।

কারখানার কর্মচারী-কর্মকর্তারা জানান, কারখানায় যে সুতা মজুত আছে, তা দিয়ে আরও ১৫/২০ দিন কোনোমতে কারখানা চালু রাখা যাবে। এরমধ্যে যদি সুতা না আসে, তবে সুতা সংকটে কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। পহেলা বৈশাখে নববর্ষ উৎসবে বাজারে পোশাকের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হবে। সামনে ঈদ-উল-ফিতরেরও বেশিদিন নেই। আর সুতা সংকটে কর্মঘণ্টা কমে যাওয়ায় বিপাকে সিল্ক শ্রমিকরাও।

রাজশাহী রেশম কারখানা

জানতে চাইলে ‘সপুরা সিল্ক’ এর কর্মচারী সাজেদা আনজুম বলেন, ‘জৌলুস পোশাকগুলো চীনের সুতা দিয়ে তৈরি করা হয়। স্থানীয় সুতায় তৈরি পোশাকের রঙ ও সৌন্দর্য কম। রাজশাহী ও চাঁপাইয়ের রেশমে এখন ভাল সুতাও পাওয়া যায় না। কিন্তু চীনের সুতা আমদানি দুই মাস ধরে বন্ধ। কারখানায় মজুত রাখা সুতা দিয়ে আমরা কাজ করছি।’

‘মহুয়া সিল্ক ফ্যাশন’র কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি- চীনের সুতা আমদানি করার। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সব ধরনের আমদানি প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে। যে সুতা আছে, তা দিয়ে মাসখানেকও উৎপাদন প্রক্রিয়া চালানো সম্ভব নয়।’

তিনি বলেন, ‘বৈশাখী উৎসবের পোশাক মার্চের মাঝামাঝি থেকেই শো-রুমে পাঠাতে হয়। অর্থাৎ হাতে আছে মাত্র এক সপ্তাহ। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী- ঈদ-উল-ফিতর মে মাসের শেষ দিকে। অর্থাৎ রমজান শুরু হচ্ছে এপ্রিলে। মূলত রমজান শুরুর আগেই আমরা শো-রুমে ঈদের পোশাক পাঠিয়ে দেই। কিন্তু উৎপাদনের যে অবস্থা তাতে এবার ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ অসম্ভব হয়ে পড়বে।’

স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত রেশম সুতা

‘রাজশাহী সিল্ক ফ্যাশন’ কারখানার কর্মকর্তা সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘আমাদেরও সুতা শেষ পর্যায়ে। আসলে কেউই সুতা আনতে পারছে না। স্থানীয় সুতা দিয়ে ভালো পোশাক তৈরি করা সম্ভবও নয়। মালিকপক্ষ সুতা আনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। দেখা যাক কী হয়।’

তিনি বলেন, ‘পোশাক উৎপাদন কম হলে বাজারে দাম চড়া হবে। সেক্ষেত্রে ক্রেতাদের পছন্দের পোশাক কিনতে বেগ পেতে হবে। ফলে বৈশাখ ও ঈদের বাজারে বেচাকেনা কম হওয়ার শঙ্কায়ও রয়েছে মালিকপক্ষ। এনিয়ে আমরাও চিন্তায় পড়ে গেছি।’

রাজশাহী সিল্ক ফ্যাশনের চেয়ারম্যান খুরশিদা খাতুন খুশি জানান, ‘আমরা কিছু সুতা তৈরি করে থাকি। আর ৮০ শতাংশ সুতা চীন থেকে আনা হয়। তবে অন্য সিল্কহাউজগুলো পুরোপুরি চীনের সুতার উপর নির্ভরশীল। চীন থেকে সুতা আসছে না বললেই চলে। ফলে কারখানায় উৎপাদনে সুতা সংকটের প্রভাব পড়ছে।’ এ অবস্থা উত্তরণে স্থানীয়ভাবে রেশম উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকারি উদ্যোগ কার্যকর ও ভর্তুকির দাবি জানান তিনি।

