আবার গ্রামে ফেরার পালা!

  • মাহিদুল মাহিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাভার (ঢাকা)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আবার পিকআপ ভ্যান বোঝাই হচ্ছে মানুষে, ছবি: বার্তা২৪.কম

আবার পিকআপ ভ্যান বোঝাই হচ্ছে মানুষে, ছবি: বার্তা২৪.কম

করোনাভাইরাসে যখন দিশেহারা গোটা দুনিয়া, তখন সামাজিক দূরুত্বের গুরুত্ব না দিয়ে ট্রাকে আর পিকআপ ভ্যানে গাদাগাদি করে ঝুঁকি নিয়ে একবার ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরে আবার ঢাকায় ফেরেন অসংখ্য পোশাক শ্রমিক।

এখন কারখানা বন্ধের সময়সীমা বাড়ানোয় আবার স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়েই গ্রামে যাওয়ার জন্য বোঝাই হচ্ছেন ট্রাক আর পিকআপ ভ্যানে।

বিজ্ঞাপন

সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি শিল্লাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ার প্রায় ৯৮ শতাংশ কারখানা প্রথমে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এজন্য ট্রাকে বা পিকআপ ভ্যানে, যে যেভাবে পেরেছেন, সেভাবেই ৪ ও ৫ এপ্রিল গ্রাম থেকে আসেন শ্রমিকরা। কিন্তু কারখানায় এসে দেখেন, নতুন করে ছুটি ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ফলে আবার গ্রামে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। তাই আবার তাদের পিকআপ ভ্যানে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। উদ্দেশ্য, গ্রামে ফেরা। তাদের এমন যাতায়াত চিন্তিত করে তুলেছে আগে থেকে সাভারে অবস্থান করা শ্রমিকদের।

 বাড়ি ফিরতে পিকআপ ভ্যানে উঠেছেন কয়েকজন শ্রমিক, ছবি: বার্তা২৪.কম

রোববার (৫ এপ্রিল) দুপুরে সাভারের বিভিন্ন মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, পিকআপ ভ্যানে বোঝাই হচ্ছেন শ্রমিকরা। কারখানা বন্ধের সময়সীমা বাড়ানোর কারণে তারা আবার গ্রামে ফেরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পিকআপ ও ট্রাকই তাদের বাহন। প্রশাসনের চাপ না থাকলে আবার তারা সহজেই পৌঁছে যাবেন গ্রামে। এ রকম চলতে থাকলে করোনাভাইরাস ছড়ানোর রাস্তা প্রশস্ত হবে বলে মনে করছে সচেতন মহল।

বিজ্ঞাপন

গ্রামে যাওয়ার জন্য পিকআপ ভ্যানে উঠেছেন জোবায়দুল। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমাকে কারখানার এক শ্রমিক ফোন দিয়ে বলেছেন যে কারখানা খোলার দিন উপস্থিত না থাকলে চাকরি থাকবে না। তাই টাকা ধার করে বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রথমে হেঁটে তারপর পিকআপ ভ্যানে করে সাভারে এসেছি। আর এসে শুনি আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ। এ কয়দিন কি খাব, তাই আবার বাড়ির পথে রওনা হলাম।

আরেক শ্রমিক ফরহাদ বলেন, আমরা এখনো বেতন পাইনি, গত মাসের বেতনের কিছু টাকা ছিল, তাই নিয়ে গ্রামে গিয়েছিলাম। আসার সময় কষ্টে এসেছি। কারখানা খোলা ও বেতন পাওয়ার কথা শুনে ঢাকায় এসেছিলাম। বেতন তো দূরের কথা, কারখানাই খোলেনি কর্তৃপক্ষ। শুধু আগের নোটিশের জায়গায় নতুন নোটিশ টানিয়ে দিয়েছে। এ নোটিশ যদি এক দিন আগে টানালে আমাদের এ কষ্ট হতো না। তারা আমাদের এ কষ্ট থেকে বাঁচাতে পারত। কিন্তু তারা সেটা করেনি।

সাভারের নবীনগর এলাকার ট্যাক্সিচালক হামিদের সাথে কথা হলে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, এখানে পিকআপ ভ্যানে উঠে লাভ নেই, কোনো দিকে প্রশাসন যেতে দিচ্ছে না, আমি নিজে যাত্রী নিয়ে ধামরাইয়ের ঢুলিভিটা থেকে ঘুরে এসেছি। ঢুলিভিটা পাড় হতে দিচ্ছে না।

পিকআপ ভ্যানচালক আলামিন বলেন, গতকাল থেকে ঘরে খাবার কিছু নাই। চার মাস বয়সী বাচ্চা আছে, যার দুধের টাকা পর্যন্ত নেই। আজ জেল দিলেও গাড়ি নিয়ে যাইতে হইব। হয় যাইতে দিব, না হলে সংসার খরচের টাকা দিব। একটা ট্রিপ মারতে পারলেই পাঁচ দিন আর গাড়ি নিয়ে বের হমু না।

আশুলিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি লায়ন মো. ইমাম বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, সেদিক থেকে বাংলাদেশে খুব কম ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। কঠোর ব্যবস্থা ও ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচারণার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। তবে সামাজিক দূরুত্বের গুরুত্ব না দিয়ে যেভাবে শিল্পাঞ্চল সাভারের শ্রমিকরা গাদাগাদি করে পিকআপ ভ্যান ও ট্রাকে বিভিন্ন জেলায় অবাধে যাতায়াত করছেন, তাতে করোনার সংক্রমণ কতোটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তা শুধু দেখার অপেক্ষা।

 বাড়ি ফিরতে পিকআপ ভ্যানে উঠেছেন কয়েকজন শ্রমিক, ছবি: বার্তা২৪.কম

এ ব্যাপারে পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, অনেক শ্রমিক বাড়ি যাওয়ার জন্য আবার পিকআপ ভ্যানে উঠেছেন। এসব শ্রমিকের জন্য সাভারের সব শ্রমিক ভোগান্তিতে পড়বে।

তাদের গ্রামে না গিয়ে নিজ নিজ বাসায় অবস্থান নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।

এ ব্যাপারে ধামরাই থানার পুলিশ পরিদর্শক দীপক চন্দ্র সাহা বার্তা২৪.কমকে বলেন, যেহেতু গণপরিবহন বন্ধ, তাই কোনো গণপরিবহন ও পিকআপ ভ্যান বা ট্রাকে যাত্রী বহন করলে, তা আটকানো হচ্ছে। এগুলোকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। নবীনগর-আরিচা মহাসড়কে কোনো রকম যাত্রী বহনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।

উল্লেখ্য, রোববার দেশের সব প্রতিষ্ঠানের সাধারণ ছুটি ১১ এপ্রিল থেকে বাড়িয়ে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে।