ঢাকার রাস্তায় বেড়েছে দরিদ্র মানুষ

  • সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

চাল কুড়িয়ে নিচ্ছেন দুই নারী/ছবি: বার্তা২৪.কম

চাল কুড়িয়ে নিচ্ছেন দুই নারী/ছবি: বার্তা২৪.কম

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্কুল-কলেজ, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ যান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। টানা বন্ধের মুখে বদলে যেতে শুরু করেছে রাজধানী ঢাকার চিত্র। খেটে খাওয়া দিনমজুর থেকে শুরু করে দুঃস্থ মানুষেরা ত্রাণের আশায় ঘুরছেন রাস্তার মোড়ে মোড়ে।

শনিবার (৩ মার্চ) নগরীর মিরপুর থেকে কল্যাণপুর, হাতিরঝিল থেকে মতিঝিল এলাকায় দরিদ্র-অসহায় মানুষকে খাদ্যের সন্ধানে ঘুরতে দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

বন্ধের প্রথম কয়েকদিন রাস্তাঘাটে কোনো ভিক্ষুক দেখা যায় নি। কিন্তু শনিবার একটু বেশি মানুষকে রাস্তায়-ফুটপাতে বসে থাকতে দেখা গেছে। অবশ্য আগের মতো তাদের আর জটলা করে থাকতে দেখা যায় নি। দূরে নিরাপদ দূরত্বে বসে ভিক্ষা করতে দেখা গেছে। অনেকের পোশাক দেখে ভিক্ষুক মনে করার সুযোগ কম। রাস্তায় রাস্তায় খাবার দেওয়ার খবর পেয়েও এসেছেন অনেকে। তীর্থের কাকের মতো বসে আছেন দাতাদের পথ চেয়ে।

বনশ্রী মেইন রোডের ফুটপাতে বসে থাকা মধ্যবয়সী মরিয়ন বেগম বার্তা২৪.কমকে বলেন, বাবা অনেকেই রাস্তায় রাস্তায় খাবার দিচ্ছে, তাই এসেছি। যা চাল-ডাল আছে দ্রুতই শেষ হয়ে যাচ্ছে। বাসা-বাড়িতে কাজ করতাম সে কাজও এখন বন্ধ। টাকা দেবে কি না জানি না।

বিজ্ঞাপন
খাবারের সন্ধানে অপেক্ষারত অসহায় মানুষ

খাবারের সন্ধানে আসা অপর একজন বলেন, স্বামী বাসের হেলপার ছিলেন। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বাসায় পড়ে আছেন। তার আয়ের ওপরই ভরসা ছিল। আমি এক ছাত্রাবাসে রান্না-বান্না করি। ছাত্রাবাস বন্ধ হয়ে গেছে। দুই বেলা যে খাবার পেতাম সেটিও বন্ধ। গ্রামে ছেলে-মেয়ের খাবার খরচ পাঠাতে হয়। চরম সংকটের মধ্যে আছি।

এমন চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনেও। তবে তারা কেউই লোকজন এলে দৌড়ে গিয়ে সাহায্য চাইছে না। অনেকে রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় শুকনো খাবারের প্যাকেট, আবার কেউ কেউ নগদ টাকা দিয়ে যাচ্ছেন।

দূরে নিরাপদ দূরত্বে বসে ভিক্ষা করছেন

সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন নগরীর ভাসমান মানুষেরা। এরা ফুটপাতে কিংবা বিভিন্ন ঝুপড়িতে থাকেন। বস্তিবাসীদের অবস্থাও ত্রাহি। শহরের তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। জানালা বিহীন এসব টিনের ঘরে টেকা দায় হয়ে পড়েছে। অনেকের ঘরে বসবার মতো কোনো জায়গা নেই। একটি বিছানা তাতেই খাওয়া-দাওয়া থেকে সবকিছু সারতে হয়। কারো কারো অবস্থা আরও করুণ, রাতে একদল বিছানায় ঘুমাতেন আরেকদল মেঝেতে থাকতেন। তাদের সঙ্গরোধ অনেকটা কারাগারের নামান্তর হয়ে পড়েছে।

শুক্রবার থেকেই পুলিশি তৎপরতা আগের থেকে কয়েকগুণ বেড়েছে। পাড়ায়-মহল্লায়ও পুলিশ টহল দিচ্ছে। সন্ধ্যার পর ওষুধের দোকান ছাড়া অন্যান্য দোকান বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। রাস্তায় জটলা দেখলেই নেওয়া হচ্ছে ব্যবস্থা। রাস্তায় চলাচলের একমাত্র ভরসা রিকশা। যাত্রীর তুলনায় রিকশার সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাদেরও রোজগার নেই বললেই চলে। তবে আশার কথা হলো- অনেকেই রাজধানীতে খাদ্য পণ্য সংকটের ভয়ে ছিলেন। কিন্তু সরবরাহ এবং দাম সবই আগের মতো রয়েছে।