কৃষি পণ্যবাহী পরিবহন সংকটে দিশেহারা কৃষকরা

  • ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বন্ধ কৃষি পণ্যবাহী পরিবহন, ছবি: বার্তা২৪.কম

বন্ধ কৃষি পণ্যবাহী পরিবহন, ছবি: বার্তা২৪.কম

করোনার প্রাদুর্ভাবে সড়কে সীমিত রয়েছে যান চলাচল। পরিবহন সেক্টরে মালিক-চালক ও শ্রমিকরা রয়েছেন নিরাপদ দূরত্বে। এতে করে চাহিদা অনুযায়ী পরিবহন সেবা পাচ্ছেন না কৃষকরা।

কৃষি পণ্যবাহী পরিবহন সংকটে এখন দিশেহারা সবজি উৎপাদন নির্ভর রংপুর অঞ্চল। এখানকার কৃষকরা মাঠ ভরা সবজি নিয়ে চিন্তিত। গত এক সপ্তাহে শুধু পরিবহন সংকটের কারণে কয়েক লক্ষাধিক টাকার সবজি নষ্ট হয়েছে মাঠেই।

বিজ্ঞাপন

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রতি মৌসুমে রংপুর অঞ্চলে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন হয়। এই অঞ্চল থেকে প্রতিদিন বেগুন, করলা, বরবটি, টমেটো, কপি, সিম, লাউ, মিষ্টি কুমড়াসহ নানান শাক-সবজি স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। এক্ষেত্রে কৃষি পণ্যবাহী ট্রাক ও পিকাপভ্যান, কাভার্ডভ্যান ব্যবহার করা হয়। কিন্তু করোনার প্রভাবে পরিবহন সংকটে কৃষকরা সবজি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

এদিকে রংপুরের সবজি উৎপাদন খ্যাত উপজেলা মিঠাপুকুরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় কৃষকরা ট্রাকসহ পণ্যবাহী অন্য পরিবহনগুলোর সংকটের কারণে কোথাও ঠিক মতো সবজি পাঠাতে পারছেন না। এমনকি স্থানীয় হাটে বাজারেও পণ্য সরবরাহ করতে ভ্যান, রিকশা বা অটো ছাড়া অন্য কোনো পরিবহন সুবিধা মিলছে না।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে দেখা গেছে, রংপুর জেলার হাট-বাজারগুলোতে আগের মতো সবজি কেনাবেচা নেই। নেই পাইকাররাও। নিজেরাই দোকান সাজিয়ে বসছেন অনেক কৃষক। তবে ক্রেতার অভাবে কম দামে সবজি বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।

কৃষি পণ্যবাহী পরিবহন বন্ধ
পরিবহন সংকটে কৃষকরা সবজি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন

রংপুর নগরীসহ জেলার বিভিন্ন স্ট্যান্ডে শত শত ট্রাক পড়ে আছে। এই করোনা পরিস্থিতিতে জরুরি সেবাসহ কৃষি পণ্যবাহী পরিবহন চালু রাখার কথা থাকলেও শুরু থেকেই বন্ধ রয়েছে বেশির ভাগ ট্রাকসহ পণ্যবাহী যানবাহন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকের লেনদেন, ড্রাইভার-হেলপার ও শ্রমিকরা না আসায় অধিকাংশ গাড়ির চাকা বন্ধ। তবে ট্রাক চালকরা জানান, আগে যেখানে ভাড়া ছিলো ২০ হাজার সেখানে এখন নেমে এসেছে ৮-১০ হাজার টাকায়। সেই সঙ্গে কাউকে জড়ো হতে দিচ্ছে না প্রশাসন। সে কারণেই ট্রাক চালানো বন্ধ রেখেছেন।

এদিকে মিঠাপুকুরের রানীপুকুর গ্রামের কৃষক বজলার, এনায়েত ও সুমন মিয়া জানান, গাড়ি চলাচল বন্ধ। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় মাল পাঠানো যাচ্ছে না। ট্রাক চালকরা করোনা ঝুঁকি নিয়ে কোথাও ভাড়ায় যেতে চায় না। একারণে কৃষি বিভাগ থেকে একটু সময় নিয়ে জমি থেকে ফসল তোলার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এতে তারা চরম বিপাকে পড়েছেন।

পরিবহন সংকটে কৃষকরা সবজি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন
মাঠেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অনেক সবজি

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় ৩৮ হাজার ৭শ’ ৩৬ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। যা এই মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ২৯ হেক্টর বেশি। এবছর রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সবজির আবাদ হয়েছে রংপুরে। কম আবাদ হয়েছে নীলফামারী জেলায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, যেহেতু এখনো ভরা মৌসুম আসেনি এখনো কম উৎপাদন হচ্ছে। আর এটি আসার আগে যদি দুর্যোগটি কেটে যায়, তাহলে কৃষকরা খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।