নির্দেশনা না মেনে লঞ্চ চলাচল, করোনার ঝুঁকিতে যাত্রীরা
প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) বিশ্বের গন্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশেও হানা দিয়েছে। ইতোমধ্যে দেশে মোট ১৭ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত, একজন মৃত্যুবরণ করেছেন। আর নিজ ঘরে সঙ্গরোধে আছেন কয়েক হাজার দেশে ফেরা প্রবাসী।
এ পরিস্থিতিতে দেশের নৌরুটে লঞ্চে যাতায়াত করার জন্য বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে দেয়া নির্দেশনা মানছে না লঞ্চ চলাচল কর্তৃপক্ষ। এরপরও বরিশাল নৌ-বন্দরে নেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের কোন অভিযান।
ফলে ঢাকার সাথে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের ৩৮ টি নৌরুটে ছোট-বড় প্রায় দেড়শ লঞ্চের ডেকে গাদাগাদি করে কয়েক লাখ যাত্রী করোনার ঝুঁকি নিয়ে অবাধে যাতায়াত করছেন।
সরজমিনে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) রাতে বরিশাল নৌবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্য ছেড়ে গেছে এমভি অ্যাডভেঞ্চার-১, এমভি মানামী, এমভি সুরভী ৮,সুন্দরবন ১১, এমভি পারাবাত ১২ ও তুষখালী থেকে আসা এমভি পূবালী ৭ লঞ্চটি।
করোনার মোকাবিলায় শুধুমাত্র এমভি মানামী লঞ্চে সকল যাত্রীদের প্রবেশকালে আধুনিক তাপমাত্রা যন্ত্র দিয়ে যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয়, হাতে তালুতে জীবাণুনাশক স্প্রে দিয়ে লঞ্চের ভিতরে প্রবেশ করতে অনুমতি দিচ্ছে।
এমভি সুন্দরবন ১১ লঞ্চে দেখা গেছে, শুধু যাত্রীদের হাতে হেক্সিসল দিয়ে প্রবেশ করতে দিচ্ছে। আর বাকি লঞ্চগুলোতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এমন কোন ব্যবস্থা দেখা যায়নি।
ঢাকার উদ্দেশ্য তুষখালী থেকে ছেড়ে আসা এমভি পূবালী-৭ লঞ্চটি বরিশাল নদী বন্দরে চাঁদপুর যাত্রীদের নেয়ার জন্য থামালে সাথে ঠেলাঠেলি আর গাঁয়ে গাঁয়ে মিশে কয়েকশ যাত্রী ঝুঁকি নিয়ে ওঠে ।পড়ে কোন পরীক্ষা আর জীবাণুনাশক স্প্রে ছাড়াই যাত্রীদের নিয়ে চলে যায় লঞ্চটি।
এছাড়াও বিআইডব্লিউটিএ'র নির্দেশানুযায়ী লঞ্চে প্রবাসীদের অন্যান্য যাত্রীদের কাছ থেকে আলাদা আলাদা জায়গার ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও এমন কোন নির্দিষ্ট ব্যবস্থাও লক্ষ্য করা যায়নি লঞ্চগুলোতে৷
মোঃ মাহমুদ হাসান নামে অ্যাডভেঞ্চার-১ লঞ্চের ডেকের এক যাত্রী বার্তা২৪.কম বলেন, সবকিছু আগের মতোই কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই লঞ্চে দেদারছে যাত্রী ওঠানামা করছে। কে করোনায় আক্রান্ত বা কার কাছে নিরাপদে বসব কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। এ কারণে ব্যক্তিগত জরুরি কাজের জন্য করোনার ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছি ।
এমভি মানামী লঞ্চের সুপারভাইজার শাহাদাত হোসেন শুভ বার্তা২৪.কম কে বলেন, বিআইডব্লিউটিএর পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা সকল নির্দেশনা সঠিকভাবে পালন করছি।
যাত্রীদের এ ভাইরাস থেকে নিরাপদ রাখার জন্য চার/পাঁচ দিন আগে থেকে আমরা প্রথমে জীবাণুনাশক স্প্রে দিয়ে লঞ্চটিকে প্রস্তুত করছি৷ এরপর লঞ্চের প্রবেশদ্বারে উন্নত তাপমাত্রাযন্ত্র দিয়ে প্রত্যেক যাত্রীকে আলাদা আলাদা করে তাঁর শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। সাথে যাত্রীদের হাতে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে।
এই তাপমাত্রা যন্ত্রের সাহায্যে যদি কোন যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা বেশি পাওয়া যায় অথবা করোনায় আক্রান্ত সন্দেহ হলে তাকে সাথে সাথে লঞ্চ থেকে নামিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো পরামর্শ দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
কোন পরীক্ষা বা জীবানুনাশক স্প্রে ছাড়াই লঞ্চে অবাধে যাত্রীদের নিয়ে যাতায়াত করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে এমভি সুরভী-৮ লঞ্চের সহকারী মোঃ আসাদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, বরিশালে জীবাণুনাশক স্প্রেসহ ভাইরাস মুক্ত রাখার অন্যান্য সামগ্রীর সংকট থাকায় লঞ্চে ব্যবহার করতে পারিনি। তবে ঢাকা থেকে এসব সামগ্রী দ্রুত কিনে এ ভাইরাস প্রতিরোধে যাত্রীদের সেবা নিশ্চিত করা হবে বলেও জানান এই সহকারী৷
বিআইডব্লিউটিএর বরিশাল নৌ বন্দর ও পরিবহন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক আজমল হুদা মিঠু সরকার বার্তা২৪.কমকে জানান, এরই মধ্যে বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে নৌযান মালিকদের সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা উল্লেখ করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রত্যেক লঞ্চের ডেক-কেবিন পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখার জন্য যাত্রী তোলার আগে জীবাণুনাশক স্প্রে করা, যাত্রীদের লঞ্চে তোলার সময় হাতে জীবাণুনাশক স্প্রে করা, লঞ্চের শৌচাগারগুলোকে ভালোভাবে পরিচ্ছন্ন এবং সেখানে পর্যাপ্ত পানি ও সাবানের ব্যবস্থা রাখা, যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা, বিদেশ ফেরত যাত্রীদের অন্য যাত্রীদের থেকে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করাসহ লঞ্চে যাত্রীদের করোনাভাইরাস সম্পর্কে সতর্কতা ও সচেতনতামূলক মাইকিং, টেলিভিশনে প্রচার ও স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা প্রচার করা।
এসব নির্দেশনা পালনে বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে নৌযানগুলোর প্রতি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সাথে সাথে কোন লঞ্চ কর্তৃপক্ষ যদি এসব নির্দেশনা না মেনে চলে তাহলে তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বার্তা২৪.কমকে জানান, এই ভাইরাসের সংক্রামক থেকে বাঁচতে সতর্কতা আর সচেতনতার বিকল্প কিছুই নেই। তাই বিআইডব্লিউটিএ'র দেয়া যে নির্দেশনা পুরোপুরি লঞ্চ কর্তৃপক্ষ মানলে তাহলে এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে অনেকাংশেই রেহাই পাওয়া যাবে৷