দুই ঘণ্টায়ও বউনি হয়নি
বিকেল ৪টায় বাসা থেকে বের হইছি এখনও (সন্ধ্যা ৬টা) বউনি হয়নি। আয় রোজগার প্রসঙ্গে প্রশ্ন করতেই উদাস ভঙ্গিতে উত্তর দিলেন রিকশা চালক আব্দুল ওয়াহেদ মিয়া।
মিল্ক ভিটার মোড়ে ওয়াহেদ মিয়ার পাশাপাশি আরও ৫টি রিকশা দাঁড়ানো। অন্যরাও যাত্রীর অপেক্ষায়। গৌতম নামের একজন জানালেন ৩টায় রিকশা নিয়ে বের হয়ে এখন পর্যন্ত ৬০ টাকা আয় করেছেন। ইঞ্জিনচালিত এই রিকশাগুলোর দিনের জমা ৩’শ টাকা। আর তারা দু’জনেই অর্ধেক দিনের জন্য ভাড়ায় বের হয়েছেন সেহেতু দেড়’শ টাকা জমা দিতে হবে। তবে ওয়াহেদ মিয়ার গ্যারেজ মালিক নাকি নাকি দয়াশীল। আয় রোজগার কম হলে ১’শ টাকা দিলেও আপত্তি করবে না। ওয়াহেদ মিয়ার ধারণা এমন।
গাইবান্ধার দক্ষিণ গিদারী গ্রামের বাসিন্দা ওয়াহেদ মিয়া স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন ঢাকায়। আর তিন সন্তান এলাকায় স্কুল মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেন। তিনদিন পর বের হয়েছেন। প্রশ্ন ছিল রিকশা নিয়ে বের হলে আপনিওতো ঝুঁকির মধ্যে থেকে যান। সরল জবাব, কতদিন আর ঘরে বসে থাকবো? আর খাবার পাবো কোথায়?
কোনই জমা নেই আপনার? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, তিন ছেলে-মেয়ের পড়ার খরচ দিতে হয়। একটু জমলেই বাড়িয়ে পাঠিয়ে দিতে হয়। জমা থাকলে কি এতো ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় বের হতাম।
মিল্ক ভিটার মোড় থেকে আরামবাগ আবাসিকের মোড় পর্যন্ত প্রায় গোটা বিশেক রিকশার দেখা হয়। মাত্র একজন যাত্রীর দেখা মেলে। অন্যগুলো ফাঁকা রিকশা নিয়ে যাত্রীর জন্য একমোড় থেকে আরেক মোড়ে ছুটছেন। কারো ভাগ্যে যাত্রী জুটছে কারো ভাগ্যে না।
মিরপুর এলাকা নয়, গুলশান, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, মালিবাগ, শান্তিনগর, কারওয়ান বাজার ও মিরপুর রোড ঘুরে অভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। পুরো শহরজুড়ে কোথাও কোনো গণপরিবহনের দেখা মেলেনি। অল্প সংখ্যক রিকশা প্রধান সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। গোটা দশেক সিএনজি চালিত অটোরিকশা এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে। আর সীমিত সংখ্যক ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল করছে।
পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে নগর জুড়ে। তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড়ে সেনাবাহিনীর চেক পোস্ট লক্ষণীয়। অভিযাত এলাকার চিত্র আশাজাগানিয়া হলেও বস্তি এলাকার চিত্র কিছুটা হতাশাজনক। তেজগাঁও রেল লাইনের দুইদিকের বস্তিতে লকডাউনের কোনো আলামত নেই। ছেলে-মেয়ে থেকে বয়োবৃদ্ধরা আড্ডায় মগ্ন।