বিদেশ ফেরতদের সঙ্গরোধ শেষ ১৩ এপ্রিল

  • মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আশকোনা হজ ক্যাম্পে সঙ্গরোধে রাখা হয় অনেক প্রবাসীকে,ছবি: সংগৃহীত

আশকোনা হজ ক্যাম্পে সঙ্গরোধে রাখা হয় অনেক প্রবাসীকে,ছবি: সংগৃহীত

গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম নোভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) তিনজন আক্রান্ত হয়েছেন বলে ঘোষণা দেয় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।

আক্রান্তদের মধ্যে দু’জন ইতালি ফেরত ও আরকেজন তাদের সংস্পর্শে আসা পরিবারের সদস্য। এরপর থেকে নিয়মিত বিশ্বের বিভিন্ন করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে প্রবাসীরা দেশে ফেরেন। যাদের সংস্পর্শে এসে দেশে একে এক বাড়তে থাকে ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা।

বিজ্ঞাপন

আইইডিসিআর’র মতে, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যে ৫৪ জনের মধ্যে করোনা শনাক্ত করা হয়েছে, তাদের মধ্যে অধিকাংশ বিদেশ ফেরত। আর বাকিরা তাদের সংস্পর্শে আসা লোকজন। ফলে বিদেশ ফেরত শতাধিক প্রবাসীকে প্রাতিষ্ঠানিক সঙ্গরোধে (কোয়ারেন্টাইন) নিতে বাধ্য হয় আইইডিসিআর। যাদের মধ্যে অধিকাংশ সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরেছেন।

এছাড়া ১৪ হাজারেরও বেশি বিদেশ ফেরতদের বাড়িতেই সঙ্গরোধে (হোম কোয়ারেন্টাইন) থাকার নির্দেশ দেয় সংস্থাটি।

বিজ্ঞাপন

আইইডিসিআর বলছে, আক্রান্ত দেশ থেকে আসা প্রবাসীদের মাধ্যমে দেশে করোনা ছড়িয়েছে।
তবে এখনো দেশে সামাজিকভাবে ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ায়নি। তাই বিদেশ ফেরতদের সঙ্গরোধ নিশ্চিত করতে পারলে অনেকখানি নিয়ন্ত্রণ পাওয়া যাবে করোনার ওপর।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইতোমধ্যেই বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে দেশের। ফলে করোনায় আক্রান্ত দেশ থেকে প্রবাসীদের আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। আর এতে করে নতুন করে দেশে ফিরে আসা প্রবাসীদের সংখ্যা কমে গেছে। আর এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমেছে প্রাতিষ্ঠানিক ও বাড়িতে সঙ্গরোধে থাকা প্রবাসীদের সংখ্যা। কারণ এরই মধ্যে অনেকের সঙ্গরোধ শেষ হয়েছে, বাকিদের শেষ হওয়ার পথে।

আইইডিসিআর'র পরিসংখ্যান বলছে, দেশে এখন পর্যন্ত ৫৪ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সঙ্গরোধে আছেন ৩৮ জন প্রবাসী ও আইসোলেশনে আছেন ৭৫ জন।

আইইডিসিআর'র সূত্রে জানা যায়, সদ্য বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের ১৪ দিন বাড়িতে বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সঙ্গরোধে থাকা বাধ্যতামূলক। এ পর্যন্ত যারা দেশে ফিরেছেন তাদের প্রাতিষ্ঠানিক ও বাড়িতে সঙ্গরোধ সম্পূর্ণ হচ্ছে আগামী ১৩ এপ্রিলের মধ্যে। নতুন করে প্রবাসীরা না এলে ও দেশে সামাজিক সংক্রমণ না হলে আর কাউকে প্রাতিষ্ঠানিক সঙ্গরোধে নাও নেওয়া হতে পারে।

সর্বশেষ প্রাতিষ্ঠানিক সঙ্গরোধে থাকা ব্যক্তিদের সংখ্যার বিষয়ে আইইডিসিআর ও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার সিটি থেকে সর্বশেষ ৬০ জন প্রবাসীর একটি দল দেশে এসেছেন। যাদের মধ্যে ১৩ জনকে আশকোনা হজ ক্যাম্পে প্রাতিষ্ঠানিক সঙ্গরোধে রাখা হয়েছে। আর বিভিন্ন সময় বিদেশ ফেরত ২৫ জনকে জনকে গাজীপুর ও পূবাইলে প্রাতিষ্ঠানিক ও বাড়িতে সঙ্গরোধে রাখা হয়েছে।

সঙ্গরোধ শেষ হওয়ার বিষয়ে আইইডিসিআর বলছে, গত ৩০ মার্চ ম্যানচেস্টার থেকে আসা ১৩ জনের প্রাতিষ্ঠানিক সঙ্গরোধের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৩ এপ্রিল। আর প্রাতিষ্ঠানিক সঙ্গরোধে থাকা বাকি ২৫ জন ও বাড়িতে সঙ্গরোধে থাকাদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১০-১৩ এপ্রিলের মধ্যে। সর্বশেষ যে ৩৪ জন সঙ্গরোধে রয়েছেন, তাদের মধ্যে অধিকাংশেরই শরীরে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ ক্ষীণ। তবে তাদের মধ্যে যদি নতুন করে কেউ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হন, তাহলে বাকিদের সঙ্গরোধে থাকার মেয়াদ বাড়তে পারে।

এ বিষয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, বর্তমানে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সঙ্গরোধে রয়েছেন ৩৮ জন। তাদের মধ্যে সর্বশেষ ১৪ জন গত ৩১ মার্চ ম্যানচেস্টার থেকে এসেছেন। সর্বশেষ ১৩ জনসহ মোট ৩৮ জনের প্রাতিষ্ঠানিক সঙ্গরোধের মেয়াদ শেষ হবে ১৩ এপ্রিলের মধ্যে। এছাড়া যেসব প্রবাসী বাড়িতে সঙ্গরোধে আছেন, তাদের সঙ্গরোধের মেয়াদও শেষ হবে একই সময়ের মধ্যে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে এখনো ভাইরাসটির সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়নি, আমাদের সামনের সময়গুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এছাড়া সরকারের বর্ণিত স্বাস্থ্য নির্দেশনাগুলো মেনে চলতে হবে। তাহলে করোনাকে রোধ করা সম্ভব হবে।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু আইইডিসিআর বার বার বলেছে, দেশে এখনো করোনার সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়নি, তাই আগামী ১৩ এপ্রিলের পর আক্রান্তদের সংখ্যা কমতে পারে।

অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করা করোনাভাইরাস রোধে দেশে চলছে অঘোষিত লকডাউন। যত দিন এগোচ্ছে সামাজিক দূরত্বের বজায় রাখা নিশ্চিত করতে কঠোর হচ্ছে সরকার।

এরই মধ্যে সেনাবাহিনী ও পুলিশসহ দেশের বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এ লক্ষ্যে এক যোগে কাজ করে যাচ্ছে। এখনো পর্যন্ত করোনার কোনো প্রতিষেধক বা ওষুধ তৈরি হয়নি। যেহেতু ভাইরাসটি সংক্রামক তাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাকে এ মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়ার কার্যকর উপায় বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এজন্য সরকার আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে দেশে।

এ বিষয়ে আইএসপিআর’র পক্ষ থেকে বুধবার (১ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) থেকে সেনাবাহিনী দেশের সব স্থানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং বাড়িতে সঙ্গরোধ কঠোরভাবে নিশ্চিত করবে। সরকার প্রদত্ত নির্দেশনাবলী অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।