যেখানে ‘আশ্বাস’ পূরণের গল্প নেই!



রফিকুল ইসলাম মন্টু
একইসঙ্গে চলমান ভাঙন এবং ভাঙন প্রতিরোধ কার্যক্রম/ ছবি: বার্তা২৪.কম, র. ই. মন্টু

একইসঙ্গে চলমান ভাঙন এবং ভাঙন প্রতিরোধ কার্যক্রম/ ছবি: বার্তা২৪.কম, র. ই. মন্টু

  • Font increase
  • Font Decrease

এখানে নতুন ভোর আসে এক একটি নতুন দৃশ্যপট নিয়ে। প্রতিদিন জন্ম নেয় নতুন খবর। বদলায় মানচিত্র; সেই সঙ্গে মানুষের ছুটে চলা। যেন নিয়তি এমন নিয়মই করে দিয়েছেন। কোন পরিবারের শেষ অস্তিত্বটুকু হয়তো আগের দিন বিলীন হয়ে গেছে। কারোটা হয়তো অপেক্ষা করছে পরের দিনের জন্য। মানুষজন এক বুক আশা নিয়ে রাতে ঘুমোতে যায়; ভোরে হয়তো ভাঙন থামবে! কিন্তু না, থামে না। বরং বাড়ে। বিপদাপন্ন মানুষের জীবনের হাজারো গল্প এখানে তৈরি হয় প্রতিনিয়ত; তবে কখনোই তৈরি হয় না ‘আশ্বাস’ পূরণের গল্পটা।

লক্ষ্মীপুরের কমল নগরের মেঘনার তীরের লুধুয়া এলাকায় দাঁড়িয়েছিলাম। পুরানো সেই লুধুয়া যে কবে পানির তলায় ডুবেছে; তার হিসেব নেই কারো কাছে। তীরের মাটি কেবল লুধুয়া নামটিই বহন করছে। এই নাম ছুটছে ফসলের ক্ষেত, বাগানবাড়ি, বসতি এলাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবকিছু মাড়িয়ে। ফলকন, পাটারীহাট, মাতাব্বর হাট, সাহেবের হাট, বাত্তিরখাল, জগবন্ধু- এমন কত নাম যে নদীর তীর ধরে পেছনে ছুটছে; তার কোন পরিসংখ্যান নেই। জগবন্ধু গ্রাম এখনও আছে; তবে পিছিয়ে এসেছে বহু পথ। চার বছর আগে আমার চেনা জগবন্ধু গ্রামের চেহারার সঙ্গে এখনকার ছবির কোন মিল নেই। ল্যাপটপের ফাটো ফোল্ডার খুলে পুরানো ছবির সঙ্গে এখনকার ছবি মিলাই। না, কিছুই মিলছে না। সাহেববাড়ির লম্বা দরজার শেষ মাথায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব কবে হারিয়েছে! সেই সাহেবাড়ি, রাস্তাঘাট, স্কুল, বাজার, কিছুই নেই।

ভাঙনের এমন দৃশ্যের সাক্ষী কমল নগর/ ছবি: বার্তা২৪.কম, র. ই. মন্টু

দক্ষিণা হাওয়ার তোড়। নদীতে প্রবল স্রোত। দ্বি-প্রহরে ভাঙন পাড়ে দাঁড়িয়ে কয়েকজন। কিছু বলতে এগিয়ে এলেন তোফায়েল আহমেদ। বয়স সত্তর ছুঁয়েছে। কেমন আছেন? জানতে চাইলে কষ্ট জড়ানো, হৃদয় ভাঙা উত্তর আসে- ‘একটা পশু জবাই করে ছেড়ে দিলে যে অবস্থায় থাকে, আমরা এখন ঠিক সেভাবেই আছি। এর চেয়ে এতটুকু কম নয়। স্যার আপনি বিশ্বাস করেন, এতটুকু বাড়িয়ে বলছি না।’ কথাগুলো বলতে গিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন। বললেন, ‘৮-৯ বছর ধরে এই ভাঙনের কান্না। সব হারাইছি। বাপের কাইল্যা ভিটা, জমিজমা, বাপ-দাদা-মায়ের কবরস্থান কিছুই নাই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের খবরটা পৌঁছাবেন। আমাদের ভাঙন রোধ না হলে যেটুকু আছে, তাও হারাবো; আর্জি তোফায়েলের।’

