করোনার চিকিৎসায় ‘আপত্তি’ অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালের

  • ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

করোনার চিকিৎসায় আপত্তি অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালের

করোনার চিকিৎসায় আপত্তি অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালের

দেশে চলমান কোভিড ও নন কোভিড রোগীদের চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ আসছে প্রতিদিনই। বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়ার অভিযোগও উঠছে। এ পরিস্থিতিতে সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিকে কোভিড ও নন কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সরকারি মেডিকেলগুলো করোনা ইউনিটের জন্য প্রস্তুতি নিলেও বেসরকারি মেডিকেলগুলোর সংগঠন এমন নির্দেশনায় আপত্তি জানিয়েছেন।

তারা বলছেন, ঢালাওভাবে এমন সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নন তারা এবং সব মেডিকেলের পক্ষে এমন সিদ্ধান্ত মানাও সম্ভব নয়।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, সারাদেশে ৫০ বেড ও তার বেশি বেড সম্পন্ন বেসরকারি মেডিকেল রয়েছে ৫ হাজার ৩২১টি, সেখানে মোট বেডের সংখ্যা প্রায় ৯১ হাজার। এখন পর্যন্ত সারাদেশে ৯৭টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে করোনা সেবা চলছে। এসব হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৩ হাজার ৯৬৪টি। এবং আইসিইউ শয্যা ৩৯৯টি। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে সব হাসপাতালকে তিনটি জোনে ভাগ করতে বলা হয়েছে। এরমধ্যে রেড জোনে থাকবে করোনা রোগী, ইয়োলো জোনে থাকবে করোনা সন্দেহভাজন রোগী এবং গ্রিন জোনে থাকবে নন-কোভিড রোগী।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ন্যাশনাল হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বার্তা২৪.কম-কে জানান, সারাদেশে ৫০ বেড ও তার বেশি বেড সম্পন্ন বেসরকারি মেডিকেল রয়েছে ৫ হাজার ৩২১টি, সেখানে মোট বেডের সংখ্যা প্রায় ৯১ হাজার। প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ৯০ হাজার ৫২৯টি। আর মোট সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ৬৫৪টি। এরমধ্যে জেলা পর্যায়ে ১৪০ সরকারি মেডিকেলে বেড রয়েছে ৩১ হাজার ২৬০টি। এবং থানা পর্যায়ে হাসপাতাল রয়েছে ৫১৪টি, যেখানে মোট বেড রয়েছে ২০ হাজার ৫৬টি।

বিজ্ঞাপন

গত রোববার (২৪ মে) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রস্তাব অনুযায়ী কোভিড এবং নন-কোভিড রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ৫০ শয্যা ও তার বেশি শয্যা বিশিষ্ট সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য পৃথক ব্যবস্থা চালুর নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। একই সঙ্গে সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিকে কোভিড ও নন কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. হাবিবুর রহমান খান বার্তা২৪.কমকে বলেন, সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিকে কোভিড ও নন কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে। কারণ সরকারি এসব আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করতে হয়, সেজন্য কোন সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি। প্রতিনিয়ত যেহেতু করোনা রোগী বাড়ছে তাই ডেডিকেটেড মেডিকেলগুলোই যথেষ্ট নয়। মেডিকেলগুলো রেজিস্ট্রেশন দেয়ার সময় কিছু শর্ত থাকে যে-কি করা যাবে, কি করা যাবে না। সরকারের আদেশ মানতে হবে। এরকম দুঃসময়ে যারা সরকারের আদেশ বা রোগীদের পাশে থাকবে না তাদের বিরুদ্ধে আইনসম্মত সিদ্ধান্ত সরকার নিতে পারে।

করোনার উপসর্গ নিয়ে কেউ মেডিকেলে গেলে তাদের টেস্টের ব্যবস্থা হাসপাতাল থেকে করা হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা যেটি বলছি সেটি হলো কোন রোগী যদি উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে যায় সেক্ষেত্রে তাকে আগে আইসোলেশনে রেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টেস্টের জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আর যদি রোগী নিজস্ব ব্যবস্থায় টেস্ট করাতে পারেন সেক্ষেত্রেও কোন বাধা নেই। তবে মূল কথা হচ্ছে কোভিড ও নন কোভিড সকলের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।

করোনা রোগীদের চিকিৎসা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এম এ মুবিন খান বার্তা২৪.কমকে বলেন, করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই সরকারের পাশে আছি। কিন্তু ঢালাওভাবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়। যেসব মেডিকেলে দুইটি আলাদা বিল্ডিং বা প্রবেশ পথ রয়েছে এটি তাদের ক্ষেত্রে সম্ভব। কারণ যেসব মেডিকেলে হার্ট, কিডনিসহ জটিল রোগে আক্রান্ত রোগী রয়েছে, সেখানে করোনা ছড়িয়ে পড়লে ডিজেস্টার হয়ে যাবে। তাই সব হাসপাতালের ক্ষেত্রে এটি মানা সম্ভব নয়। করোনা আক্রান্ত শুরুর পর থেকে এখন আমাদের প্রেক্ষাপট অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আগে কোন হাসপাতালে কেউ আক্রান্ত হলের সেটি লকডাউন করে দেয়া হতো, কিন্তু এখন সেটি হয়না। আমাদের দেশে তো আক্রান্তের সংখ্যা ২০-২৫ লাখ হয়নি।

নির্দেশনা না মানলে সরকারের কঠোর ব্যবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, কঠোর ব্যবস্থা কোন সমাধান নয়। কিভাবে এটি সমাধান করা যাবে সেটি এখন দেখতে হবে। আমরা ইতোমধ্যে ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসাবে ১০টি হাসপাতাল সরকারকে দিয়েছি। সুতরাং আমরাও চেষ্টা করছি কিভাবে সরকারকে সহযোগিতা করা যায়। কিন্তু প্রত্যেক হাসপাতালের ক্ষেত্রে তো এটি করা সম্ভব নয়।

করোনার জন্য আলাদা ইউনিট চালুর বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. এবিএম হারুন বার্তা২৪.কমকে বলেন, আলাদা করোনা ইউনিট চালুর বিষয়ে সরকারের নির্দেশের সঙ্গে আমরা একমত, ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। এটি প্রস্তুত করতে দুই সপ্তাহের মতো সময় লাগবে। তবে যেহেতু আমাদের ক্লিনিকগুলো কিছুটা ছোট, সেখানে আলাদা লিফট বা গেট থাকে না। সেগুলো আলাদাভাবে তৈরি করতে হচ্ছে। এছাড়াও সরকার ডাক্তারদের আলাদা হোটেলে থাকা খাওয়াসহ যেসব সুবিধা দেয়ার কথা বলেছে, সেগুলোও নিশ্চিত করার বিষয়ও রয়েছে।

করোনার জন্য বেসরকারি ক্লিনিকগুলো ১০ হাজার বেড দিতে পারবেন বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগী সেই তালিকায় যোগ হচ্ছে। সব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সন্দেহভাজন কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখার বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ গত মাসে নির্দেশনা জারি করলেও তার কোন বাস্তবায়ন হয়নি।