সিল্কের শাড়ি

জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেশম শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি লিয়াকত আলী বলেন, ‘রাজশাহীসহ দেশে বছরে এখন রেশম সুতার চাহিদা প্রায় ৩৫০ মেট্রিক টন। আর উৎপাদন হয় মাত্র ৪০ মেট্রিক টন। অর্থাৎ ৩১০ মেট্রিক টন সুতা চীন থেকেই আমদানি করতে হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে একসময় ব্যাপক হারে রেশম চাষ হতো। ২০০০ সালের পর থেকে রেশমশিল্প সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে। কৃষক ও উদ্যোক্তারা লোকসান গুণতে গুণতে রেশমচাষ বন্ধ করে দেয়। যা কাটিয়ে উঠতে সরকারিভাবে বড় কোনো সহযোগিতা এখনও আসেনি। সরকার উদ্যোগ নিলে এই শিল্পে আবার প্রাণ ফিরবে। স্থানীয়ভাবে মানুষ রেশমচাষে আগ্রহী। তাদেরকে সহায়তা দিলে রেশমচাষে বিপ্লব ঘটিয়ে স্থানীয়ভাবে উন্নত সুতা তৈরি করে কারখানা চালানো সম্ভব।’

   

ইসলামি সংগীত শিল্পী সালমানের মৃত্যুতে শোকের ছায়া



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় নিহত তিনজনের একজন সালমান আজাদী। তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী এবং ইসলামি সঙ্গীত শিল্পী ও প্রশিক্ষক। তার মৃত্যুতে ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং স্বজন-শুভাকাঙ্ক্ষীদের মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সালমান আজাদী।

তিনি বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার হাপানিয়া এলাকার মৃত কোরবান আলীর ছেলে। নিহত সালমান স্ত্রী ও এক শিশুপুত্রকে নিয়ে নগরীর মাসকান্দা এলাকায় থাকতেন।

জানা গেছে, ইসলামি সংঙ্গীত শিল্পী হিসেবে ময়মনসিংহে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন সালমান আজাদী। ইসলামি সঙ্গীতের প্রসারে নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছেন সালমান ইসলামি সঙ্গীত একাডেমি। প্রায় দুই বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে শিশুদের ইসলামি গান শেখাতেন। এছাড়াও ত্রিশালে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ইসলামি সঙ্গীতের প্রশিক্ষক ছিলেন তিনি।

উদীয়মান এ ইসলাম সঙ্গীত শিল্পীর মৃত্যুতে শোকাভিভূত পরিবার, আত্নীয়-স্বজন, ক্যাম্পাসের সহপাঠী-শিক্ষার্থী, ইসলামি সংস্কৃতি প্রেমিসহ শুভাকাঙ্ক্ষীরা। শতশত মানুষের ফেসবুক স্ট্যাটাসে যেন শোক বইয়ে পরিণত হয়েছে সানমানের ফেসবুক টাইমলাইন।

আব্দুর রহিম ভূঁইয়া নামে একজন লিখেছেন, কিছু মৃত্যুর সংবাদ মানুষকে ভীষণ বেদনা দেয়, ভীষণ কষ্ট দেয়। আর এই মৃত্যু যদি অকালে হয় বা আকস্মিক হয় তার শোক কাটিয়ে উঠা মোটেও সহজ না। সালমান আজাদী ইসলামিক শিল্প একাডেমির শিক্ষক ও স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন। তিনি বাচ্চাদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। বাচ্চাদের সুস্থ ধারার ইসলামিক সাংস্কৃতিক চর্চার ব্যাপারে তার অনেক পরিকল্পনা ছিল।

হানজালা রমজান মুন্না নামে আরেকজন লিখেছেন, প্রিয় হাসিমাখা মুখ ও সুন্দর করে কথা উপস্থাপন ছিল যার নৈমিত্তিক অভ্যাস। ইসলামি সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেয়ায় পেছনে ময়মনসিংহ শহরে যাদের অবদান, তাদেরই একজন ছিলেন। মনের মধ্যে ছিল ইসলামের জন্য তীব্র ভালবাসা। ভাইয়ের ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাতের উঁচু মাক্বাম দান করুন।

স্বামীর শোকে বাকরুদ্ধ স্ত্রী খাদিজা খাতুন জানান, সালমান নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত ছিলেন। বৃহস্পতিবার ক্লাস করতেই ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে ত্রিশাল যাচ্ছিলেন তিনি।

এদিকে সালমান আজাদীর অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। এক শোকবার্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের ২০১৭-'১৮ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকের শিক্ষার্থী এবং বর্তমানে স্নাতকোত্তরে ২০২১-'২২ সেশনে অধ্যয়নরত মো. সালমান আজাদী (২৫) বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটায় ত্রিশালে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছে। তাঁর এই অকাল মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়-পরিবারের পক্ষে আমি গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি। সেইসঙ্গে সালমানের বিদেহী আত্মার চিরশান্তির জন্য প্রার্থনাসহ শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাঈন উদ্দিন জানান, বিনা ময়নাতদন্তের জন্য আবেদনের প্রেক্ষিতে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এর আগে, ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৪ জন। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে উপজেলার ত্রিশাল বাজারের সাইফুল কমিশনারের বাসার সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত অন্য দুইজন হলেন, উপজেলার বৈলর ইউনিয়নের রুদ্রগ্রামের এনামুল হকের মেয়ে রুবাইরা তাজনিম (২) ও চিকনা মনোহর এলাকার মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে শরিফুল ইসলাম (৩৪)।