পাশে দাঁড়ানো আরেক প্রবীণ বাসিন্দা মো. সাদেক। ফলকন উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক। ডান হাতে তর্জনী তুলে নদীর মাঝখানে তার সেই স্কুলটির সীমানা টেনে বোঝানোর চেষ্টা করেন- ওইখানে ছিল বিদ্যালয়টি। তোফায়েল আহমেদের আর্জির সঙ্গে তারও একই সুর- স্থায়ী বাঁধ না হলে কোনভাবে এই জনপদ রক্ষা করা যাবে না। আমরা অনেক আশ্বাস শুনেছি। কিন্তু কোন আশ্বাস পূরণ হয়নি। বর্ষায় যখন ভাঙন বাড়ে; তখন জরুরি সহায়তার সঙ্গে আশ্বাসও আসে- ‘এই তো! শুকনো মৌসুমেই কাজ শুরু হয়ে যাবে!’ কিন্তু কোন কাজই আর হয়না। আবার ভাঙন শুরু হলে জরুরি ভাঙন রোধের কাজ। এভাবেই চলে আসছে কয়েক বছর। অথচ এই এলাকার কোন স্থান থেকে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার, কোন এলাকা থেকে ৬ কিলোমিটার অথবা কোন এলাকা থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে নদী ছিল।

ভাঙনের ধ্বংসস্তূপ থেকে কিছু মালামাল সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা/ ছবি: বার্তা২৪.কম, র. ই. মন্টু

আবারও এসেছে আশ্বাসের মৌসুম; বর্ষাকাল। নদীতে বাড়ছে স্রোতের তোড়; সেই সঙ্গে ভাঙ্গন। মানুষের মাঝে বাড়িঘর স্থানান্তরের ব্যস্ততাও বেড়েছে। ফলকনের বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন বলছিলেন, মানুষগুলো এখন খুব কষ্ট করে দিন যাপন করছে। থাকার জায়গা নেই। কোনমতে দুই চালা দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। কমল নগরের এই এলাকায় নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরে। আগে প্রচুর পরিমাণে ফসলি জমি ছিল। মানুষ ততটা উদ্বিগ্ন হয়নি। কিন্তু দিনে দিনে ভাঙনের মাত্রা বাড়ার কারণে এলাকার মানুষজন নি:স্ব হয়ে গেছে। বাড়ি বদল করা তাদের জন্য খুবই কঠিন হয়ে পড়ছে। ভাঙনে একের পর এক বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, মসজিদ, মক্তব, স্কুল, মাদরাসা, বাজারসহ অনেক স্থাপনা। আমিন উদ্দিন হাওলাদার বাড়ি, মীর বাড়ি, পাটারী বাড়ি, জেবল হক ডাক্তার বাড়িসহ অনেক বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। পালোয়ান বাড়ি, ছাদেক মাষ্টার বাড়ি, মীর বাড়ির শেষাংশ, ফকির বাড়ি, বকশী বাড়িসহ কয়েকটি বাড়ি এখন হুমকির মুখে। ফলকন ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের সন্নিকটে ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড এলাকায় চলমান বাজেটে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার জোরালো দাবি জানাই।

ফলকন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দোতলা ভবনটি নদীতে হারানোর দৃশ্য আমার ক্যামেরায়। এলাকার হাজারো মানুষ অবাক বিস্ময়ে দেখলেন সে দৃশ্য। এই তো মাস ছয়েক আগের কথা! বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইকবাল বাহার চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না। বললেন, এই স্কুলে পড়েছি। আবার এই স্কুলেই পড়াচ্ছি। কত যে স্মৃতি এখানে জড়িয়ে তা বলে শেষ করা যাবে না। স্কুল ভবন চলে যাওয়ায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ায় মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। অনেক ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধই হয়ে গেছে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ফলকন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন হাজী বলছিলেন, ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে। ৭ নম্বর ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিলীন হওয়ার পথে। ৮ নম্বর ওয়ার্ডেও শুরু হয়েছে ভাঙন। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া আমরা এলাকা আর রক্ষা করতে পারবো না।

