পল্লী বিদ্যুতের মনগড়া বিলে ভোগান্তিতে গ্রাহক
যশোরে পল্লী বিদ্যুতের মনগড়া বিলে ভোগান্তিতে গ্রাহকরা। বিল পরিশোধের পরও পুনরায় নতুন বিলে বকেয়া বিল সংযোজন করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া যে গ্রাহকের মাসে দুই থেকে তিন’শ টাকা বিল আসে তার এবার প্রায় হাজার টাকা বিল এসেছে। করোনার দুর্যোগের মধ্যে এমন বিলে হতাশ তারা। তাদের অভিযোগ খেয়াল খুশি মতো বিল করছে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে বিলে সমস্যা থাকলে পরবর্তীতে সমন্বয় করা হবে।
অভিযোগে জানা গেছে, যশোরে করোনা সংক্রমণের মধ্যেও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় নয় লাখ গ্রাহক ‘গড় বিলের’ নামে ভুতুড়ে বিলের শিকার হয়েছেন। মিটার রিডাররা অফিসে বসে মনগড়া অতিরিক্ত বিল করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এখানেই শেষ নয় পরিশোধ করা বিলও বকেয়া হিসাবে সংযোজন করেছে নতুন বিলে। যা গ্রাহকদের আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। সময় বাঁচাতে স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ এজেন্টদের কাছে বিল পরিশোধ করে অনেক গ্রাহক। বিল বকেয়া আসায় ছুটছেন তাদের কাছেই। কিন্তু মিলছে না কোনো সমাধান। আশ্বাসের বাণী নিয়েই ফিরতে হচ্ছে বাড়িতে।
মণিরামপুর উপজেলার সরসকাঠি গ্রামের আলতাফ হোসেন জানান, একটি লাইট ও একটি ফ্রিজ চালিয়ে এতোদিন দেড় থেকে দুইশ টাকা বিল আসলেও এবার এসেছে ৭শ’ ৮১ টাকা। আবার অনেকের দুটি লাইট একটি ফ্যান চালিয়ে বিল আসছে প্রায় হাজার টাকা। তাদের খেয়াল খুশিমতো বিল করায় অসহায় হয়ে পড়েছে গ্রাহকরা।
যশোর সদর উপজেলার দায়তলা গ্রামে কৃষক ফজর আলী জানান, এপ্রিল মাসে তার বিল আসে ২৮২ টাকা, কিন্তু মে মাসে এসেছে ৮৮২ টাকা। করোনার কারণে যেখানে সরকার বিল কম করবে সেখানে বিল এসেছে তার চেয়ে তিনগুণ।
একই এলাকার আমেনা খাতুন জানান, ধান কাটা-মাড়াইয়ের মৌসুমে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা পর্যন্ত বিল উঠে। কিন্তু এখন কোনো কিছু না থাকলেও দেড়শ টাকার জায়গায় ৫ শ’ টাকা বিল এসেছে। করোনায় কর্মহীন তার ওপর বাড়তি এই বিদ্যুৎ বিল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। করোনায় আমাদের আয় রোজগার বন্ধ এখন বাড়তি বিল কীভাবে দেব?
মণিরামপুর উপজেলার রোহিতা বাজারের মুদি দোকানি আজগর হোসেন জানান, তার বাড়িতে প্রতি মাসে যেখানে ২৫০ টাকা বিল আসে। সেখানে তিন মাসে বিল করেছে ১৫শ' টাকা। তিন থেকে চারগুণ বেশি বিল হয়েছে যা আমার পক্ষে পরিশোধ করা অসম্ভব। করোনার মধ্যে বিল না কমিয়ে বাড়তি বিলের বোঝা চাপানোতে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিল নিয়ে বিদ্যুৎ অফিসের অভিযোগ কেন্দ্র গেলেও সেখানে হয়রানি করা হচ্ছে । তাই গত দু মাসের বিল পরিশোধ করেননি তিনি। বিল পরিশোধ না করায় একদিকে যেমন তার বিলের জরিমানা গুণতে হচ্ছে; অন্যদিকে তার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঝুঁকিতেও রয়েছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে বিল বকেয়া আসায় এজেন্টদের কাছে ছুটছেন গ্রাহকরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এমনকি গ্রাহকদের কাছে হেনস্তা হতে হচ্ছে তাদের। দায়তলা এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ এজেন্ট হাবিবুর রহমান জানান, অনেকেই বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার পরেও পরিশোধকৃত মাসের বিল পুনরায় নতুন বিলে যোগ করেছে বিদ্যুৎ অফিস। এসকল গ্রাহকরা আমাদের কাছে আসছে। এ বিষয়ে কোনো সদুত্তর না পেয়ে হেনস্তা করছে। তারা মনে করছে আমরা পল্লী বিদ্যুৎ এজেন্টরা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করিনি।
যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ জেনারেল ম্যানেজার আব্দুল মান্নান বার্তা ২৪.কম-কে জানান, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর বিদ্যুৎ বিল নিয়ে যশোরে কিছু গ্রাহকের অভিযোগ ছিল। তবে তা গত মে মাসের বিলে সমন্বয় করে নেওয়া হয়েছে। জুন থেকে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী অরুন কুমার কুন্ডু বার্তা২৪.কম-কে জানান, এপ্রিল-মে মাসের বিলের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হয়েছে। এখন গরম পড়েছে। ফ্রিজ, এসি, ফ্যান চালানো হচ্ছে বেশি। তাই বিলও বেশি আসবে। এটি গ্রাহকদের মেনে নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এখন থেকে গ্রাহক যতটুকু বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন, ততটুকুই বিল আসবে। এরপরও কোনো বিলের ক্ষেত্রে বড় ধরনের গরমিল হলে গ্রাহক বিদ্যুৎ বিভাগের অভিযোগ কেন্দ্র যোগাযোগ করলে সমাধান দেওয়া হবে।