স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা হত্যার খুনিরা শনাক্ত হলেও মামলা হয়নি
জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু হানিফ ওরফে মিস্টার খুনের ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। এছাড়া দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করা গেলও এখনো কেউ গ্রেফতার হয়নি।
এদিকে পৌরসভার যে টোল আদায় নিয়ে মিস্টারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছিল, সেই টোল আদায় বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। পৌরসভার টোল আদায় নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে মিস্টারকে প্রকাশ্যে দিনের বেলা কুপিয়ে খুন করা হয় বলে পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
শনিবার (৬ জুন) বিকেল ৫টা পর্যন্ত মিস্টার খুনের ঘটনায় থানায় মামলা রেকর্ড হয়নি বলে জানিয়েছেন বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী।
আবু হানিফ ওরফে মিস্টার বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তার নামে চারটি হত্যাসহ নয়টি মামলা বিচারাধীন। তিনি জেলা পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ছিলেন। তবে তিনি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছেড়ে জনপ্রতিনিধি হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন। এজন্য তিনি সম্প্রতি ওমরাহ হজ শেষে এলাকায় এসে গণসংযোগ শুরু করেছিলেন। আগামী ডিসেম্বর মাসে বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে ১৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু তার আগেই শুক্রবার (৫ জুন) দুপুর ১২ টার দিকে বগুড়া শহরতলী শাকপালা এলাকায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় তাকে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিস্টারের সঙ্গে অনেকেরই নানামুখী শত্রুতা ছিল। নিজের এলাকা শাকপালাতেও অনেকের সঙ্গে ছিল তার বিরোধ। এসব দ্বন্দ্ব ছিল এলাকার আধিপত্য, পরিবহনের চাঁদা,ইট- বালুর ব্যবসা ও জায়গা জমি দখল নিয়ে। যাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছিল তারাও সরকারি দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।
স্থানীয়রা জানান, মসজিদে সবার আগে মিস্টার উপস্থিত হতেন। শুক্রবারেও তিনি সাড়ে ১১ টার পর পরই মসজিদে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু মসজিদে প্রবেশের আগেই তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মিস্টার খুনের পর থেকে আলোচনায় উঠে আসে বগুড়া পৌরসভার থেকে রিকশা ভ্যানের টোল আদায় নিয়ে বিরোধের বিষয়টি। ১৮ লাখ টাকায় পৌরসভা থেকে টেন্ডারে নেওয়া টোল আদায় কার্যক্রম পরিচালনাকারীদের একজন ছিলেন মিস্টার।
আরও পড়ুন: বগুড়ায় স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
এর আগে যুবলীগের এক নেতার নেতৃত্বে পৌরসভার এই টোল আদায় কার্যক্রম পরিচালনা হতো। তিনি এবার পৌরসভার সেই টেন্ডার না পাওয়ায় টোল আদায়ে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছিলেন। একারণে গত বুধবার সন্ধ্যার পর ৬০-৭০টি মোটরসাইকেল নিয়ে শহরে একটি মহড়া দেওয়া হয়। সেই মহড়ার নেতৃত্বে অন্যান্যদের মধ্যে মিস্টারও ছিলেন একজন। এছাড়া সিএনজি চালিত অটোরিকশার চাঁদাবাজি নিয়ে যুবলীগের ওই নেতা ও তার সহযোগীদের সঙ্গ মিস্টারের বিরোধ দীর্ঘ দিনের। যুবলীগের ওই নেতা এক সময় শাকপালা থেকে শুরু করে দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলে আধিপত্য বিরাজ করতো। তার সহযোগী মিস্টারের দাপটে কোণঠাসা।
এদিকে মহড়ার দু’দিনের মাথায় মিস্টারকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘সব ধরনের তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডে সাত জনের একটি দল জড়িত ছিল। কয়েকজনকে শনাক্ত করা গেছে। পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।’