সেদিনও অবশিষ্ট ছিল মীর বাড়ির শেষ চিহ্নটুকু। এলাকার ঐতিহ্যবাহী এক পরিবার। অথচ এখন নি:স্ব সকলেই। মীর বাড়ির যুবক কামরুল হাসান মীরের সঙ্গে আলাপ হচ্ছিল। বললেন, আমাদের কিছুই অবশিষ্ট নেই এখন আর। মাত্র বছর দুয়েক আগেও বাবা কৃষি কাজ করতেন। শেষবার আবাদ করতে গিয়ে ৩০ হাজার টাকা লোকসান গুনেছেন। জমি যে টুকু ছিল; ফসল তেমন হতো না। পানি উঠলে আর নামতো না। ফলে আবাদ ছেড়ে দিয়েছি। আয় রোজগারের জন্য বাবাকে একখানা দোকান করে দিয়েছিলাম। সে দোকানটা যে কতবার বদলাতে হলো; হিসেব নেই। মীর বাড়ির ঘরের সামনে পাকা বেঞ্চি, পুকুর, সুপারি বাগান, বাড়ির লম্বা দরজা- কিছুই নেই এখন আর। বাড়ির শূন্য ভিটায় দাঁড়িয়ে আলাপ হলো আরেকজন সব হারানো মানুষের সঙ্গে। ওয়াজিউল্লাহ’র তার নাম। এক সময় তার বাড়ি ছিল কৃষ্ণপুর গ্রামে; এখান থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে। অন্তত ৪০ বছর আগে প্রায় কিশোর বয়সে বাপদাদার সঙ্গে ছিলেন ভোলার মদনপুর। পরে এসেছেন এই এলাকায়। এখন প্রায় সবই হারিয়েছেন। তার সেই সোনালী দিন আর নেই। নিজের ভরা যৌবন যেমন ফুরিয়েছে; তারই সঙ্গে তাল রেখেই যেন হারিয়েছেন সব সম্পদ। এই গল্পটা শুনতে শুনতে আমার মনে পড়ে যায় ভোলার কাচিয়ার ওয়াজিউল্লাহ’র কথা। তিনিও প্রায় নব্বই ছুঁয়েছেন। তাকে নিয়েও খবর করেছি। সব ওয়াজিউল্লাহরাই কী নদীর ভাঙনে সব হারিয়ে কষ্ট বুকে চেপে জীবনের শেষ দিনগুলোর পার করছেন?- প্রশ্ন জাগে।

রান্নার চুলো চির অবসরে/ ছবি: বার্তা২৪।কম, র. ই. মন্টু

কমল নগরের মেঘনার তীরে হাঁটলে পাওয়া যায় এমন হাজারো গল্প। যে গল্পের কোন শেষ নেই। বহুবার বাড়ি হারানোর পরেও মানুষগুলো নদীর মাঝে খুঁজে ফিরেন পুরানো মাটি। বাত্তিরখালের আবদুল কুদ্দুস বলছিলেন তার ৩১ বার বাড়ি বদলের গল্প। অনেক বড় বাড়ি, বিপুল কৃষি জমি থাকলেও এখন তার জীবিকা বাত্তিরখাল ঘাটে ছোট দোকানে। এমন সব হারানো মানুষের সংখ্যা গুনে শেষ হবে না। এলাকাবাসী বলছিলেন, মেঘনা যেন বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ২০০৬ সালের পরে। কমল নগর উপজেলা গঠনের আগেই এ জনপদের ১৭০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা মেঘনায় বিলীন হয়। ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য আর ১০ কিলোমিটার প্রস্থের এলাকা এরই মধ্যে বিলীন। ১৩ বছরে মেঘনা নদী পূর্বে সরে এসেছে প্রায় ১৪ কিলোমিটার। এই সময়ে উপজেলার ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষের মধ্যে ৭৩ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বসতি হারিয়েছেন প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। ভাঙন কবলিত এলাকার অধিকাংশ মানুষ স্থানান্তর করেছেন ৭-১০বার। কমল নগর উপজেলার ৪৬ দশমিক ৮২ ভাগ এলাকা সরাসরি ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৯টি ইউনিয়নের মোট আয়তন ছিল ৩১৪ দশমিক ৮৬০ বর্গ কিলোমিটার। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা পায়নি কোন পুনর্বাসন সহায়তা। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় কিছু মানুষকে সামান্য সহায়তা করা হলেও তা একেবারেই নগণ্য। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্ষতিগ্রস্তরা নিজেদের চেষ্টায় ধারদেনা করে বাড়ি স্থানান্তর করেছেন। অনেকে নিরুপায় হয়ে এলাকা ছেড়ে শহরের পথে পা রেখেছেন।

