ভ্যাকসিন আসার আগেই উন্নতি হচ্ছে করোনা চিকিৎসার!

  • ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ভ্যাকসিন আসার আগেই উন্নতি হচ্ছে করোনা চিকিৎসার!

ভ্যাকসিন আসার আগেই উন্নতি হচ্ছে করোনা চিকিৎসার!

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের মহামারিতে প্রতিদিনই আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন অস‍ংখ্য মানুষ। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের কোন ভ্যাকসিন বাজারে আসেনি। ফলে পুরনো ও নতুন বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধগুলো এখন করোনার চিকিৎসায় প্রয়োগ করছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, রোগীর অবস্থা বুঝে ভিন্ন ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করছেন তারা। আর ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত এই চিকিৎসায় আশার আলো দেখছেন চিকিৎসকরা।

সরকারি-বেসরকারি মেডিকেলগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি মেডিকেলগুলোতে সাধারণ ওষুধের প্রয়োগ বেশি। এসব মেডিকেলে নাপাসহ ঠান্ডা-জ্বরের ওষুধগুলোই রোগীদের বেশি দেয়া হচ্ছে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে রোগীর সক্ষমতা বুঝে রেমডেসিভিরের মতো ওষুধ দেয়া হচ্ছে। বেসরকারি মেডিকেলে চিকিৎসার ধরণ অনেকটা একই রকম হলেও সেখানে রেমডেসিভিরের মতো উচ্চমূল্যের ওষুধ প্রয়োগের হার বেশি। সেখানকার রোগীদের সক্ষমতা বিবেচনায় এসব ওষুধ প্রয়োগ হচ্ছে। তবে সেখানেও শ্বাসকষ্টসহ জটিল সমস্যা না থাকলে নাপাসহ ঠান্ডা জ্বরের সাধারণ ওষুধ দেয়া হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

চিকিৎসকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রেই করোনার চিকিৎসায় অ্যান্টিপ্রোটোজোয়াল ক্যাটাগরির জেনেরিক আইভারমেকটিন+ডক্সিসাইক্লিন ওষুধ প্রয়োগ হচ্ছে। তবে এই ওষুধে করোনামুক্ত হওয়ার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি বিশ্বের কোথাও নেই। আর জটিল সমস্যার ক্ষেত্রে প্লাজমা থেরাপিও দেয়া হচ্ছে। আবার দেখা গেছে অনেক রোগী বাসায় থেকে শুধুমাত্র মোবাইলফোনে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নাপা খেয়েই সুস্থ হচ্ছেন।

শুরু থেকেই করোনা চিকিৎসায় যুক্ত কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ও করোনা এক্সপার্ট ডা. আল মামুন শাহরিয়ার সরকার বার্তা২৪.কমকে বলেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসায় আমরা খুব জটিল সমস্যা না থাকলে নাপাসহ সাধারণ ওষুধগুলো দিচ্ছি। যেগুলো সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের চিকিৎসায় রোগীদের দেয়া হয়। কিন্তু কোন রোগীর যদি শ্বাসকষ্টসহ জটিল কোন সমস্যা হয়, সেক্ষেত্রে আমরা রেমডেসিভির ও ডেক্সামেথাসন দিচ্ছি। এক্ষেত্রে রোগীর সক্ষমতাকেই আগে প্রাধান্য দেয়া হয়। কারণ সরকারি মেডিকেলে দরিদ্র মানুষই বেশি চিকিৎসা নেন, ফলে এসব ওষুধ কেনার সাধ্য তাদের থাকে না। যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে রোগীর অক্সিজেন লেভেল ৯৩ এর নিচে আসলেই এ ওষুধ সাজেস্ট করছি। এর বাইরে অন্যান্য ওষুধ সেভাবে আমরা সাজেস্ট করছি না।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরো বলেন, করোনার চিকিৎসায় শুরুর দিকে যেমন অবস্থা ছিল এখন তার কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। এর অনেকটা কারণ রোগীদের আত্মবিশ্বাস কিছুটা বেড়েছে। করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে তারা অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গেছেন, ভয়ভীতিও অনেকটা কমেছে। যেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে চিকিৎসা ব্যবস্থায় এখন যতটুকু সমস্যা রয়েছে সেটি চিকিৎসার ঘাটতির জন্য নয়, সিস্টেমের সমস্যার জন্যই হচ্ছে।

করোনার আক্রান্ত রোগীদের সেবায় কাজ করা ল্যাবএইডের চিকিৎসক ডা. মাজহারুল বার্তা২৪.কমকে বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা এখন অনেকটা ইমপ্রুভ হয়েছে। আমরা বাড়তি কোন ওষুধ সেভাবে প্রয়োগ করছি না। কারণ রোগীদের জটিল সমস্যা না থাকলে ঠান্ডা জ্বরের সাধারণ ওষুধ দেয়া হচ্ছে এবং মানসিকভাবে তাদের সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে। ফলে খুব ভালো রেসপন্সও আসছে। অন্যদিকে শ্বাসকষ্ট বা জটিল কোন সমস্যা হলে কিন্তু আমরা রেমডেসিভির ও ডেক্সামেথাসন দিচ্ছি। যেহেতু বেসরকারি মেডিকেলে যারা চিকিৎসা নেন তারা মোটামুটি সামর্থ্যবান, ফলে আমরা জটিল সমস্যা দেখলেই এই দুটো ওষুধ দিচ্ছি। শ্বাসকষ্টের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়লে ডেক্সামেথাসন বেশ কার্যকর। এটি অনেকটাই অক্সিজেনের সাপোর্ট দেয়।

করোনার চিকিৎসা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এম এ মুবিন খান বার্তা২৪.কমকে বলেন, করোনা চিকিৎসা কিন্তু আগে থেকে অনেকটাই ইম্প্রুভ হয়েছে। অনেক বেসরকারি হাসপাতাল করোনায় চিকিৎসায় এগিয়ে এসেছে। আগের থেকে রোগীদের সুস্থতার হারও বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের চিকিৎসকরা অবস্থা অনুযায়ী মেডিসিন সাজেস্ট করছেন। এখন কারো শ্বাসকষ্ট বেশি হলে তাকে তো আইসিইউ সেবা দিতে হবে, সেক্ষেত্রে রোগীর সেই আর্থিক সক্ষমতাও থাকতে হবে। আবার প্রয়োজনভেদে চিকিৎসকরা রেমডেসিভিরও সাজেস্ট করছেন, সবমিলিয়ে করোনা চিকিৎসা অনেকটাই ইম্প্রুভ হয়েছে।