দুর্নীতি রোধে সরকারি চালের বস্তায় ডিজিটাল স্টেনসিল
সরকারি চাল সরবরাহে স্বচ্ছতা আনতে এবার প্রতি বস্তায় ডিজিটাল স্টেনসিল ব্যবহার শুরু করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিভাগ।
সম্প্রতি অসাধু চক্রের দ্বারা সরকারি চালের বস্তা চুরি, আত্মসাত, কিংবা খোলা বাজারে চাল বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ ওঠে। তবে বস্তায় সিল না থাকায় এসব চাল কোন মিল মালিক কিংবা কোন গুদামের মজুত করা হচ্ছে তা প্রাথমিকভাবে তা শনাক্ত করা যায় না। যা নিয়ে স্থানীয় খাদ্য বিভাগকেও বিব্রত হতে হয়।
দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে তাই খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিভাগ চালু করছে সরকারি চালের বস্তায় ডিজিটাল স্টেনসিল। যাতে উল্লেখ থাকবে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য। ফলে চালের বস্তায় ওজনে কম কিংবা ক্রটি মিললেই বস্তা দেখে তা চিহ্নিত করা যাবে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, স্বচ্ছতা আনতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে বিতরণের জন্য বিভিন্ন মিল মালিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা সিদ্ধ ও আতপ চালের প্রতিটি বস্তায় দেয়া হচ্ছে ডিজিটাল স্টেনসিল। মূলত স্বচ্ছতা আনার জন্যই সারা দেশের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিভাগ প্রথম এই উদ্যোগটি নিয়েছেন।
ডিজিটাল স্টেনসিলে মিলের নাম, মিলের ঠিকানা এবং চাল উৎপাদনের তারিখ ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হচ্ছে। এতে করে চালগুলো বিতরণের সময় যেকোন ধরনের সমস্যা হলে খুব সহজেই চাল সরবরাহ করা মিলকে শনাক্ত করা যাবে। চলতি মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা থেকে সরকার ৪০,৯৯৫ হাজার মেট্রিক টন সিদ্ধ ও আতপ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
গত ৭ মে থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়েছে জেলায়। এই কার্যক্রম আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। তার মধ্যে ২২,৯৪৮ মেট্রিক টন চালের বস্তায় এবার ডিজিটাল স্টেনসিল ব্যবহার করা হচ্ছে। এই চালগুলো সরকারের নানা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় বিতরণ করা হয়ে থাকে। প্রতিটি মিলের পক্ষ থেকে বস্তায় মিলের নামসহ সিল থাকে। তবে এই সিলটি মুছে যায়। এতে করে পরবর্তীতে চালে কোনো সমস্যা দেখা দিলে চাল সরবরাহ করা মিলকে শনাক্ত করা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। সে কারণে ডিজিটাল স্টেনসিল দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিভাগ। এতে করে চাল সংগ্রহের পর যদি ওজনে কম হয় অথবা চালের মান খারাপ হয় তাহলে স্টেনসিল দেখে খুব সহজেই চালটি কোন মিলের সেটি শনাক্ত করা যাবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা চাতাল কল মালিক সমিতির সভাপতি মো. বাবুল আহাম্মেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ডিজিটাল স্টেনসিল ব্যবহার করার ফলে অনিয়ম করার কোন সুযোগ থাকবে না। এই উদ্যোগটি সারা দেশে চালু হলে সরকারি চালের বস্তায় অনিয়ম রোধ করা সম্ভব। পাশাপাশি সাধারণ মানুষ ও উপকারভোগীদের জন্যও অনেক সুফল বয়ে আনবে স্টেনসিল।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা চাল কেনার ৫-৬ মাস পর যখন বিতরণ করি অথবা অন্য জায়গায় পাঠাই তখন চালের বস্তায় ওজন কম হয় বা চালের মান খারাপ হয় বলে অভিযোগ উঠে আসে। বস্তার সিল যদি স্পষ্ট না হয় আমাদের বুঝার উপায় থাকে না এটি কোন মিলের চাল। সেই কারণে এবার মিল মালিকদের পাশাপাশি আমরাও ডিজিটাল স্টেনসিল দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। এতে করে চালে কোনো ধরনের সমস্যা হলে সহজেই সরবরাহ করা মিলকে শনাক্ত করা যাবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে দেশে আমরাই প্রথম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্টেনসিল দেয়ার কার্যক্রম হাতে নিয়েছি।