ছুটিতেই এডিস মশার উৎপত্তি নির্মূলের পরিকল্পনা
বর্তমানে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে দেশজুড়ে দীর্ঘমেয়াদী ছুটি চলছে। এতে শহরজুড়ে জনসাধারণ ও যানবাহনের চাপ অনেকটাই কম। ফলে এ সময়কে কাজে লাগিয়ে পুরো ঢাকা শহরকে শতভাগ পরিষ্কার করতে সিটি করপোরেশনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ছুটির মধ্যে এডিস মশার উৎপত্তিস্থল জরুরি ভিত্তিতে পরিচ্ছন্ন করার পরিকল্পনা নিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে মশক নিধন ও ডেঙ্গু প্রতিরোধ সংক্রান্ত এক আন্তঃসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন।
সভা সূত্রে জানা গেছে, সম্ভাব্য ডেঙ্গু মোকাবিলায় সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশনা দেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। এজন্য এলজিআরডি মন্ত্রীর নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা সংস্থার দায়িত্বশীল প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী জাতীয় বা স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হবে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রতিটি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের করণীয় নির্ধারণ করে মন্ত্রীর স্বাক্ষরে একটি আধা সরকারি পত্র পাঠানো হবে। সম্মিলিত উদ্যোগের অংশ হিসাবে দুই সিটি করপোরেশন, ক্যান্টনমেন্ট এলাকা, বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ একযোগে মশক নিধন অভিযান শুরু করবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সময়সীমা নির্ধারণ করে দিবে।
সভায় জানানো হয়েছে, ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মশক নিধন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। এ সব প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা যাচাই করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এসময় ঢাকা শহরের খাল-নালাগুলো একযোগে পরিচ্ছন্ন করার স্বার্থে এবং স্থাপনাগুলো পরিচ্ছন্ন করার স্বার্থে সভায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত বিভাগ, রাজউক, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দেয়া হয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি ভবন, লেক, পার্ক, খাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদফতর বা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মশা মারার কাজ করবে সিটি করপোরেশন। দীর্ঘ ছুটির সময় বন্ধ থাকা সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলোতে এডিস মশার উৎপত্তি যেন না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।’
ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ লেকগুলো পরিষ্কার করে দিলে আমরা ওষুধ ছিটাবো, তাহলে মশা মরবে। এটাই সময় একসঙ্গে কাজ করার। আমি ১৫ মে দায়িত্ব পাব, কিন্তু এখন থেকেই কাজ করে যাচ্ছি।’
সভায় কৃষি সচিব জানান, তিনটি প্রতিষ্ঠান কীটনাশক আমদানি করে। তাদের কাছ থেকে যে কেউ কীটনাশক কিনতে পারে। এছাড়া ঢাকার দু’সিটি করপোরেশনকেও সরাসরি কীটনাশক আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
গত ৩০ মার্চ করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে ৬৪টি জেলায় ভিডিও কনফারেন্স করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি করোনা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি মশক নিধন এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য এলজিআরডি মন্ত্রী এবং সিটি করপোরেশনের মেয়রদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ হতে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হয়ে এলজিআরডি মন্ত্রী মশক নিধনে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার এলজিআরডি মন্ত্রীর সভাপতিত্বে এ আন্তঃসভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে:
মশার উৎপত্তিস্থল যেমন শহরের সব খাল-নালা, দুটি বাড়ি স্থাপনার মধ্যবর্তীস্থলের অপরিচ্ছন্ন স্থান, কাঁচা বাজার, সরকারি অফিস ও সরকারি আবাসিক স্থাপনা জরুরি ভিত্তিতে পরিচ্ছন্ন করা। এডিস মশার বিস্তার রোধে অফিস ছুটিকালীন সময় সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি দফতরের টয়লেটের কমোড অত্যাবশ্যকীয় বন্ধ রাখতে হবে, নির্মাণাধীন ভবন এবং যেসকল সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা নিজ উদ্যোগে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখবে না বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার অভাবে লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া যাবে সে সব ব্যক্তি, স্থাপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে আইন অনুযায়ী জরিমানার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নেতৃত্বে পরিচ্ছন্নতা অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে, প্রয়োজনে প্রতি ওয়ার্ডে ৮টি সাব কমিটি গঠন করে প্রতি কমিটিতে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ২০ (বিশ) জন গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি সামাজিক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করতে হবে। মশক নিধনে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার স্বার্থে মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন ও ঢাকা ওয়াসা সম্মিলিত হয়ে কাজ করবে। দু’সিটি করপোরেশন আগামী সাতদিনের মধ্যে নিজস্ব কর্মপরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে দাখিল করবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্লান্ট প্রটেকশন ইউনিট কর্তৃক একাধিক উদ্যোক্তা বা আমদানিকারককে আমদানির সুযোগ দেওয়া হলে মশক নিধনে ব্যবহৃত কয়েল, অ্যারোসলের মতো বাজারে তা সহজলভ্য হয়, তাহলে মানুষ স্ব স্ব উদ্যোগে হস্তচালিত মেশিন দিয়ে নিজস্ব আঙ্গিনার মশক নিধন করতে পারবে।
এছাড়া বর্তমানে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে যে দীর্ঘমেয়াদী ছুটি চলমান আছে, এ সময়ের মধ্যে যেহেতু শহরে জনসাধারণ ও যানবাহনের চাপ কম আছে, পুরো ঢাকা শহরকে শতভাগ পরিষ্কার করার সুযোগ সিটি করপোরেশনকে নিতে হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের চলমান পরিচ্ছন্নতা অভিযান সরেজমিন পরিদর্শন করবে। এর বাইরে উভয় সিটি করপোরেশনের ল্যান্ডফিলসহ অন্যান্য স্থাপনা ঢাকা ওয়াসা ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাধীন খাল-নালাগুলো পরিচ্ছন্নতাকরণ কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শন করবে। সংশ্লিষ্ট সব দফতর ও সংস্থা সময় নির্ধারণ করে অবহিত করবে। অতিরিক্ত সচিব (নগর উন্নয়ন) এ কার্যক্রম সমন্বয় করবেন।