কমল নগরের বিপন্ন এলাকায় সরকারের নজর ফেরাতে চেষ্টা হয়েছে অনেক। দাবি-দাওয়া কম ওঠেনি। নদীর ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে নদীর তীরে ব্যতিক্রমী মানববন্ধনের আয়োজন করেছিল রামগতি-কমল নগর বাঁচাও মঞ্চ নামের নাগরিক সংগঠন। এতে অংশ নেয় এলাকার হাজার হাজার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। এ ছাড়াও সভা সমাবেশের মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনার লক্ষ্যে নদীর তীরে অনেকবার আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ মোনাজাত। একবার এলাকার মানুষ নিজেরাই চাঁদা তুলে ভাঙন রোধের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু ভাঙন রোধ হয়নি কিছুতেই।

ভাঙন তীরে এভাবেই পড়ে থাকে শূন্য ভিটে/ ছবি: বার্তা২৪.কম র. ই. মন্টু

রামগতি-কমল নগর বাঁচাও মঞ্চের আহবায়ক অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার পালোয়ান, জনসাধারণের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে সরকারের শীর্ষ মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা অব্যাহত আছে। আমরা মনে করি, একটি উপজেলা জনপদের অস্তিত্বের কথা বিবেচনায় রেখে সরকার এদিকে দৃষ্টি দিবে। ভাঙন রোধ করতে না পারলে কমল নগর উপজেলার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। ব্লক ফেলে শক্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণের মধ্যদিয়েই রামগতি-কমল নগরকে বাঁচানো সম্ভব। আশাকরি সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল সেদিকে নজর দিবেন। এখন আর সময় নেই। এই অঞ্চলের মানুষের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে।

মাত্র ছ’য়েক আগে কমল নগরের ভাঙ্গন তীরে কথা হয়েছিল লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের সঙ্গে। ভাঙন কবলিত এলাকায় জরুরি ভাঙন প্রতিরোধ কার্যক্রম দেখতে এলে তাকে প্রশ্ন করেছিলাম, এই এলাকার মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কবে হবে স্থায়ী বাঁধ? এলাকার শত শত মানুষের সামনে তিনি তখন জানিয়েছিলেন, ভাঙন রোধে জরুরি কাজ চলমান। বিগত সাত মাস ধরে আমরা রামগতি-কমল নগরের ৩২ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প (ডিপিপি) তৈরি করেছি। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭০০ কোটি টাকা। ডিসেম্বরের (২০১৯) মধ্যেই প্রকল্প অনুমোদন হবে বলে আশা রাখছি।

উনিশের ডিসেম্বর চলে গেছে অনেক আগেই। চলে গেছে শুকনো মৌসুমও। এখন পর্যন্ত কোন সুখবর নেই। পাওয়া যায়নি প্রকল্প অনুমোদনের খবর। বর্ষা আসার সঙ্গে সঙ্গে আবার শুরু হয়েছে জরুরি কাজের তোড়জোড়। আবার হয়তো আসবে আশ্বাস! এমন আশ্বাস বহুবার শুনেছেন কমল নগরের মানুষ। এই হবে, এই হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু হয় না। আশ্বাসে আশ্বাসে কেটে যাচ্ছে বছরের পর বছর। মেঘনার জলস্রোতে আছে প্রবল তোড়, আছে দক্ষিণা বাতাস, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত, পাখির ডাক, ভোরের আজানের ধ্বনি- সবই আছে। এখানে শুধু ‘আশ্বাস’ পূরণের গল্পটাই নেই।

রফিকুল ইসলাম মন্টু, উপকূল-অনুসন্ধানী সাংবাদিক

   

বর্জ্যবাহী গাড়ির ধাক্কায় নিহতের ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: তাপস



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪. কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

