স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে গণআন্দোলনের ডাক দিয়েছে ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর প্ল্যাটফর্মটির পক্ষ থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আদৃতা রায় এ ঘোষণা দেন।
এর আগে, ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন ও অপরাধ দমনে কার্যকর ব্যবস্থাসহ নয় দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিতে যান বিক্ষোভরত প্ল্যাটফর্মটির সদস্যরা। পরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে পুলিশ তাদের বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
পরে বিক্ষোভকারীদের পক্ষে আদৃতা রায় বলেন, 'আমাদের আজকের মিছিলের সামনের সারিতে নারীরা ছিল। মিছিলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পালিত পুলিশ হামলা চালিয়েছে। আপনারা জানেন আমাদের নয় দফা দাবির অন্যতম ছিল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীরের পদত্যাগ। তিনি তো পদত্যাগ করলেন না, বরং নারীদের মিছিলে পুরুষ পুলিশ দিয়ে হামলা চালিয়েছে। মেয়েদের লাঠিচার্জ করে মাটিয়ে ফেলে লাথি দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নয় দাবি উত্থাপন করে ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্ল্যাটফর্মটি।
দাবিগুলো হলো—
১. জননিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা: আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হবে।
২. ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন ও অপরাধ দমনে কার্যকর ব্যবস্থা: সারাদেশে ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। পাহাড় ও সমতলসহ সারাদেশে সংঘটিত ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিচার দ্রুত ও নিশ্চিত করতে হবে।
৩. আইন সংস্কার ও ট্রাইবুনাল গঠন: সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে ধর্ষণবিরোধী আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে হবে। ধর্ষণের বিচার দ্রুত নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করতে হবে।
৪. নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ সংশোধন: ধর্ষণের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে লিঙ্গ, যৌনতা, ধর্ম, জাতি, জাতীয়তা ও প্রতিবন্ধিতা নির্বিশেষে সকলের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধী বা ভুক্তভোগীর জেন্ডার নির্বিশেষে সকল ধরনের পেনিট্রেশনকে ধর্ষণের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ধর্ষণের সাজা প্রদানের জন্য একটি নির্দেশিকা প্রণয়ন করতে হবে। ধর্ষকের সাথে ভুক্তভোগীর বিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে।
বৈবাহিক ধর্ষণের ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর অতীত যৌন ইতিহাস তদন্তের জন্য শুধুমাত্র নারী বিচারকের উপস্থিতি ও ক্লোজ ডোর জিজ্ঞাসাবাদের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. যৌন হয়রানি প্রতিরোধে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্টের নীতিমালা সংস্কার করতে হবে। যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল গঠন বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং অংশীজনের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। বিচার ও আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার জেন্ডার সংবেদনশীলতা প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যক্রমে জেন্ডার সংবেদনশীলতার পাঠ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৬. থানায় ধর্ষণের অভিযোগ গ্রহণ সহজীকরণ: বিশেষ আইন বা বিশেষ সেলের অধীনে দেশের যেকোনো থানায় ধর্ষণের মামলা গ্রহণ ও কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৭. সাক্ষী ও ভুক্তভোগীর সুরক্ষা: ২০১১ সালের সাক্ষী সুরক্ষা আইন পুনরায় পর্যালোচনা ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
৮. চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা: নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তা, স্লাটশেমিং ও বরখাস্তের ঘটনার পূর্ণ তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দিতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ স্লাটশেমিং করলে তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে হবে।
৯. বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল: স্বাধীন যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল কার্যকর করতে হবে। সেলে আবশ্যিকভাবে নারী সদস্য রাখতে হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা সেলকে দিতে হবে।