সত্যিই তো! আইয়ুব আলী খাবে কিভাবে?
ঘরে খাবার নেই, মাথায় হাজারো দুশ্চিন্তা! সারাদেশে নাকি ত্রাণ বিরতণ হচ্ছে কিন্তু তার কপালে একমুঠো ত্রাণ জোটেনি! স্ত্রী-সন্তানের মুখের দিকে চাইতে পারছেন না। মাঝে মাঝে ঘর থেকে বের হয়ে এদিক-ওদিক তাকান, কোথাও ত্রাণের গাড়ি আসে কিনা!
গত এক সপ্তাহে ধরে এমন অভাবে দিনাতিপাত করছেন আইয়ুব আলী। তার বাড়ি শেরপুর জেলার শ্রীহর্দি উপজেলার শৈল পার গ্রামে। রিকশাচালক আইয়ুব দিন এনে দিন খান। কিন্তু ১৫ দিন যাবত এক টাকাও উপার্জন নেই তার। ঘরের আনাচে-কানাচে যে দুই টাকা জমানো ছিল তাও শেষ!
নানা চেষ্টা করেও একটু খাবার যোগাড় করতে পারেননি। বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) বিকালে করোনার ভয় গ্রাহ্য করে ক্ষুধার জ্বালায় টিকতে না পেরে রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন আইয়ুব।
শেরপুরের শ্রীহর্দিতেও ইতিমধ্যে করোনা রোগী পাওয়া গেছে। ঘরের বাইরে বের হওয়া নিয়ে প্রশাসনের কড়াকড়ি চলছে। এলাকাবাসীও স্বেচ্ছা লকডাউন ঘোষণা করেছে। এমন পরিস্থিতিতে কড়া পুলিশি টহলে পড়েন আইয়ুব আলী। কিছু বুঝে উঠার আগেই উপর্যুপরি মারধরের শিকার হন তিনি। অনাহারী পেট আর দুর্বল শরীরে ঠিক কতটা মার খাওয়ার পর তিনি জ্ঞান হারান সেটা তার মনে নেই। তবে জ্ঞান ফেরার পর দেখেন স্ত্রীর কোলে আধ সোয়া হয়ে আছেন।
মাঝ বয়সী এই মানুষটির যখন জ্ঞান ফিরেছে তখন তার ঝাপসা দৃষ্টি পরিষ্কার হওয়ার আগেই শুনতে পান আতঙ্কিত স্ত্রীর বিলাপ। ক্ষুধার্ত স্ত্রীর গলা দিয়ে স্পষ্ট স্বর বের হচ্ছে না।
জানা যায়, গত চার দিনের এই অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে আইয়ুব আলী ও তার পরিবারের। পেটের ক্ষুধা সইতে না পেরে বের হয়েছিলেন, অনাহারী শরীরে এমন মারধর, উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই তার। তার উপর চিকিৎসা করানো, এ যেন আকাশ কুসুম। যার এক বেলা খাবারের ব্যবস্থা নেই ঘরে তার আবার চিকিৎসা।
এই পরিস্থিতিতে সরকারি হাসপাতালেও নিয়ে যেতে পারছেন না। লকডাউনে কেউ নেই যে সাহায্য নিয়ে পাশে দাঁড়াবে। এদিকে বড় সন্তান আছে তাদের, সেও জীবিকার তাগিদে ঢাকা থাকেন। তাই তারও কিছু করার নেই।
বিলাপ করতে থাকা আইয়ুব আলীর স্ত্রীর জিজ্ঞাসা, আমাগো দায়িত্ব নিবে কে? এই অবস্থায় আমরা খামু কি আর চিকিৎসাইবা করামু কেমনে?
সত্যিই তো করোনার মতো এই উভয় সংকটের দিনগুলোতে এমন হাজারো আইয়ুব আলী ও তার পরিবার খাবে কি? এত এত সাহায্যের হাত এখানে সেখানে কারো হাতই আইয়ুব আলীর কাছে পৌঁছাইনি। উল্টো পেটের টানে বের হয়ে হয়েছেন নিগ্রহের শিকার!