মুগদায় করপোরেশনের বর্জ্যবাহী গাড়ির ধাক্কায় নিহত স্কুল শিক্ষার্থী মাহিন আহমেদের পরিবারের পাশে থাকার এবং এ দুর্ঘটনায় দোষী সকলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস মাহিন আহমেদের পরিবারকে সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানাতে নিহতের বাড়িতে যান। পরে তিনি গণমাধ্যমের সাথে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন।

ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, গতকাল রাত আনুমানিক নয়টার সময় মুগদার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র হতে বর্জ্য স্থানান্তরকালে করপোরেশনের বর্জ্যবাহী গাড়িতে দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে ছোট্ট বালক মাহিন নিহত হয়। এ দুর্ঘটনায় আমরা অত্যন্ত শোকাহত। আমরা জানাজায় অংশগ্রহণ করেছি। ছোট্ট শিশু হারানোর ঘটনায় বাবা-মাকে কোন ভাষাতেই সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমাদের নেই। আমরা নিহতের পরিবারের পাশে থাকব।

এ দুর্ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা হবে জানিয়ে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, এ দুর্ঘটনায় ইতোমধ্যে মামলা নেওয়া হয়েছে। আমরা কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তি চাইছি। এই দুর্ঘটনায় যেন সম্পূর্ণ সুষ্ঠু বিচার হয় সেটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, আমাদের নির্ধারিত গাড়িচালক গাড়ি না চালিয়ে অন্যকে দিয়ে ভাড়া খাটিয়ে গাড়িটি চালানো হচ্ছিল। আমরা এ ধরনের অনিয়ম কোনভাবে বরদাশত করবো না। এ ঘটনায় কঠোরতর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ রকম কার্যক্রমে যারা জড়িত তাদের সকলের বিরুদ্ধে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কঠোর ব্যবস্থা নেবে। এ ধরনের ঘটনায় আগেও আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। জড়িতদের চাকুরিচ্যুত করেছি, ছাটাই করেছি। আবার অনেক নতুন নিয়মিত গাড়িচালক নিয়োগ দিয়েছি। ফলে বিগত ২ বছর করপোরেশনের গাড়ি দ্বারা কোনো রকম দুর্ঘটনা ঘটেনি। গতকালের এই অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা আমাদেরকে অত্যন্ত শোকাহত করে তুলেছে। এবারও আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিবো। যাতে করে এ ধরনের দুর্ঘটনার আর কোনো পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, পরিবহন মহাব্যবস্থাপক মো. হায়দর আলী, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসিম আহমেদ, অঞ্চল-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম, স্থানীয় ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সিরাজুল ইসলাম ভাট্টি, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর মাকসুদা শমশের প্রমুখসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

;

৯ মে পর্যন্ত চুয়েট বন্ধ ঘোষণা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
৯ মে পর্যন্ত চুয়েট বন্ধ ঘোষণা

৯ মে পর্যন্ত চুয়েট বন্ধ ঘোষণা

  • Font increase
  • Font Decrease

সড়ক দুর্ঘটনায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে আগামী ৯ মে পর্যন্ত সকল পরীক্ষা ও একাডেকিম কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে তিনটায় শুরু হওয়া জরুরি সিন্ডিকেট সভায় শেষে সন্ধ্যা ৭টার দিকে এক ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরুরি সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা আগামী ৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে এবং ১২ মে থেকে যথারীতি চালু হবে।

এতে আরও বলা হয়, গতকাল (বৃহস্পতিবার) শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের বিষয়টি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট না করার শর্তে হলে অবস্থান করতে পারবে শিক্ষার্থীরা।

বিষয়টি বার্তা২৪.কমকে নিশ্চিত করেছেন চুয়েটের সহকারী রেজিস্ট্রার (সমন্বয়) মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, আগামী ৯ মে পর্যন্ত সকল পরীক্ষা ও একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকব। ১২ মে থেকে যথারীতি ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হবে। দুইজন মেধাবী ছাত্রের অকাল মৃত্যুতে উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

যদিও বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রোর (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের সই করা চিঠিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক/স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সকল একাডেমিক কার্যক্রম (পরীক্ষাসহ) বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে এদিন রাতে প্রশাসনের সাথে বৈঠক শেষে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করে।

