রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বরিশালের প্রায় ৮০ শতাংশ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) অচল হয়ে পড়েছে যার দাম কোটির টাকারও বেশি। অবশিষ্ট মেশিনগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। প্রয়োজনীয় জনবল ও অর্থ বরাদ্দের অভাবে এই মেশিনগুলো রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।
২০১৯ সালের ২৫ মে বরিশাল নির্বাচন অফিসে স্বয়ংক্রিয় ভোটগ্রহণের জন্য ২,২৬৮টি ইভিএম সরবরাহ করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠিতে আরও ২,৮১৯টি মেশিন পাঠানো হয়। প্রায় ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সংগ্রহ করা এই মেশিনগুলো শুরু থেকেই প্রত্যাশিত মানের ছিল না। কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সীমিত আকারে এসব ইভিএম ব্যবহৃত হয়। তবে নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার অভাব ও উপযুক্ত পরিবেশে সংরক্ষণের অভাবে মেশিনগুলো দ্রুত ত্রুটিপূর্ণ হয়ে যায়।
বরিশাল নির্বাচন অফিসের প্রোগ্রামার আসিফুর রহমান জানান, সর্বশেষ চেকিংয়ে ২,২৬৮টি মেশিনের মধ্যে মাত্র ১,১০০টির মতো সচল পাওয়া গেছে। বর্তমানে ঠিক কতগুলো মেশিন কার্যকর রয়েছে, সেটাও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না, কারণ নিয়মিত চেকিং বন্ধ রয়েছে।
একটি ইভিএম মেশিন সচল রাখতে ১১টি ইউনিট ঠিক থাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে,কন্ট্রোল ইউনিট,ব্যালট ইউনিট,মনিটর
কন্ট্রোল ব্যাটারি,মনিটর ব্যাটারি,পাওয়ার ক্যাবল,পাওয়ার অ্যাডাপ্টার,শট ও লং ক্যাবল
ইউএসবি ক্যাবল,প্লাস্টিক হার্ডবক্স। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি ৪০ দিন পরপর এই ইউনিটগুলো পরীক্ষা করা প্রয়োজন। কিন্তু গত ৮ মাসে বরিশালে এই পরীক্ষা হয়নি।
এ বিষয়ে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর আমিনুল ইসলাম বলেন, দক্ষ জনবলের অভাবে নিয়মিত চেকিং হচ্ছে না। এখন চেকিং করলেও খুব বেশি লাভ হচ্ছে না। মেশিনগুলোতে তারিখ ও সময় সেটিং করা যাচ্ছে না, ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার কাজ করছে না, আর মেশিন হ্যাং হয়ে গেলে ডিসপ্লে উল্টে যাচ্ছে।
জেলা নির্বাচন অফিস জানিয়েছে, বরিশালের বিভিন্ন নির্বাচন অফিসেও স্থানাভাবে মেশিন সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বাড়ি ভাড়া নিয়ে এগুলো কোনমতে গুদামে রাখা হচ্ছে, যার জন্য বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় হচ্ছে। তবুও মানসম্মতভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। একটি ইভিএম মেশিনের ওজন প্রায় ৩৯ কেজি, অথচ এগুলো বহনের জন্য কোন লোকবল নেই। ফলে চার্জ দিতে বা পরীক্ষা করতে গিয়েও সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে ইসি বরিশালের স্টোর কিপার সাজিবুর রহমান জানান, আমাদের নিজস্ব কোন সংরক্ষণাগার নেই। ভাড়া বাড়িতে মেশিনগুলো সংরক্ষণ করতে হচ্ছে, যা মানসম্মত নয়। ইভিএম চার্জ দিতে হলে নিচে নামাতে হয়, কিন্তু জনবলের অভাবে সেটা করা যাচ্ছে না। এমনকি গুদামের পরিচ্ছন্নতার জন্যও কেউ নেই। সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, আমাদের এসব মেশিনের রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণের বিষয়ে কোন প্রশিক্ষণ নেই।
বরিশাল জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা অহিদুজ্জামান মুন্সি বলেন, সর্বশেষ দেড় বছর আগে এই মেশিনগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু নিয়মিত ব্যবহার ও যথাযথ সংরক্ষণ ছাড়া ইভিএম কার্যকর রাখা সম্ভব নয়। আমরা চেষ্টা করছি মেশিনগুলো ভালো রাখতে, কিন্তু পারছি না।
আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, এই মেশিনগুলো কার্যকর রাখতে যথাযথ সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত জনবল এবং অর্থের দরকার। কিন্তু আমাদের কাছে কোন বাজেট নেই। এই ব্যয় রাজস্ব খাত থেকেও বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবুও নির্বাচন কমিশন যদি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা ও অর্থ বরাদ্দ দেয়, তাহলে এগুলো সংরক্ষণ করা সম্ভব হতে পারে। অন্যথায়, এসব মূল্যবান সরকারি সম্পদ একেবারেই অকেজো হয়ে যাবে।