সুন্দরবনে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা, হতাশ জেলে পরিবার!
জুলাইয়ের শুরু থেকে আগস্টের শেষ পর্যন্ত দুই মাস সুন্দরবনে সকল প্রকার মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
বুধবার (০১ জুলাই) থেকে মৎস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত সুন্দরবনে সবধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হচ্ছে। মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ, প্রজনন ও সুন্দরবনের অভ্যন্তরে বিভিন্ন খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার রোধের লক্ষ্যে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বন বিভাগ। এদিকে একমাত্র আয়ের উৎস মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা হলেও বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় জেলেদের জীবন-জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। চরম হতাশায় দিন কাটছে জেলে পরিবারের।
বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, পূর্ব-সুন্দরবনে ২ লাখ ৩৪ হাজার ১৪৭ বর্গ কিলোমিটার বনভূমির মধ্য দিয়ে ভোলা, বলেশ্বর, শ্যালা, পশুর নদী সহ ১৩টি নদ-নদী ও ২৫০টি ছোট-বড় খাল প্রবাহিত হয়েছে। এ সব নদী ও খালে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া পাওয় যায়। এ ছাড়াও বিলুপ্ত ৫ প্রজাতির ইরাবতিসহ ছয় প্রজাতির ডলফিন পাওয়া যায়। সুন্দরবনের মধ্যে অভয়ারণ্য এলাকাসহ ১৮টি খাল এবং ২৫ ফুটের কম প্রস্থের খালে সারা বছরই মাছ ধরা নিষিদ্ধ। বনের মৎস্য ও অন্য জলজ প্রাণীর নিরাপদ প্রজনন ও সংরক্ষণের জন্য জুলাই-আগস্ট দু'মাস সুন্দরবনের অধিকাংশ খালে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়।
এদিকে জেলে পরিবার সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবনের নদী-খালে মাছ ধরে প্রায় দুই হাজার পারমিটধারী জেলে তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ পেশার সাথে জড়িত। বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে মানুষ অনেকটা কর্মহীন হয়ে পড়েছে তার ওপর সুন্দবনের মাছ ধরা দুই মাস বন্ধ থাকলে জেলেদের জীবন জীবিকা আরো কঠিন হয়ে পড়বে বলে এ পেশা সংশ্লিষ্টরা জানান।
জেলে পরিবারের পক্ষে মুন্সী হাওলাদার বলেন, আমি সুন্দরবনে ৩৫ বছর ধরে বংশ পরম্পরায় মাছ ধরে খাই। মাছ ধরে বেঁচে আমার জীবিকা নির্বাহ হয়। হঠাৎ তা বন্ধ করে দিলে আমাদের আয়-রোজগারের কোন পথ খোলা থাকবে না। দুই মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকলে ছেলে মেয়ে নিয়ে অনাহারে মরতে হবে। মহাজনদের কাছ থেকে নেয়া দাদনের বোঝা মাথায় নিয়ে এলাকা ছাড়তে হবে। আমার এলাকায় আরো কয়েক'শ জেলে পরিবার একই সমস্যায় পড়বে।
সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বশিরুল আল মামুন বলেন, মৎস্য সম্পদ রক্ষায় প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও সুন্দরবনে মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হচ্ছে। তবে করোনাকালীন এ সময়ে জেলেদের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ বেলায়েত হোসেন বলেন, পাস-পারমিট নিতে আসা জেলেদের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আগে থেকেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। যে কারণে জেলেরা কিছুটা আগাম প্রস্তুতিও নিয়েছে। তবুও জেলেদের সহযোগিতার বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে।
এ ব্যাপারে সুন্দরবনের সহকারী বন সংরক্ষক মোঃ জয়নাল আবেদীন জানান, জুলাই ও আগস্ট মাস হচ্ছে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে মৎস্য প্রজননের জন্য উপযুক্ত মৌসুম। এই সময় সাধারণত সকল মাছ ডিম ছাড়ে। তাই ১ জুলাই থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত দুই মাস সকল প্রকার মৎস্য শিকার বন্ধ থাকবে। সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদ রক্ষায় ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানস (আইআরএমপি) থর সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেয় বন বিভাগ।