এর আগে, গত সোমবার মোটরসাইকেলে ঘুরতে বের হয়ে বাসের ধাক্কায় প্রাণ হারান চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের দুই শিক্ষার্থী। ওইদিন আনুমানিক বেলা সাড়ে তিনটায় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার জিয়ানগরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘটনাস্থলে মারা যান চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা এবং গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তৌফিক হোসাইন। এ ছাড়া গুরুতর আহত হন পুরকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাকারিয়া হিমু। এই ঘটনায় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে মাঠে নামেন। আন্দোলন চলার সময় শিক্ষার্থীরা বাসেও আগুন দেন।

;

চট্টগ্রামের আলোচিত সন্ত্রাসী সাইফুল বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড বগা গ্রেফতার



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার আলোচিত সন্ত্রাসী সাইফুল বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ডখ্যাত দেলোয়ার হোসেন ওরফে বগাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দিবাগত রাতে উপজেলার পশ্চিম আমিলাইশ এলাকা থেকে এই সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হয়।

বগার বিরুদ্ধে সাতকানিয়ার কাঞ্চনা গ্রামে ডাকাতি করতে গিয়ে শিশু হত্যা, অপহরণ, ইয়াবা, ছিনতাই, ডাকাতি ও সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের সময় সাতকানিয়ার সাবেক এমপির স্ত্রী-শ্যালকের ওপর হামলাসহ কমপক্ষে ১০টি মামলা রয়েছে।

বগাকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার। তিনি বলেন, ইয়াবা মামলায় বগাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সাতকানিয়া ও বাকলিয়া থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

৩ মাসে বগার নেতৃত্বে ২২ হামলা:

৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালিয়েছে সাইফুল বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড বগা। গত তিনমাসে সাতকানিয়ার চরতি-আমিলাইশ এলাকায় অন্তত ২২টি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে এই সাইফুল বাহিনী। এরমধ্যে কমপক্ষে ১০টি ঘটনায় থানায় অভিযোগ জমা পড়েছে এই বাহিনীর বিরুদ্ধে। বাকিরা ভয়ে মুখ খোলেননি।

নতুন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর উপজেলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে যেতেই নির্বাচনের দিন সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় সাইফুল বাহিনীর অত্যাচার। দক্ষিণ চরতিতে নৌকার সমর্থকদের বাড়ি-ঘর ও দোকানে হামলা ও লুটপাট চালায় সাইফুল বাহিনী। এ সময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য ইলিয়াছ শাহীনের ফার্মাসি ও কৃষক লীগ নেতা ফারুকের বাড়ি ও ডেকোরেশনের দোকানে লুটপাট ও ভাঙচুর চালানো হয়।

নির্বাচনের পরের দিন সোমবার খতিরহাট এলাকায় নৌকা সমর্থক জিল্লুর রহমানকেও মারধর করে সাইফুল বাহিনী। নির্বাচনের আগের দিন শনিবার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার নুরুল আমিন কে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেয় সন্ত্রাসী সাইফুলের বড় ভাই জসিম উদ্দিন।

এছাড়া নির্বাচনের পর ৫ ফেব্রুয়ারি চরতি ইউনিয়ন পরিষদ কার্য়ালয়ে ঢুকে বর্তমান চেয়ারম্যান রুহুল্লাহ চৌধুরীকে মারধর করে সাইফুল বাহিনী। পরে দক্ষিণ চরতি এলাকার ডিশ ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে পরিবারসহ বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে সাইফুল বাহিনী। নির্বাচনের পর থেকে এখনো ঘর ছাড়া নুর মোহাম্মদের পরিবার। চরতি ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি মাইনুদ্দিনকে অপহরণ করে মারধর দক্ষিণ চরতির আরাফাত সিকদারকে মারধর করে এই সাইফুল বাহিনী।

নির্বাচনের আগে ২১ ডিসেম্বর দক্ষিণ চরতি কাটাখালী ব্রিজের পাশে নৌকার পথ সভায় অস্ত্র ও লাঠি-সোটা নিয়ে হামলা চালায় সাইফুল ও তার বাহিনী। এই সময় নৌকা সমর্থক চরতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রুহুল্লাহ চৌধুরী, সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান, মিছদাকুল বেসারত চৌধুরী, মোহাম্মদ রফিক, রবিউল ইসলাম ও মোহাম্মদ ফয়সালসহ কমপক্ষে ৮-১০ জন আহত হন।

