নৌকাডুবি: মৃত্যু পর্যন্ত মেয়েকে আঁকড়ে ছিলেন বাবা
কনে যাত্রী হয়ে বৌ-ভাতের অনুষ্ঠানে মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন শামীম। সকলে মিলে ফিরছিলেন নৌকায়। মাঝ পদ্মায় দুর্ঘটনার কবলে পড়েন নৌকাযাত্রীরা। ডুবে যায় পাশপাশি চলা দু’টি নৌকা। হাবুডুবু খেতে খেতে তলিয়ে যান যাত্রীরাও। যার মধ্যে ছিলেন শামীম ও তার ৭ বছর বয়সী মেয়ে রোশনি।
পদ্মার জলরাশিতে ডুবে গেলেও আদরের মেয়েকে ছাড়েননি শামীম। শেষ পর্যন্ত কন্যাকে আঁকড়ে ধরে ছিলেন বাবা। ঘটনার প্রায় ২০ ঘণ্টা পর শনিবার (৭ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে দুর্ঘটনাস্থলের কিছুটা দূরে সন্ধান মেলে বাবা-মেয়ের মরদেহ।
উদ্ধারকারী জেলেদের জালে আটকা পড়ে শামীম ও তার মেয়ে রোশনি। উদ্ধারের সময় দেখা যায়- মেয়েকে আঁকড়ে ধরে ছিলেন শামীম। বাবার বিশ্বস্ত হাত ফসকে যায়নি ৭ বছর বয়সী মেয়েও। জীবন প্রদীপ নিভে গেলেও বাবা-মেয়ের বন্ধন যেন অটুটু।
হয়তো পদ্মার স্বচ্ছ জলরাশিতে হাবুডুবু খেতে খেতে বাবার কোলে বিশ্বস্ততা খুঁজে ফিরেছে ছোট্ট শিশুটি। কিন্তু পদ্মার স্রোত ও বিস্তীর্ণ জলরাশির সঙ্গে যুদ্ধে জয়ী হয়ে মেয়েকে নিয়ে জীবিত ফিরতে পারেননি শামীম।
নিহত শামীম নববধূ সুইটি খাতুন পূর্ণির ফুফাতো ভাই। সেই সম্পর্কে ছোট্ট রোশনি নববধূর ভাতিজি। নৌকাডুবির ঘটনায় শনিবার (৭ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত মোট ৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
তারা হলেন- কনের ফুপু মনি বেগম (৪২), দুলাভাই রতন আলী (৩২), কনের চাচাতো বোন মরিয়ম (৮), কনের ফুফাতো ভাই শামীম (৩১), শামীমের মেয়ে রোশনি (৭) ও এখলাস হোসেন (২২) নামে এক যুবক। তবে নববধূ সুইটিসহ এখনও তিনজন নিখোঁজ রয়েছে। তাদের জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা খুবই কম বলছেন উদ্ধারকারীরা।
হতাহতদের পরিবার সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) পদ্মার ওপারে পবা উপজেলার চরখিদিরপুর গ্রামের রুমন আলীর (২৬) সাথে এপারের ডাঙেরহাট গ্রামের সুইটি খাতুনের (২০) বিয়ে হয়। বিয়ের পর সুইটি শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন।
শুক্রবার (৬ মার্চ) কনেপক্ষ বরের বাড়ি থেকে নবদম্পতিকে আনতে যায়। সন্ধ্যার কিছু সময় আগে তারা বরের বাড়ি থেকে বের হয়ে দু’টি নৌকায় করে কনের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়। পথিমধ্যে নগরীর শ্রীরামপুরের বিপরীতে নদীর মাঝামাঝি স্থানে নৌকা দু’টি ডুবে যায়।