;

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীরাঙ্গনাদের সম্মাননা দাবি



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নরসিংদী
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের বহু যুবক ও ছাত্র জনতার আত্মহুতির অবদান। এই যুদ্ধে নারীদের অবদানও কোন অংশে কম নয়। এ যুদ্ধে অসংখ্য নারী সরাসরি অংশগ্রহণের পাশাপাশি ইজ্জতও দিতে হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন নরসিংদীর পলাশ উপজেলার বেদনা দত্ত। বেদনা দত্তের মতো বীরাঙ্গনাদের স্মরণীয় করে রাখতে বীরাঙ্গনা স্মৃতিসৌধ বা রাস্তা ও প্রতিষ্ঠানের নামকরণের দাবি মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয়দের।

নরসিংদীর পলাশ উপজেলার বড়ি-বাড়ির বেদনা দত্ত স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্বেই স্বামী মারা যাওয়ায় অবুঝ তিন শিশুকে নিয়ে অনেক দুঃখ কষ্টে দিন পার করছিলেন। ঠিক সেই সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের রান্না করে খাওয়ানোসহ তাদের নানাভাবে সহয়তা করতেন বেদনা দত্ত। আর এমন খবর পেয়ে রাজাকার সদস্যরা বেদনাকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে পাকিস্তানি হায়েনাদের হাতে তুলে দেয়। বাড়ির পাশে রেল ব্রিজের নিচে পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে ৪ দিনে নির্যাতন শেষে মৃত ভেবে পাশের জঙ্গলে ফেলে দেয় বেদনাকে।

পরে সেখান থেকে দুইদিন পর প্রাণ ফিরে পেলেও ইজ্জত আর সন্তানদের জীবন রক্ষায় এলাকা ছেড়ে নিজেকে আড়াল করে রাখেন তিনি। দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফিরে আসলেও জীবন চলে অনাহারে অর্ধাহারে। এভাবেই পার করতে হয়েছে জীবনের প্রায় অর্ধশতাব্দি। অবশেষে এই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর প্রশাসনের নজরে আসলে তার কাগজপত্র যাচাই বাছাই শেষে তাকে বীরাঙ্গনা হিসেবে নথিভুক্ত করেন এবং ভাতার আওতায় আনেন। সেই সাথে মুজিব বর্ষের উপহার হিসেবে তার জন্য তৈরি করা হয় বীর নিবাস। এখন এলাকাবাসীর দাবি বেদনা দত্তের অবর্তমানে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য স্মৃতিসৌধ নির্মাণের। অথবা তার নামে স্থানীয় কোন রাস্তা বা প্রতিষ্ঠানের নামকরণের দাবি মুক্তিযুদ্ধাসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

স্থানীয় জিনারদী ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান উদ্দিন পাঠান বলেন, আমরা জানতামই না আমাদের এলাকায় একজন বীরাঙ্গনা রয়েছে। সরকার যখন বেদনা দত্তকে একটি বীর নিবাস তৈরি করে দেয় তখনই জানতে পারি এই এলাকায় একজন বীরাঙ্গনা রয়েছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নির্মম নির্যাতনের শিকার এই নারী হয়তো একদিন থাকবেনা। কিন্তু তাকে যেনো পরবর্তী প্রজন্ম মনে রাখে এবং স্মরণ করে সেজন্য তার নামে একটি সড়কের নামকরণ বা স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবি জানাই।

নরসিংদী জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধে নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বেদনা দত্তের মতো আরও যারা বীরাঙ্গনা রয়েছেন তাদের অসামান্য অবদান রয়েছে। নরসিংদীর নারী মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি রক্ষার্থে কয়েকটি আবেদন জমা পড়েছে যা প্রক্রিয়া দিন রয়েছে। অচিরেই এ বিষয়ে কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

;

ডিজিটাল হুন্ডিতে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, নিয়ন্ত্রণ দুবাই বসে