এর দুইদিন আগে ১৯ ডিসেম্বরও নৌকার পথসভা শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য ইলিয়াছ শাহীনকে মারধর করে সাইফুল বাহিনী। ওইদিনও ইলিয়াছ শাহীনের ফার্মাসি ও কৃষক লীগ নেতা ফারুককে বাড়ি-দোকানে হামলার ঘটনা ঘটে। নির্বাচনের আগে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি নুর হোসেন কেও মারধর করে সাইফুল। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এমন কোনো দিন নেই যে- সন্ত্রাসী সাইফুল ও তার বাহিনী দ্বারা এলাকার মানুষের উপর হামলার ঘটনা ঘটছে।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সন্ত্রাসী সাইফুল কোনো পদ পদবিতে না থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের পরিচয়ে এলাকায় সন্ত্রাসী কার্য়াক্রম চালিয়ে আসছেন। এতদিন পর্যন্ত সাবেক এমপি আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর অনুসারী হিসেবে এলাকায় তার পরিচিতি ছিল। গত বছর প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচনকে ঘিরে ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হলে তখন থেকে এম এ মোতালেবের দিকে ভিড়েন সাইফুল মেম্বার। মোতালেব দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলে তারপর থেকে আরো হিংস্র হয়ে উঠেন তিনি।

এর আগে ২০১৮ সালে সন্ত্রাসী সাইফুল বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ভিটে-মাটি ছেড়ে যায় দক্ষিণ চরতির ১০ পরিবার। নারী ও শিশুসহ এসব পরিবারের প্রায় অর্ধ শতাধিক লোকজন দীর্ঘ এক বছর নিজেদের ভিটে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর উদ্ভাস্তুর মতো দিনযাপন করে। বাড়ি-ভিটে ফিরে পেতে ২০১৯ সালের ২৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করেন উদ্ভাস্তু পরিবারসহ এলাকার বিক্ষুব্ধ লোকজন।

সাইফুল বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ডার হিসেবে এসব মারধর ও হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দিচ্ছে ইয়াবা ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন (বগা)। ইতোমধ্যে দুই-তিন বার জেলেও গিয়েছে এই ইয়াবা ব্যবসায়ী। সাতকানিয়ার পশ্চিম অঞ্চল (চরতি, আমিলাইশ, কাঞ্চনা, এওচিয়া ও নলুয়া) সহ চন্দনাইশের বৈলতলী, আনোয়ারার হাইলধর ও বাঁশখালীর পুকুরিয়া অঞ্চলের অস্ত্র ও ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করে সাইফুল ও তার বাহিনী। এছাড়া রয়েছে খাল ও সাঙ্গু নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন ও পাহাড় কেটে মাটি ব্যবসা।

সাইফুল বাহিনীর অন্য সদস্যদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার।

 

;

সিন্ডিকেট করে অনিয়ম দুর্নীতি

টেন্ডার নিয়ন্ত্রণসহ নানা অভিযোগ নির্বাহী প্রকৌশলী চুন্নুর বিরুদ্ধে



অভিজিত রায় কৌশিক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
টেন্ডার নিয়ন্ত্রণসহ নানা অভিযোগ নির্বাহী প্রকৌশলী চুন্নুর বিরুদ্ধে

টেন্ডার নিয়ন্ত্রণসহ নানা অভিযোগ নির্বাহী প্রকৌশলী চুন্নুর বিরুদ্ধে

  • Font increase
  • Font Decrease

সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গণপূর্ত অধিদফতরের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নুর বিরুদ্ধে।

সেই সঙ্গে নির্দিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে মোটা অংকের লেনদেনের মাধ্যমে সরকারি টেন্ডার ভাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ওপেন প্ল্যাটফর্মে টেন্ডার উন্মুক্ত করান। তারপর তাদের মাধ্যমে টেন্ডারের দরপত্রের আহ্বান করে আবেদন গ্রহণ করেন এই কর্মকর্তা। তাদের টেন্ডারের মাধ্যমে সরকারি কাজ পাইয়ে দিয়ে এর বিনিময়ে নিয়ে থাকেন মোটা অংকের অর্থ।

