করোনার টিকা আবিষ্কারে কাজ করছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

করোনার টিকা আবিষ্কারে কাজ করছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো

করোনার টিকা আবিষ্কারে কাজ করছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো

সারাবিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া ‘কোভিড-১৯’ বা করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মাঠে নেমেছে বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি)। টিকা তৈরির কাজে ইতোমধ্যে বেশ খানিকটা এগিয়েও গেছে বলে দাবি বিএটি’র যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সহযোগি প্রতিষ্ঠান কেন্টাকি বায়োপ্রসেসিং (কেবিপি)।

করোনা প্রতিরোধে প্রস্তুতকৃত তাদের প্রতিষেধকটি বর্তমানে প্রি-ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা পর্যায়ে রয়েছে। এই পরীক্ষায় সফল হলে এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি উপযুক্ত অংশীদার পেলে আগামী জুন মাস থেকে প্রতি সপ্তাহে ১০ থেকে ৩০ লাখ ডোজ পর্যন্ত টিকা তৈরির আশা করছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর মালিকানাধীন কেন্টাকি বায়োপ্রসেসিং (কেবিপি) সংস্থাটি সাধারণত বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডে পরিচালিত হয়। কিন্তু করোনা মহামারির বিপর্যস্ত এই সময়ে সামাজিক দায়বদ্ধতা ও মানবিক বিবেচনার জায়গা থেকে প্রতিষ্ঠানটি বিনা লাভে করোনা প্রতিষেধক টিকা তৈরির কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো জানিয়েছে, টিকা উন্নয়ন কার্যক্রমে বিএটি’র অত্যাধুনিক ‘ফাস্ট গ্রোয়িং টোব্যাকো প্লান্ট টেকনোলজি’ ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে টিকা তৈরি প্রচলিত প্রযুক্তির চেয়ে বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে। যেমন- তামাক গাছ যেহেতু মানব রোগ সৃষ্টিকারী কোনো জীবাণু তৈরি করতে পারে না, কাজেই টিকা তৈরির এই প্রক্রিয়াটি তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। এটি দ্রুততরও বটে, কারণ টিকার উপাদান তামাক গাছে দ্রুত জমে থাকে। আরও সহজ করে বলতে গেলে, প্রচলিত পদ্ধতিতে টিকা তৈরির উপাদান প্রস্তুত করতে যেখানে কয়েক মাস লেগে যায়, সেখানে তামাক গাছে লাগে মাত্র ৬ সপ্তাহ। টিকা তৈরির ক্ষেত্রে প্রচলিত পদ্ধতিতে যেখানে প্রায়ই হিমায়িত করার প্রয়োজন পড়ে, সেখানে কেবিপি উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে তা কক্ষের তাপমাত্রাতেই করা যায়। এবং এই প্রক্রিয়ায় প্রস্তুতকৃত টিকার প্রতিটি ডোজের মাধ্যমে মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কার্যকরভাবে সক্রিয় করা সম্ভব। 

ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিএটি’র সহযোগী প্রতিষ্ঠান রেনল্ড আমেরিকান কর্পোরেশন ২০১৪ সালে কেবিপি’কে অধিগ্রহণ করে। প্রতিষ্ঠানটির তামাক নিষ্কাশনের অনন্য কিছু প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে রেনল্ড আমেরিকানের নতুন বিভাগের অ-দহনশীল পণ্য তৈরির উদ্দেশ্যেই এটি করা হয়। 

বিজ্ঞাপন

২০১৪ সালে ইবোলা চিকিৎসায় কার্যকর ভূমিকা রাখা হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানির তালিকায় জায়গা করে নিয়ে সংবাদের শিরোনাম হয় কেবিপি। সে সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বায়োমেডিক্যাল অ্যাডভান্সড রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অথরিটি’র (বিএআরডিএ) সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক কোম্পানি ম্যাপ বায়ো- ফার্মাসিউটিক্যালসের সাথে ‘জেডম্যাপ’ তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি কেবিপি ‘কোভিড-১৯’ বা করোনা ভাইরাসের জিনগত ধারার একটি অংশের ক্লোন করেছে, যার মাধ্যমে ‘অ্যান্টিজেন’ আবিষ্কারের সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেছে। ‘অ্যান্টিজেন’ হচ্ছে এমন একটি পর্দার্থ, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, বিশেষত: ‘অ্যান্টিবডি’ তৈরিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। পরবর্তীতে এই অ্যান্টিজেন পুনরায় উৎপাদনের জন্য তামাক গাছে সন্নিবেশিত করা হয়। প্রথম চাষের পর এন্টিজেনটি বিশুদ্ধ করা হয়। বর্তমানে সেটির প্রি-ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা চলছে।

দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিকাটির ক্লিনিকাল স্টাডি শুরু করতে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে উপযুক্ত অংশীদার খুঁজছে বিএটি। যাবতীয় প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন করা গেলে সরকার এবং তৃতীয় পক্ষের উৎপাদনকারীদের সহায়তায় প্রতি সপ্তাহে ১০ লাখ থেকে ৩০ লাখ ডোজ টিকা তৈরি করা যাবে বলে বিশ্বাস ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো’র।

এ বিষয়ে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো’র সায়েন্টিফিক রিসার্চের ডিরেক্টর ড. ডেভিড ও'রিলি বলেন, “টিকা তৈরির কাজটি চ্যালেঞ্জিং এবং জটিল। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি যে, আমাদের টোব্যাকো প্লান্ট টেকনোলজি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আমরা ইতোমধ্যেই এক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছি। এখন ‘কোভিড -১৯’ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ে সরকার ও অন্যান্য সকল অংশীদারের সঙ্গে কাজ করার জন্য আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। সমাজের সবাইকে সাথে নিয়ে বিশ্বের যে কোনো সমস্যা মোকাবিলায় আমরা সব সময় জাতিসংঘের পাশে আছি। এবং নিজেদের প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সারা বিশ্বের সমবেত প্রচেষ্টায় সামিল হয়ে ‘কোভিড-১৯’ সংক্রমণ রুখতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”