আবারও কবজি কাটা চেয়ারম্যান ফয়েজ বাহিনীর তাণ্ডব

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপনডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অভিযুক্ত ফয়েজ, ছবি: সংগৃহীত

অভিযুক্ত ফয়েজ, ছবি: সংগৃহীত

করোনায় বিপর্যস্ত মানুষ। এরই মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার উজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বিতর্কিত চেয়ারম্যান ফয়েজ উদ্দিন ওরফে ফয়েজ বাহিনীর তাণ্ডব চলছে দুদিন ধরে। চার পরিবারের বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও গাছপালা কেটে সাবাড় করেই ক্ষান্ত হননি, মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) সকালে ফয়েজ অস্ত্র উঁচিয়ে নিজের সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী নিয়ে চার পরিবারের ১০ নারী-শিশু ও পুরুষকে ঘর থেকে বের করে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছেন। সেই সঙ্গে চার পরিবারের ঘর সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।

অসহায় পরিবারগুলো জীবন ও সহায় সম্বল রক্ষায় শিবগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশের সাহায্য মেলেনি। প্রাণ বাঁচাতে চার পরিবার অন্য এলাকায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। কবজি কাটা ফয়েজ নামে পরিচিত এই চেয়ারম্যান চাঁপাইনবাবগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকায় শীর্ষে থাকলেও থানা পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় বেপরোয়া হয়ে এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, উজিরপুর গ্রামের নিজের বাড়ি থেকে ইউপি কার্যালয় পর্যন্ত সহজে যাতায়াতের সুবিধার্থে ব্যক্তিগত সড়ক তৈরির জন্য নদী ভাঙ্গা উদ্বাস্তু পরিবারগুলোকে উচ্ছেদে ফয়েজ বাহিনী গত দুদিন ধরে এলাকায় তাণ্ডব চালাচ্ছে। এলাকায় ফয়েজের নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী রয়েছে। ফয়েজ বাহিনীর ভয়ে অসহায় পরিবারগুলো মঙ্গলবার দুপুরের পর অন্য এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। অভিযোগ পেয়ে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ এলাকায় গেলেও ফয়েজের সঙ্গে একান্ত আলাপ সেরে থানায় ফিরে গেছেন।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে উজিরপুর বালুঘাটের নিকটবর্তী পদ্মা বাঁধের নিচে রুবেল হোসেন (৩৪) নামের এক যুবকের দুই হাতের কবজি কেটে নিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠে ফয়েজ ও তার বাহিনী। রোমহর্ষক এই ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশের পর তোলপাড় হয় দেশজুড়ে। টনক নড়ে পুলিশের। পরদিন ফয়েজ ও তার বাহিনীর ৭ সদস্য গ্রেফতার হলেও দ্রুতই জামিনে ছাড়া পেয়ে এলাকায় ফিরে আসেন তারা। এরপর থেকে আবারো এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন ফয়েজ। রাজনৈতিক প্রশ্রয় ও থানা পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় ফয়েজ আবার বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে এলাকার ভুক্তভোগী মানুষদের অভিযোগ।

এদিকে অভিযোগে জানা গেছে, ফয়েজ নিজের বাড়ি থেকে উজিরপুর ইউপি কার্যালয় পর্যন্ত একটি নিজস্ব সড়ক তৈরির জন্য নদী ভাঙনে উদ্বাস্তু চারটি পরিবারকে উচ্ছেদে সোমবার নিজের ক্যাডার বাহিনী দিয়ে বাড়িগুলো ভাঙচুর, ঘরে ঘরে ঢুকে নারী শিশুদের ওপর নির্যাতন চালান। কেটে ফেলেন শতাধিক গাছ।

মঙ্গলবার সকালে ক্ষতিগ্রস্তরা প্রতিবাদ করলে ফয়েজ নিজেই অস্ত্র উঁচিয়ে তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে হযরত আলী, সাদেকুল ইসলাম, শাহালাল, ডালিম, মনোয়ারা বেগম, দিলরুবা খাতুন, ডলারসহ ১০ জনকে ঘর থেকে বের করে লাঠি ও বাঁশ দিয়ে নির্দয়ভাবে মারপিট শুরু করেন। ঘণ্টাব্যাপী ফয়েজ বাহিনীর তাণ্ডব চললেও কেউ সাহস করে বাধা দিতে এগিয়ে আসেননি। হামলায় আহত তিনজনকে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ফয়েজের ভয়ে হাসপাতালেও নিতে পারেনি আহতদের।

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কবজিকাটা ফয়েজ জেলার একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী পুলিশের তালিকায়। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতিও তিনি। তার নামে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অগ্নিসংযোগ, বিস্ফোরক, অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মোট ৭টি মামলা রয়েছে বিভিন্ন থানায়। তার রয়েছে সশস্ত্র মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের বিশাল সিন্ডিকেট। বিভিন্ন অভিযোগে এ পর্যন্ত চারবার গ্রেফতার হয়েছেন ফয়েজ।

সর্বশেষ গত ২০ সেপ্টেম্বর রুবেল নামের এক যুবকের দুই হাতের কবজি কেটে নেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় তাকে। তবে একমাসের মধ্যেই সে জামিনে বেরিয়ে আসেন। এলাকায় ফিরে আবারো তার সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনীকে নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেন।

উজিরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দুরুল হোদা বলেন, হেন অপরাধ নেই যা ফয়েজ করে না। পদ্মার বাঁধ দখল করে নিজস্ব চেম্বার বানিয়েছেন। সেখানে রাতভর চলে মাদক সেবন ও মাদক কেনাবেচা। সব সময় সশস্ত্র একটি ক্যাডার বাহিনী নিয়ে চলাচল করেন। এলাকায় যখন যা তার মনে লাগেই তাই করেন। কেউ বাধা দেওয়ার নেই। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিকার করারও কেউ নেই। ফয়েজ ও তার সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনীর বেপরোয়া কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কেন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয় না তা জানি না।

জানতে চাইলে শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুল আলম শাহ বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। দেখি কি ব্যবস্থা নেওয়া যায়। ভুক্তভোগী কেউ মামলা করতে চাইলে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অভিযোগের বিষয়ে ফয়েজ উদ্দিন ফয়েজের দাবি, এলাকায় জনগণের চলাচলের সুবিধার জন্য একটি রাস্তা করতে গিয়ে কয়েকজনের কয়েকটি বাড়ির কিছু অংশ ভাঙতে হয়েছে। তারা রাস্তা করতে বাধা প্রদান করছিলেন। তবে কাউকে মারধর করার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।