লাল বেনারসিতে লাশ হয়ে ফিরলেন নববধূ সুইটি
স্বামীর ঘরে একদিনের সংসার করে ফিরছিলেন বাবার বাড়ি। পরনে লাল বেনারসি, হাতে মেহেদীর রঙ। সবই আছে, নেই শুধু নববধূ সুইটি খাতুন পূর্ণিমার (২০) প্রাণপাখি। পদ্মায় নৌকাডুবিতে অকালেই পাড়ি জমালেন ওপারে।
নৌকাডুবির ৫৯ ঘণ্টা পর সোমবার (৯ মার্চ) ভোর ৬টার দিকে সন্ধান মেলে সুইটির। দুর্ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে কাটাখালির শাহাপুরে পদ্মার বুকে ভেসে ওঠে তার মরদেহটি। উদ্ধার সুইটি রাজশাহীর পবা উপজেলার ডাঙেরহাট গ্রামের শাহীন আলীর মেয়ে।
নৌ-পুলিশের রাজশাহী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেহেদী হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘রোববার রাত ৯টার দিকে উদ্ধার অভিযান সাময়িক স্থগিত করা হয়। আজ (সোমবার) সকালে ফের নদীতে নামার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। ঠিক সে সময় খবর মেলে- শাহাপুরে নববধূর মরদেহ ভেসে উঠেছে। সেখানে গিয়ে আমরা মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে আসি।’
ওসি আরও বলেন, ‘আমরা মোট নয় জনের মরদেহ উদ্ধার করেছি। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ২৯ জনকে। নৌকাডুবির ঘটনায় আর কেউ নিখোঁজ নেই, সকলের সন্ধানই মিলেছে। ফলে পদ্মায় উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।’
নৌকাডুবির ঘটনায় নিহত অপর আটজন জন হলেন- কনের দুলাভাই রতন আলী (৩২), চাচাতো বোন মরিয়ম (৮), চাচা শামীম (৩১), স্ত্রী মনি খাতুন (৪২), তাদের মেয়ে রোশনি (৭), কনের খালাতো ভাই এখলাস হোসেন (২২), কনের ফুফাতো বোন রুবাইয়া খাতুন স্বর্ণা (১৩) ও খালা আঁখি খাতুন।
হতাহতদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) পদ্মার ওপারে পবা উপজেলার চরখিদিরপুর গ্রামের রুমন আলীর (২৬) সাথে এপারের ডাঙেরহাট গ্রামের সুইটি খাতুনের (২০) বিয়ে হয়। বিয়ের পর সুইটি শ্বশুর বাড়িতে ছিলেন।
শুক্রবার (৬ মার্চ) কনেপক্ষ বরের বাড়ি থেকে নবদম্পতিকে আনতে যায়। সন্ধ্যার কিছুসময় আগে তারা বরের বাড়ি থেকে বের হয়ে দু’টি নৌকায় করে কনের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়। পথিমধ্যে নগরীর শ্রীরামপুরের বিপরীতে নদীর মাঝামাঝি স্থানে নৌকা দুটি ডুবে যায়।
এদিকে, ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গঠিত জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলার কারণে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে।
জেলা প্রশাসক হামিদুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও নিরূপণের চেষ্টা করছি আমরা। হতাহতদের পরিবারকে সে অনুযায়ী সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে।’