যশোরে বারোমাসী ফুলকপি-পাতাকপির চারা উৎপাদনে লাভবান চাষি

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা ২৪.কম যশোর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

যশোরে বারোমাসী ফুলকপি-পাতাকপির চারা উৎপাদনে লাভবান চাষি

যশোরে বারোমাসী ফুলকপি-পাতাকপির চারা উৎপাদনে লাভবান চাষি

সবজির চাষাবাদ এখন আর ঋতুভিত্তিক নেই। সবধরণের সবজির এখন প্রায় বারোমাসী চাষাবাদ চলছে। ফলে গরমের দিনেও হাট-বাজারে রকমারি শীতকালীন সবজির দেখা মিলছে। যশোর সদরের চুড়ামনকাটি এলাকায় শীতকালীন জনপ্রিয় দুটি সবজির বারোমাসী চাষের জন্য চারা উৎপাদন হচ্ছে।

স্থানীয় চাহিদা মিটানোর পর এখানকার উৎপাদিত ফুলকপি ও পাতাকপির চারা এখন জেলার বাইরেও যাচ্ছে। গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি ও পাতাকপির চারা বিক্রি লাভজনক হওয়ায় অনেকেই এর চারা উৎপাদনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

পাতাকপি ও ফুলকপি মূলত শীতকালেই ভাল হয়। তবে সম্প্রতি এখন গ্রীষ্ম ও বর্ষাতেও এর উৎপাদন হচ্ছে। মৌসুমভেদে এখন  শ্রাবণ থেকে ভাদ্র ও আশ্বিন মাস পর্যন্ত এর আগাম চাষ হয়। এছাড়া আশ্বিন-কার্তিক ও অগ্রাহায়ন মাসেও ফুলকপি ও পাতাকপির চাষ চলছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে মতে,  বিভিন্ন সিড কোম্পানির কাছ থেকে কৃষকরা গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি ও পাতাকপির বীজ সংগ্রহ করে থাকেন। মানভেদে প্যাকেট প্রতি পাতাকপির বীজের দাম ১৯০ থেকে ৭০০ টাকা। ফুলকপির প্রতি প্যাকেট বীজের দাম ৮০০ থেকে একহাজার টাকা। প্রতি প্যাকেটে বীজের পরিমাণ থাকে দশ গ্রাম। এক প্যাকেট বীজ থেকে প্রায় এক হাজার ৪০০টির মতন চারা গজায়। এক্ষেত্রে পাতাকপির এক হাজার চারাগাছের দাম ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। ফুলকপির এক হাজার চারার দাম হাজার প্রতি এক হাজার থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা।

বিজ্ঞাপন

চারা উৎপাদনকারী কৃষকরা জানান, বীজ বপনের ৩০ দিনের মধ্যে চারা বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। আর চারাগাছ থেকে ফুল কপির ফলন আসতে ৫৫ দিন থেকে ৯০ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। এদিকে পাতাকপির ক্ষেত্রেও ফলন পেতে জাতভেদে কোনটির ৫০ থেকে ৫৫ ও ৬০ থেকে ৯০দিন অপেক্ষা করতে হয়।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে পাতাকপির আগাম চাষে খরচ হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। কোনরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত না হলে প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ টাকার পাতাকপি বিক্রি করা যায়। এদিকে ফুলকপি চাষে বিঘা প্রতি খরচ হয় প্রায় ৪০ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মতন ফুলকপি বিক্রি করা যায়।    

যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটির ইউনিয়নের আব্দুলপুর মাঠে কৃষক উসমান আলী বাণিজ্যিকভাবে গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি ও পাতাকপির চারা উৎপাদন করেন। এখানকার মাঠে ৬০ শতক জমিতে ফসল দুটির চারার আবাদ করেন। স্থানীয়দের পাশাপাশি জেলার বাইরে থেকে অনেকে এখানে চারা কিনতে আসেন।

তিনি জানান, শীতকালীন সবজি ফুলকপি ও পাতাকপির আগাম চাষে আগ্রহীরা তার কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করেন। ফসল দুটির আগাম চাষ অনেক লাভজনক। শীত শুরুর আগেভাগেই এসব সবজি যখন বাজারে ওঠে তখন ভালো দাম পাওয়া যায়। এমনকি শীতের এই সবজি দুটির গ্রীষ্মকালীন আবাদ থেকে ফলনও ভালো আসে। যার জন্য অনেকেই এখন সবজি দুটির আগাম চাষবাদে আগ্রহী হয়েছে।

একই এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, প্রতিবিঘা জমিতে ৬ হাজারের মতন আগাম জাতের পাতাকপির চারার আবাদ করা যায়। তবে সব চারা থেকে ফলন আসে না। কিছু চারা পোকায় নষ্ট করলেও ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার চারা থেকে কপির ফলন পাওয়া যায়। একেকটি পাতাকপির ওজন ১ থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত হয়।

তিনি জানান, প্রতি এক বিঘা জমিতে প্রায় ৫ হাজার মতন ফুলকপির চারা  রোপণ করা যায়। কিন্তু রোপণ করা চারার সবকটি শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে না। অনেক চারা মারা যায়। শেষ পর্যন্ত ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার পিচ কপির ফলন পাওয়া যায়। এসব কপির একেকটি ৪০০ থেকে ৭৫০ গ্রাম ওজনের হয়।

কৃষি সম্প্রসরাণ অধিদপ্তরের যশোর কার্যালয়ের উপ-পরিচালনক ড. আকতারুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে জানান, গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি ও পাতাকপির চাষাবাদ বেশ লাভজনক হওয়ায় চাষিদের অনেকেই এখন এর আবাদ করছেন। শীতকালীন সবজি দুটির গ্রীষ্মকালীন চাষে ফলনও ভালো আসছে।