এছাড়াও রাজধানীর মিরপুর ডিভিশনের পূর্ত সার্কেলে আইভি বাংলো তৈরির সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে, এই নির্বাহী প্রকোশলী চুন্নুর বিরুদ্ধে।

অভিযোগ উঠেছে, ২০২২-২০২৪ অর্থবছরে মিরপুর পাইকপাড়া এলাকায় পিডব্লিউডি ট্রেনিং সেন্টারের পাশের অবস্থিত (রুম নম্বর ৭ ও ৮) এই দুটি রুমকে সংস্কার/ মেরামত ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে আইভি বাংলোতে রূপান্তরের কাজের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দকৃত অর্থে কাজ শেষ না করে কমিশন নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দকৃত অর্থ পাইয়ে দেন তিনি।

তবে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে এসব বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আর এই তদন্ত কমিটির চোখে ধুলো দিতে রাতের আঁধারে নামমাত্র নিম্নমানের কাজ করেন তিনি। একই সঙ্গে নানান ক্ষেত্রে দুর্নীতি, নিয়োগ, বদলি, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, কমিশনের বিনিময়ে কাজ ভাগিয়ে নেওয়া, কাজ না করে বিল উত্তোলন করাসহ নানান অনিয়মের অভিযোগ গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নুর বিরুদ্ধে।

এর আগে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইভি বাংলো তৈরির নামে প্রতারণার মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মুহাম্মদ সোহেল হাসানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, এসব অভিযোগের বিষয়ে সঠিক তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে। গত বছরের আগস্ট মাসে এই তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে গণপূর্ত বিভাগ-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগের অভাব থাকে না। এটা নতুন কিছু না। আপনি আরিফের নম্বর নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন। তার কাছে সব তথ্য উপাত্ত দেওয়া আছে।

আরিফকে ফোন করে তার কর্মস্থলের পদমর্যাদা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, নির্বাহী প্রকৌশলীর পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট (পিএ) হিসেবে আছেন।

এরপর নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নুর দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘স্যার আপনাকে কী বলেছেন, সেটা তো আমি জানি না। আমি একটু স্যারের সঙ্গে কথা বলে রবিবার আপনাকে ফোন দিবো’।

সেলফোনে কথা বলে জানাতে বলা হলে তিনি বলেন, ‘এখন তো আমি আমার নিজের কাজে একটু সচিবালয়ে আছি। এখন সম্ভব না’।

এসব দুর্নীতির অভিযোগে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে পাওয়া তথ্যের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয়, তদন্তের দায়িত্বে থাকা গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মুহাম্মদ সোহেল হাসানের সঙ্গে। 

সোহেল হাসান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এটা বেশ কিছুদিন আগের কথা। আসলে তদন্ত কমিটি না। প্রাথমিক তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছিল আমাকে’।

তিনি বলেন, ‘আমাদের যেকোনো বিষয়ে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে প্রথমে প্রাথমিকভাবে তার অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক তদন্ত করা হয়। আমি তদন্ত করেছিলাম। সেই প্রতিবেদনও জমা দিয়েছিলাম’।

তদন্তে কী পেয়েছিলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা আমি বলতে পারবো না। আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া মিডিয়ার সঙ্গে আমাদের কথা বলার অনুমতি নেই’।

এরপর তিনি ফের বলেন, ‘তবে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলাম কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ হয়নি’।  

তদন্তে বেরিয়ে আসা তথ্য জানতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব নবীরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এদিকে জানা গেছে, এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত টাকায় নিজ এলাকায় সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নু।

সূত্র বলছে, চুন্নু নিজ এলাকা পটুয়াখালীতে গড়ে তুলেছেন ‘নাহিয়ান ব্রিকস ফিল্ড’, পটুয়াখালীর কলেজ রোডে দুইতলা বাড়ি, পটুয়াখালী সদর উপজেলার কমলাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ধারান্দি গ্রামে পাঁচ একর জমি, পটুয়াখালীতে ‘নেক্সাস’ নামে একটি গার্মেন্ট শোরুম, সাভারে ১০ কাঠার একটি প্লট, ঢাকার ধানমণ্ডিতে সেন্ট্রাল রোডে ও বেইলী রোডে দুটি ফ্ল্যাট। এছাড়াও রয়েছে, নামে-বেনামে অসংখ্য সম্পদ।

;