লকডাউনেও সাভারে রড-সিমেন্টের দোকান খোলা
ভোরের আলো ফোটার আগেই কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছে সাভারের রড সিমেন্টের দোকানগুলো। অঘোষিত লকডাউনের মধ্যেই চুটিয়ে ব্যবসা করছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম থেকে টনকে টন রড আসছে। সেই রড মেপে ক্রেতাদের কাছে তুলে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
কেবল রডই নয়, ইট, সিমেন্ট, টিন, লোহালক্কর এমনকি টাইলসসহ বহু পণ্যের দোকানও খোলা রয়েছে সাভারে।
সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে রেডিও কলোনি সংলগ্ন এলাকাগুলোতে সোমবার (৬ এপ্রিল) সকালের চিত্র ছিল এটি।
বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় সেনাবাহিনীর টহল, পুলিশের তৎপরতা সর্বোপরি সরকারি নিষেধাজ্ঞা, সবকিছু উপেক্ষা করেই এক রকম বিনা বাধায় রমরমা ব্যবসা করে আসছেন একশ্রেণীর ব্যবসায়ীরা।
প্রকাশ্যে রড, সিমেন্ট, টাইলস বিক্রি করলেও অঘোষিত লকডাউনের অজুহাতে এসব পণ্যের দামও রাখছেন বাড়তি।
"বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরোর" মত প্রশাসনের "কঠোর অবস্থানের" কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, লকডাউন যেন আমাদের ওপরই এককভাবে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। সরকারি নির্দেশ মেনে আমরা যারা ঘরে রয়েছি, তাদের খোঁজ খবর কেউ নেয় না। অথচ যারা নিয়ম ভঙ্গ করে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন, তাদের বিষয়ে প্রশাসন একেবারে নিরব।
সম্প্রতি স্থানীয় প্রশাসন এক প্রজ্ঞাপন জারি করে চাল, ডাল, কাঁচামালের মতো জরুরি নিত্য পণ্যের দোকান সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখার আদেশ দেয়। সমালোচনার মুখে সেই সময়সীমা আরো দুই ঘণ্টা বাড়ানো হলেও লকডাউনের এ পরিস্থিতিতে রড সিমেন্টের ব্যবসা কি করে চলে?
প্রশাসনের পদক্ষেপ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
আমরা ঘরবন্দী জীবন যাপন করছি, আর অন্যরা চুটিয়ে ব্যবসা করবে, তা তো হতে পারে না। বেশ ক্ষোভের সঙ্গেই বলছিলেন শিমুলতলার বাসিন্দা আবদুস সবুর।
সকালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে ডগরমোড়া জালেশ্বর এলাকায় মেসার্স রাকিবুল স্টিল নামের লৌহজাত পণ্যের দোকানটির ব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো।
ওজন স্কেলে লৌহজাত পণ্য মাপা হচ্ছে। সেই পণ্য ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে খুচরা ক্রেতাদের কাছে। এ লকডাউনের মধ্যেও দোকান খোলা রেখেছেন? অন্যদের দেখাদেখি আমরা খোলা রেখেছি। সামনে গেলে দেখবেন বড় বড় সব দোকান খোলা। বেশ অকপটেই কথাগুলো বলছিলেন দোকানটির কর্ণধার মইনুল হক রতন।
মান্নান স্টিলে গিয়ে দেখা গেল ভিন্ন ব্যস্ততা। চট্টগ্রাম থেকে আসা ট্রাক থেকে টনকে টন লৌহজাত পণ্য খালাস করা হচ্ছে। অন্যদিকে তা পিকআপ ভ্যান ও ভ্যান গাড়িতে ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে ক্রেতাদের কাছে।
আবুল কালাম নামে একজন শ্রমিক জানান, এ পর্যন্ত প্রশাসনের কেউ তাদের বাধা দিতে আসেননি। ফজরের নামাজের পর থেকেই শুরু হয় তাদের ব্যস্ততা।
সকালে বিভিন্ন দোকানে দেখা গেছে এমন চিত্র। সাভার অন্ধ সংস্থা মার্কেট এলাকা থেকে টিন নিতে আসা ভ্যানচালক জানান, মহাজন তাকে পাঠিয়েছেন মাল নিতে। গ্রামে-গঞ্জেও দোকান খোলা রেখে ও নিয়মিত পণ্য বিক্রি চলছে বলে জানান তিনি।
একই অবস্থা দেখা গেল টাইলসের দোকানগুলোতেও। সেখানেও একটি পিকআপ ভ্যানে শ্রমিকরা টাইলস ডেলিভারি দিচ্ছিলেন।
মোবারক হোসেন নামে একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, জনসমাগম এড়িয়ে চলতে সরকার প্রধান যেখানে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও যেতে নিষেধ করেছেন, বাসায় নামাজ পড়তে অনুরোধ করছেন। সেখানে এ সমস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য খোলা রেখে কীভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে?
মহামারি নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে প্রথমে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। যা দুই দফায় বাড়িয়ে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে সরকারি এ নির্দেশনার তোয়াক্কা করছেন না সাভারে একশ্রেণীর ব্যবসায়ীরা। করোনাভাইরাস সংকটের মুখে সরকারি নির্দেশনা মেনে ব্যবসা বণিজ্য ও দোকানপাট খোলা রেখে তারা স্বাস্থ্য ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলেছেন বলেও মনে করছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, প্রশাসন খেটে খাওয়া মানুষদের বাড়িতে বাড়িতে ত্রাণ পৌঁছে দেবে? না কি এদের পেছনে তদারকিতে সময় দেবে? মানুষ যেখানে শঙ্কিত। সরকার যেখানে মানুষকে ঘরে থাকার আহ্বান জানাচ্ছে, সামাজিক বিচ্ছিন্নতাও ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে, সেখানে কি করে তারা দোকানপাট খোলা রাখতে পারেন, তা আমাদের মাথায় ঢোকে না।
আসলে এসব ব্যবসায়ীর চিন্তাটাই হলো আরো বেশি টাকা কামানো। দেশ, সমাজের কি হলো সে চিন্তা-ভাবনা কখনই তারা করেন না। তাই স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে রড সিমেন্টের মত দোকান খোলা রেখেছেন।
আফসোস ঝরে ওই কর্মকর্তা কণ্ঠে।