সাভারে সাহসী মানুষ, উঠে গেছে করোনাভয়
সাভারে করোনা ভয়কে তুচ্ছ করে জীবন সংগ্রামে লাফিয়ে পড়েছে মানুষ। ফলে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে শিল্প অধ্যুষিত এলাকাটি। দুই মাসেরও বেশি সময় পরে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ গণপরিবহণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে খোলার নির্দেশনা থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মানছে না কেউ। ফলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন স্বাস্থ্যবিধি না মানা কর্মমুখী সাহসীরা। তাই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।
শিল্পাঞ্চল সাভারের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কাজে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে সকাল ৮ টার মধ্যে রাস্তায় হেঁটে কিংবা ছোট ছোট গাড়িতে গাদাগাদি করেই অফিস কিংবা কারখানায় যাচ্ছেন শ্রমিকসহ কর্মমুখী মানুষ। ফিরছেনও একইভাবে। করোনা সংক্রমণের প্রথম দিকে তাদের মাঝে বিরাজ করেছিলো আতঙ্ক। তাই তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করেছিলো যথেষ্ট। কিন্তু বর্তমানে দুঃসাহসী হয়েছে মানুষ। লেশমাত্র নেই করোনাভয়।
কাজে যোগ দেওয়ার জন্য ৬ জন পোশাক শ্রমিক একটি ভ্যানে উঠেছেন। এদের মধ্যে মারুফা নামের এক শ্রমিকের সাথে কথা হলে তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, প্রথমদিকে শুনেই করোনাভাইরাসকে অনেক ভয় করতো, এখন আর ভয় হয় না। কারণ ভয় করে তো লাভ নেই, আমাদের কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করতে হবে। ভাইরাসের ভয়ে ঘরে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে, আর কাজ করলে খেয়ে মরতে পারব। তাই আর ভয় পাই না।
আরেক শ্রমিক হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বাহিরে কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানে না। মাস্ক পড়ে ছুটছে মানুষ। সামাজিক দূরত্বের বালাই নাই। চাকরি টিকে রাখতে হলে এদের মধ্যেই একাকার হয়ে কাজ করতে হবে। আমার একার তো সচেতন হয়ে লাভ নাই। একাই এই ভাইরাসকে ভয় করে কিছুই হবে না। বাহিরে বের হলেই বোঝা যায় কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না।
এ ব্যাপারে ভ্যানের চালক আউয়ালের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বাসে ভাড়া বাড়িয়েছে তাই দুই সিটে একজন নিচ্ছে। কোন কোন বাসে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে মানুষ। আমি যদি ৫ টাকা বাড়িয়ে চাই তাহলেই যাত্রীরা বকাবকি করবে। যাত্রীরা যদি সচেতন না হয় আমরা কি করবো? আমার ভ্যানে ৪টি সিট, বাসের মত ৪ সিটের ভাড়া দিয়ে ২ জন উঠলে আমার কোন আপত্তি নাই। কিন্তু যাত্রীরাই জোর করে ৬ জন পর্যন্ত ওঠে। তাদের কাছে আমাদের কথার মুল্য নাই।
আশুলিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি ও আশুলিয়া জাতীয় শ্রমিক লীগের আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক লায়ন মোহাম্মাদ ইমাম হোসেন বলেন, শ্রমিকদের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এই ভাইরাস থেকে দুরে থাকা যায় এটা তাদের জানাতে হবে। তারা সাহসী হয় নাই, না জেনে বুঝেই তারা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। শুধু যাত্রীবাহী বাস নয়, ভ্যান-রিকশা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশাসহ সব ধরনের ছোট যানবাহন গুলোও নজরদারিতে আনা প্রয়োজন। সংক্রমণ ঠেকাতে হলে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি সব ক্ষেত্রে মানা প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত, সাভারে এপর্যন্ত করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫৬২ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১২৭ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন ১২ জন।