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস (এমএফএস) ব্যবহার করে ডিজিটাল হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ৫ ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বিকেলে সিআইডি সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া এ বিষয়টি জানান।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- তাসমিয়া অ্যাসোসিয়েটসের মালিক নাসিম আহমেদ (৬২), এজেন্ট সিমের টেরিটোরি সেলস ম্যানেজার ফজলে রাব্বি সুমন (৩২), মো. কামরুজ্জামান (৩৩), জেট রোবোটিক অ্যাপসের বাংলাদেশের প্রতিনিধি জহির উদ্দিন (৩৭) ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পিয়াস (৩৪)।

অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস ব্যবহার করে ডিজিটাল হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা পাচার করেছে একটি চক্র। অভিযান চালিয়ে এ চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি জানান, গত কয়েক মাসে জেট রোবোটিক অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা অবৈধভাবে এসেছে বাংলাদেশে। ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে অ্যাপটির সন্ধান পায় পুলিশ।

তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম বেসড ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ থেকে এ চক্রটির টাকা লেনদেন হতো। বুধবার রাতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে পৃথক অভিযান চালিয়ে চক্রের পাঁচজনকে আটক করা হয়।

তিনি জানান, গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে নগদ ২৮ লাখ ৫১ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। তারা বিকাশের এজেন্ট সিম ভাড়া নিয়ে সেগুলোর মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে টাকা পৌঁছে দিতো বলে জানান তিনি।

সিআইডি প্রধান জানান, এ চক্রের হোতা মামুন দুবাইতে থাকেন। তিনি এখানকার এজেন্ট সিম ব্যবহার করছেন। দুবাই থেকে পাঠানো নির্দিষ্ট লিংক ধরে ৪৮টা সিমের বাইরে পাচারকাজে ব্যবহৃত এই অ্যাপটি কাজ করতে পারে না। সাতজন শুধু এই অ্যাপে ঢুকতে পারবে।

এটা হুন্ডি ব্যবসার আধুনিক রূপ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে রেমিটেন্স আসা ব্লক করে দিয়ে এই অ্যাপের মাধ্যমে দেশে টাকা সার্কুলেট করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এরকম আরও ৫-৭টি অর্গানাইজেশন পেয়েছেন যারা এভাবে কাজ করছে।

তিনি বলেন, গত তিন মাসে ৪০০ কোটি টাকা বাংলাদেশে আসতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে জেট রোবোটিক অ্যাপসের মাধ্যমে। অভিনব কৌশলে এ অ্যাপস ব্যবহারকারী পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাদের ডিভাইসগুলো জব্দ করা হয়েছে।

তিনি জানান, চট্টগ্রামের বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ তাসমিয়া অ্যাসোসিয়েটস। প্রতিষ্ঠানটির কাছে রয়েছে এক হাজার ১০০ বিকাশ এজেন্ট সিম। এসব এজেন্ট সিমের যাদের পারফর্মেন্স ভালো না, সেসব এজেন্টের সিমগুলো ডিএসওরা নিয়ে জেট রোবোটিক অ্যাপস ব্যবহারকারীদের সরবরাহ করে।

;

মৌলভীবাজারে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মৃত্যুর ঘটনায় দায়ীদের দ্রুত শাস্তি দাবি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

মৌলভীবাজারে বিদ্যুতায়িত হয়ে একই পরিবারের ৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা খুবই মর্মান্তিক ও হৃদয় বিদারক। এই ঘটনায় মূল দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) রাজধানীর একটি হোটেলে 'বিজনেস ডাইজেস্ট' পরিচালিত 'মানবাধিকার ও ভোক্তা অধিকার রক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা' শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, মৌলভীবাজারের ঘটনা তদন্তপূর্বক দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা একটি পরিবারের জন্য কিছু করতে পারলাম না, কিন্তু এমন শত শত পরিবারের জন্য আমাদের করণীয় রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অধিকার বিষয়টি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গণমাধ্যমের নিত্য চর্চার বিষয়। গণমাধ্যম সকল অনিয়মকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে, মানুষকে তাদের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে এবং অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতেই আমরা সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারি।

ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ জনগণের মাঝে সংবিধান, আইন ও অধিকার সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় জ্ঞানের প্রসারের জন্য সার্বিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে গণমাধ্যমকর্মীদের আহবান জানান।

আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি অগ্নিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি নিয়ে বলেন, বিগত বছরগুলোতে সংঘটিত নিমতলি, নিউমার্কেট ও বঙ্গবাজারে বড় বড় অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনাগুলো থেকে আমরা যথাযথ শিক্ষা গ্রহণ করিনি। আমরা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অগ্নিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হতো।

;