তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে!
ঢাকা: রাজধানীসহ সারাদেশের আত্মহত্যার ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। যাদের মধ্যে তরুণদের সংখ্যা বেশি। যারা দেশ ও জাতির কান্ডারি পতে পারতেন। সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, মূলত দীর্ঘদিন হতাশায় ভুগে তরুণরা এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আর মনোবিজ্ঞানীদের মতে, প্রযুক্তির প্রতি নির্ভরতা বাড়ায় তরুণরা সবার কাছে থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছে। এক পর্যায়ে তারা মানসিক চাপ সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জরিপ অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর গড়ে ১০ হাজার মানুষ এবং প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৮ জন আত্মহত্যা করেন। চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া এবং কাঙ্ক্ষিত ফল না হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাত জন কিশোর কিশোরী আত্মহত্যা করেছে এবং চেষ্টা করেছে আরও ১২ জন। সর্বশেষ প্রেমের সম্পর্ক মেনে না নেওয়ায় গত ১০ আগস্ট গলায় ফাঁস এবং ট্রেনের নিচে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী রোকনুজ্জামান ও মুমতাহিনা নামের দুই শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘অভিভাবকরা সন্তানের পড়ালেখা বা বন্ধু নির্বাচনের বিষয়ে বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন। সন্তানকে সামাজিক সম্মান রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। এমনকি ব্যর্থতার দায়ভারও সন্তানের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। ফলে সন্তানরা কাঙ্ক্ষিত ফল না করতে পারায় হতাশায় ভোগে। এক পর্যায়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। যা কোনো ভাবেই কাম্য নয়।’
তরুণদের আত্মহত্যার পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে সন্তানদের সাথে ব্যবহারে আরও বেশি সচেতন হওয়া জরুরী বলে মনে করেন তিনি।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগি অধ্যাপক জিনাত ডে লায়লা বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘অধিকাংশ আত্মহত্যার ঘটনা আবেগতাড়িত। এ কারণে তরুণ-তরুণীরা বেশি আত্মহত্যা করেন৷ প্রযুক্তিগত নির্ভরতা বাড়ায় তরুণরা একা হয়ে পড়ছে। তারা নানা রকম সমস্যা নিজে নিজে মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে। তাছাড়াও নানা সামাজিক চাপ নিতে না পেরে তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু তরুণরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বেশি সময় দিচ্ছে, তাই তাদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা ও অনুপ্রেরণামূলক গল্প প্রচার করতে হবে।’
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত দেশে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১৫৪টি। যার মধ্যে বখাটে যুবকদের উক্ত্যক্তের কারণে ১১ জন, প্রেমে প্রত্যাখ্যান হয়ে ২ জন এবং অন্যের প্ররোচণায় ১৫ জন আত্মহত্যা করেছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক মাহবুবা নাসরিন বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েরা নানারকম হতাশায় ভোগে। তাদেরকে রক্ষা করতে পরিবারকেই মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। তাহলেই এই সমস্যা থেকে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করা যাবে। এর জন্য পারিবারিক বন্ধনটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।