বর-কনের নৌকা ডুবতে দেখে আতঙ্কে লাফঝাঁপ, ডোবে অপরটি

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কাজ চলছে/ছবি: বার্তা২৪.কম

ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কাজ চলছে/ছবি: বার্তা২৪.কম

রাজশাহী নগরীর শ্রীরামপুর এলাকার বিপরীতে পদ্মা নদীতে নবদম্পতিসহ ৩৫ জন যাত্রী নিয়ে দু’টি নৌকাডুবির ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৬ জন নিখোঁজ রয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে দুই শিশুর। আর জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ১৭ জনকে।

পদ্মায় বিজিবি ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে তারা এখনও নৌকা দু’টির অবস্থান শনাক্ত করতে পারেনি।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, দুর্ঘটনা কবলিত নৌকা থেকে বেঁচে আসা সিয়াম ও রানা নামে দুই যুবক জানিয়েছেন- বর-কনে থাকা সামনের নৌকাটি ডুবে যেতে দেখে পেছনের নৌকার যাত্রীরা চিৎকার করা শুরু করে। তাদের নড়াচড়ার কারণে পেছনের নৌকাটিতেও পানি উঠে ডুবে যায়।

জীবিত উদ্ধার যুবক সিয়াম বলেন, ‘আমি পেছনের নৌকায় ছিল। সামনের নৌকায় বর রুমন ও কনে সুইটিসহ তাদের খুব কাছের আত্মীয়-স্বজনরা ছিল। সেখানে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি ছিল। নদীর মাঝামাঝি স্থানে আসার পর হঠাৎ সামনের নৌকাটি অর্ধেক ডুবে যেতে দেখা যায়। তখন আমাদের নৌকার সবাই অস্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বরেন, ‘নড়াচড়া করায় আমাদের নৌকাও পানি উঠে একপাশে কাত হয়ে উল্টে যায়। তারপর আর কারও দিকে খোঁজ-খবর নেওয়ার উপায় ছিল না। যে যার মতো সাঁতরে বাঁচার চেষ্টা করছিল। চিৎকার শুনে বালুবাহী একটি ড্রেজার সেখানে আসে। সেটাতে আমরা কয়েকজন উঠে পড়ি। বাকিরা স্রোতে ভাসতে ভাসতে দূরে চলে যায়। একপর্যায়ে তারা পানিতে তলিয়ে যায়।’

একই নৌকা থেকে বেঁচে আসা রানা নামে আরেক যুবকও একই বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ‘বর-কনে থাকা নৌকাটিতে যাত্রী বেশি ছিল। ভারী হওয়ায় নৌকাটি তলিয়ে যায়। আর ওদেরটা তলিয়ে যেতে দেখে আতঙ্কে আমাদের নৌকার সবাই লাফঝাঁপ দেয়ার উপক্রম করে। তখন আমাদেরটাও তলিয়ে যায়।’

রানা বলেন, ‘সামনের নৌকায় বেশি যাত্রী ছিল। ওখানেই অন্তত ৩০ থেকে ৩২ জন ছিল। আমাদের নৌকায় ছিল ২০ থেকে ২৫ জনের মতো। যারা বেঁচে এসেছে তাদের প্রায় সবাই আমাদের নৌকার। ওই নৌকার কেউ বেঁচে এসেছে বলে শুনিনি।’

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) পদ্মার ওপারে পবা উপজেলার চরখিদিরপুর গ্রামের রুমন আলীর (২৬) সাথে এপারের ডাঙেরহাট গ্রামের সুইটি খাতুনের (২০) বিয়ে হয়। বিয়ের পর সুইটি শ্বশুর বাড়িতে ছিলেন। শুক্রবার (৬ মার্চ) কনেপক্ষ বরের বাড়ি থেকে নবদম্পতিকে আনতে যায়। সন্ধ্যার কিছুসময় আগে তারা বরের বাড়ি থেকে বের হয়ে দু’টি নৌকায় করে কনের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের রাজশাহী সদর স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আব্দুর রউফ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বিজিবি ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যৌথ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এখনো দুর্ঘটনাকবলিত নৌকা দু’টির কোনো সন্ধান মেলেনি। অন্ধকারে উদ্ধারকাজ চালাতেও বেগ পোহাতে হচ্ছে। তবুও আমরা নৌকা ও নিখোঁজদের উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি।’

এদিকে, ঘটনার পর বর রুমন আলী জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হলেও নববধূ সুইটি খাতুন এখনো নিখোঁজ। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে জীবিত ছয়জন হলেন- খাদিমুল ইসলাম (২৩), রতন আলী (২৮) ও তার স্ত্রী বৃষ্টি খাতুন (২২), সুমন আলী (২৮) ও তার স্ত্রী নাসরিন বেগম (২২) এবং মেয়ে সুমনা আক্তার (৬)।

রতন ও তার স্ত্রী বৃষ্টি খাতুন জীবিত উদ্ধার হলেও তাদের মেয়ে মরিয়ম খাতুন (৮) মারা গেছে। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোশনি (৭) নামে আরেক শিশু মারা যায়। সে ডাঙেরহাট গ্রামের শামীম ইসলামের মেয়ে এবং সম্পর্কে কনের মামাতো বোন।