মাছের উৎপাদন বাড়াতে কাপ্তাই হ্রদে ফেলা হচ্ছে গাছের গুঁড়ি!
দেশের অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলাশয়ের মধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কম বৃষ্টিপাত, লেকের সঙ্গে সংযুক্ত নদীগুলোর নাব্যতা হ্রাস, লেকের পানির গভীরতা কমে দেশীয় প্রজাতির মাছ ইতোমধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন কর্তৃক কাপ্তাই হ্রদে নিয়মিত কার্পজাতীয় মাছের পোনা ছাড়া হলেও দিনদিন তার উৎপাদন কমে গেছে। পাশাপাশি ছোট মাছের পরিমাণ ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় হ্রদে কার্পজাতীয় মাছের উৎপাদন ৮৫ শতাংশ থেকে কমে বর্তমানে ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। হ্রদে ছোট মাছের আধিক্য থাকলে সেখানে খাদ্য সংকটে কার্পজাতীয় মাছের বৃদ্ধি কম হয়। তাই কাপ্তাই হ্রদের ছোট মাছের সংখ্যা দ্রুত কমানোর নির্দেশও দিয়েছে সংশ্লিষ্ট্য মৎস্য সম্পদ মন্ত্রণালয়।
এজন্য হ্রদে বিলুপ্ত প্রজাতির চিতল, রুই, মহাশোলসহ গভীর পানিতে থাকা মাছগুলোর প্রজনন বাড়াতে কাপ্তাই হ্রদের অভয়াশ্রমগুলোকে নতুন করে সংস্কার করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন বিএফডিসি রাঙামাটি কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ।
কাপ্তাই হ্রদের ৭টি অভয়াশ্রমকে মাছের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ও প্রজনন ক্ষেত্রগুলোতে সার্বক্ষণিক নজরদারির পাশাপাশি বাঁশ ও গাছের গুঁড়ি ফেলা শুরু হয়েছে।
বিএফডিসি রাঙামাটি কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক নৌবাহিনীর কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, কাপ্তাই হ্রদের বিশাল এলাকাকে পূর্ণাঙ্গ নজরদারিতে রাখা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই কাপ্তাই মূল তিনটি পয়েন্ট কাচালং নদীর মোহনা, ডিসি বাংলো ও বিএফডিসি অফিস সম্মুখের অভয়াশ্রমগুলোতে প্রাথমিক পর্যায়ে বাঁশের ঘেরাও দিয়ে মধ্যখানে গাছের ডালপালা ও গুঁড়ি ফেলা শুরু করেছি। এতে করে মাছের নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে ওঠার পাশাপাশি সঠিক সময়ে এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে মৎস্য প্রজনন হবে। এছাড়াও ইতিমধ্যেই কাপ্তাই হ্রদের সর্বত্রই হ্রদের তলদেশ থেকে যেকোনো ধরনের গাছের গুঁড়ি কাটা ও উপড়ে ফেলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা থেকে রাঙামাটির মৎস্য ব্যবসায় বিনিয়োগ করা কয়েকজন ব্যবসায়ী ও স্থানীয় সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডাররা জানিয়েছেন, সার্বিক ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় জনবল ও ইকুইপমেন্ট বৃদ্ধির মাধ্যমে আরো জোরালো কার্যক্রম গ্রহণের পাশাপাশি অবৈধ মৎস্য শিকারিদের বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করা, হ্রদে জেলের সংখ্যা আর বৃদ্ধি না করা, ইঞ্জিনচালিত নৌযান বৃদ্ধিরোধ করাসহ মাছের অভয়াশ্রম ও প্রজনন কেন্দ্রসমূহকে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করাসহ বিএফডিসির নিজস্ব হ্যাচারিতে উৎপাদিত রেণুর মাধ্যমে নির্দিষ্ট আকারের পোনা কাপ্তাই হ্রদে অবমুক্ত করতে পারলে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ এই হ্রদটিকে আমিষের ভাণ্ডারে পরিণত করা স্বল্পতম সময়েই সম্ভবপর হবে।