কসবায় বিত্তশালীরা পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপহার!
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার পৌরসভা এলাকার চার ওয়ার্ডে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপহারের তালিকা প্রণয়নে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
চার ওয়ার্ডে তালিকায় শুধু মাত্র ২০ শতাংশের কম নাম ঠাঁই পেয়েছে দুঃস্থদের। তালিকায় স্থান পাওয়া বাকি ৮০ শতাংশ সচ্ছলদের নাম। আর এই অনিয়মের কসবা পৌরসভার এই চার ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত কাউন্সিলররা হলেন ২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এনামুল হক ছোটন, ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আবু ছায়েদ ও ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হেলাল সরকার।
গত মঙ্গলবার (৯ জুন) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের বরাবর এ সংক্রান্ত চারটি অভিযোগপত্র কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে দাখিল করা হয়।
অভিযোগ পত্রে বলা হয়, এই তিন কাউন্সিলর কসবার পৌর এলাকার চারটি ওয়ার্ডে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছার টাকার তালিকা প্রণয়নের ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। এক্ষেত্রে তারা স্বজনপ্রীতি ও মুখ পরিচয়ের কারণে উচ্চবিত্তদের এই তালিকায় নাম দিয়েছেন। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন ভাতাপ্রাপ্ত লোকজনদের নামও তালিকায় স্থান পায়।
এই চার ওয়ার্ডের তালিকায় বিত্তশালীরাও যে টাকা পেয়েছেন সেই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় স্থানীয় পর্যায়ে। মঙ্গলবার (১৬ জুন) এই চার ওয়ার্ডে অনুসন্ধানে গিয়ে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
কসবার পৌর এলাকার ২ নং ওয়ার্ডের অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ড কাউন্সিল এনামুল হক ছোটন তার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত স্থানীয় সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন হায়দরর নাম তালিকায় স্থান দেন বলে অভিযোগ উঠে। তালিকায়ও তার নাম রয়েছে।
২ নং ওয়ার্ডের শাহপুরে অবস্থিত সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন হায়দার বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে বাউন্ডারি ঘেরা পাকা বাড়ি। এছাড়া বিশাল জায়গায় জুড়ে পৈতৃক ভিটা বাড়ি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশ বিখ্যাত হায়দার খাতার মালিকের পরিবারের সদস্য সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন হায়দার। গিয়াস উদ্দিন হায়দারের চট্টগ্রাম ব্যবসা রয়েছে। যা থেকে তিনি প্রতি মাসে লাখ টাকা আয় করেন।
এ বিষয়ে ২ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ফিরোজ মিয়া বলেন, পৌরসভার মেয়র ও ২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিলে উচ্চবিত্তদের দেখে দেখে তালিকায় নাম উঠানো হয়েছে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতাপ্রাপ্ত দুইজনের নামও তালিকায় দিয়েছেন তিনি।
যদিও এ ধরনের অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেন ২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এনামুল হক ছোটন। তিনি বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা। আমি গরিব দুঃখীদের নাম তালিকায় দিয়েছি।
অভিযোগ পত্র নাম থাকা ৪ নং ওয়ার্ডের তালিকায় থাকা গোলাম রহমানের বাড়ি গিয়ে তার সচ্ছলতার প্রমাণ পাওয়া যায়। অভিযোগ রয়েছে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো.আবু ছায়েদের ঘনিষ্ঠ হওয়া তার নাম তালিকায় স্থান পেয়েছে।
৪ নং ওয়ার্ডের প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছার টাকার তালিকার ক্রমিক নং ১ নম্বরে নাম থাকা ব্যবসায়ী গোলাম রহমানের বাড়িতে সরেজমিনে দেখা যায়, তারও বাউন্ডারি করা পাকা বাড়ি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গোলাম রহমানের পরিবার আর্থিকভাবে অনেক সচ্ছল এবং পারিবারিক ব্যবসাও রয়েছে।
এ বিষয়ে ৪ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আরমান বলনে, ৪ নং ওয়ার্ডের প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছার তালিকার নামের মধ্যে ২০ শতাংশ দরিদ্র ও অসহায়দের। বাকি ৮০ শতাংশ নাম গোলাম রহমানের সচ্ছল পরিবারের লোকজনদের।
এ ব্যাপারে ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো.আবু ছায়েদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব অভিযোগে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ৪ নং ওয়ার্ডের তালিকায় ৫৫ জনের নাম রয়েছে। এর মধ্যে মেয়রের কোটা রয়েছে, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলের কোটা রয়েছে। আমি যাদের নাম দিয়েছি তারা সবাই গরিব। বাকিদের নামের বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।
একইভাবে ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও রেজুলেশন ছাড়া ৯ নং ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা হেলাল সরকারেরও বিরুদ্ধেও একই ধরনের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এই দুই ওয়ার্ডে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছার টাকার তালিকায় অনেক সচ্ছলদের নাম স্থান পাওয়ার অভিযোগের সত্যতা সরেজমিনে ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে কসবার পৌরসভার মেয়র এমরান উদ্দিন জুয়েল বলেন, যারা প্রাপ্য তারা পেয়েছেন। তবে এর মধ্যে যদি কারো বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ থেকে থাকে তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে আমি কোনো অভিযোগ পায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন বলেন, এ সংক্রান্ত অভিযোগ আমরা পেয়েছি। অভিযোগগুলো আমরা তদন্ত করছি। সত্যতার প্রমাণ পেলে আমরা এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব। যার এই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।