নির্জন সৈকতে কাছিম, কাঁকড়া ও শামুকের রাজত্ব

  • মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, কক্সবাজার
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নির্জন সৈকত তীরে কাছিম

নির্জন সৈকত তীরে কাছিম

দেশে চলমান করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ভ্রমণে  চলছে টানা নিষেধাজ্ঞা। ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতজুড়ে এখন কেবলই নির্জনতা। সাগরের ঢেউয়ের গর্জন ছাড়া আর কোন কোলাহল নেই। নির্জন এ সৈকতে রাজত্ব করছে সামুদ্রিক কাছিম, বিভিন্ন প্রজাতির কাঁকড়া ও শামুক। সৈকতের এমন দৃশ্য একেবারেই বিরল।

সৈকতের বর্তমান পরিস্থিতিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পরিবেশবাদীরা। পাশাপাশি এসব প্রাণ-প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সৈকতের কয়েকটি অংশকে প্রকৃতিবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ জরুরি বলে মনে করেন তারা।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে কয়েকটি পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, ফাঁকা সৈকতজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে শামুক-ঝিনুক। এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করছে লাল কাঁকড়ার দল। মাঝে মাঝে কূলে উঠে আসছে সামুদ্রিক কাছিম। তা দেখছেন শুধুই বিচ কর্মী ও লাইফগার্ড কর্মীরা।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পড়ে আছে ঝিনুক

জানা যায়, বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ উপকূলে রয়েছে, ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি, ৫ প্রজাতির লবস্টার, ৩৩৬ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১৬ প্রজাতির কাঁকড়া, ৭ প্রজাতির কাছিম, ১০ প্রজাতির ডলফিন, তিন প্রজাতির তিমি ও ২০০ প্রজাতির সি-উইড। যা সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে। সচরাচর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ১১ টি পয়েন্ট সারা বছর পর্যটকে ভরপুর থাকে, সেসব পয়েন্টে এসব জলজপ্রাণীর দেখা মিলত না। পাশাপাশি পরিবেশ দূষণও এর অন্যতম কারণ বলছেন পরিবেশবাদীরা।

বিজ্ঞাপন

এছাড়াও গত ১৮ মার্চের পর কয়েকদফা ডলফিন শো দেখেছেন বিচ কর্মীরা। যা রীতিমত অবাক করেছে সবাইকে। নতুন করে গজিয়েছে সাগর লতা। প্রাণ-প্রকৃতির এমন আচরণে কক্সবাজারবাসী বিস্ময় প্রকাশ করেছে।

বিচ কর্মী মাহবুবুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, সৈকতের কয়েকটি পয়েন্টে শামুক-ঝিনুক ও কাঁকড়ার দেখা মিলেছে। যা পর্যটক চলাচলের সময় এখানে দেখা যেত না। কলাতলী থেকে মেরিন ড্রাইভের প্রবেশমুখে সৈকতে দেখা গেছে কাছিম। এটিও মাঝে মাঝে দেখা যেত। কিন্তু এখন কিছুদিন পর পর কুলে আসছে।

নির্জন সৈকতে ছোটাছুটি করছে লাল কাঁকড়ার দল

কক্সবাজার পিপলস ফোরামের মুখপাত্র এইচ এম নজরুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, সাগরের পরিবেশ যতদিন দূষণমুক্ত হবে না ততদিন হয়তো এরকম সামুদ্রিক প্রাণী আমাদের দেখা দেবে না। কারণ এসটিপি প্লান করা হয় হোটেলগুলোতে। কিন্তু প্রশাসনের খেয়ালিপনায় তা আর হয়ে উঠেনি। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে সমুদ্র পানি দূষিত হচ্ছে।

কক্সবাজারের স্থানীয় পরিবেশবিদ বিশ্বজিত সেন বার্তা ২৪.কমকে বলেন, মানুষের আগ্রাসনের কারণে সামুদ্রিক প্রাণীগুলোও বাঁচার পরিবেশ হারাচ্ছে। আমাদের আচরণে জলজ প্রাণীকূলও বিরক্ত। সমুদ্র্র সৈকতে এত বেশি মানুষের ঢল, এমন কোলাহলের কারণে জলজ প্রাণীরাও অনিরাপদ বোধ করে। যেকারণে এতদিন এরা গভীর সমুদ্রে থেকেছে। যখনই কোলাহল থেমে গেল, সৈকতে নির্জনতার সুযোগ পেয়ে কাছে চলে এসেছে ডলফিন, কাছিম বা অন্যান্য প্রাণী।

ফাঁকা সৈকতজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে শামুক-ঝিনুক

কক্সবাজার পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আয়াছুর রহমান বার্তা ২৪.কমকে বলেন, সমুদ্র সৈকতে মানুষের অবাধ বিচরণের কারণে সেখানকার প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে। এক সময় সৈকতজুড়ে দেখা যেত লাল কাঁকড়ার দৌড়ঝাঁপ। সেই দৃশ্য এখন আমরা হারাতে বসেছি। আশার কথা হলো, অন্তত এই দুর্যোগময় মুহূর্তে প্রকৃতি তার নিজের পরিবেশ ফিরে পেয়েছে।

উল্লেখ্য, দেশজুড়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় জনসমাগম রোধে ১৮ মার্চ থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি হোটেল-মোটেলসহ সৈকতের আশেপাশে সব ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে কক্সবাজারের সঙ্গে দূরপাল্লার বাস চলাচলও বন্ধ রয়েছে। ফলে কক্সবাজার সমুদ্র্র সৈকত পর্যটক শূন্য। আর এ সুযোগে লোকালয়ের একদম কাছে চলে এসেছে ডলফিন, কাছিমসহ অনেক জলজপ্রাণী।