সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গণপূর্ত অধিদফতরের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নুর বিরুদ্ধে।
সেই সঙ্গে নির্দিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে মোটা অংকের লেনদেনের মাধ্যমে সরকারি টেন্ডার ভাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ওপেন প্ল্যাটফর্মে টেন্ডার উন্মুক্ত করান। তারপর তাদের মাধ্যমে টেন্ডারের দরপত্রের আহ্বান করে আবেদন গ্রহণ করেন এই কর্মকর্তা। তাদের টেন্ডারের মাধ্যমে সরকারি কাজ পাইয়ে দিয়ে এর বিনিময়ে নিয়ে থাকেন মোটা অংকের অর্থ।
এছাড়াও রাজধানীর মিরপুর ডিভিশনের পূর্ত সার্কেলে আইভি বাংলো তৈরির সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে, এই নির্বাহী প্রকোশলী চুন্নুর বিরুদ্ধে।
অভিযোগ উঠেছে, ২০২২-২০২৪ অর্থবছরে মিরপুর পাইকপাড়া এলাকায় পিডব্লিউডি ট্রেনিং সেন্টারের পাশের অবস্থিত (রুম নম্বর ৭ ও ৮) এই দুটি রুমকে সংস্কার/ মেরামত ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে আইভি বাংলোতে রূপান্তরের কাজের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দকৃত অর্থে কাজ শেষ না করে কমিশন নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দকৃত অর্থ পাইয়ে দেন তিনি।
তবে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে এসব বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আর এই তদন্ত কমিটির চোখে ধুলো দিতে রাতের আঁধারে নামমাত্র নিম্নমানের কাজ করেন তিনি। একই সঙ্গে নানান ক্ষেত্রে দুর্নীতি, নিয়োগ, বদলি, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, কমিশনের বিনিময়ে কাজ ভাগিয়ে নেওয়া, কাজ না করে বিল উত্তোলন করাসহ নানান অনিয়মের অভিযোগ গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নুর বিরুদ্ধে।
এর আগে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইভি বাংলো তৈরির নামে প্রতারণার মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মুহাম্মদ সোহেল হাসানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, এসব অভিযোগের বিষয়ে সঠিক তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে। গত বছরের আগস্ট মাসে এই তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে গণপূর্ত বিভাগ-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগের অভাব থাকে না। এটা নতুন কিছু না। আপনি আরিফের নম্বর নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন। তার কাছে সব তথ্য উপাত্ত দেওয়া আছে।
আরিফকে ফোন করে তার কর্মস্থলের পদমর্যাদা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, নির্বাহী প্রকৌশলীর পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট (পিএ) হিসেবে আছেন।
এরপর নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নুর দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘স্যার আপনাকে কী বলেছেন, সেটা তো আমি জানি না। আমি একটু স্যারের সঙ্গে কথা বলে রবিবার আপনাকে ফোন দিবো’।
সেলফোনে কথা বলে জানাতে বলা হলে তিনি বলেন, ‘এখন তো আমি আমার নিজের কাজে একটু সচিবালয়ে আছি। এখন সম্ভব না’।
এসব দুর্নীতির অভিযোগে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে পাওয়া তথ্যের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয়, তদন্তের দায়িত্বে থাকা গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মুহাম্মদ সোহেল হাসানের সঙ্গে।
সোহেল হাসান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এটা বেশ কিছুদিন আগের কথা। আসলে তদন্ত কমিটি না। প্রাথমিক তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছিল আমাকে’।
তিনি বলেন, ‘আমাদের যেকোনো বিষয়ে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে প্রথমে প্রাথমিকভাবে তার অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক তদন্ত করা হয়। আমি তদন্ত করেছিলাম। সেই প্রতিবেদনও জমা দিয়েছিলাম’।
তদন্তে কী পেয়েছিলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা আমি বলতে পারবো না। আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া মিডিয়ার সঙ্গে আমাদের কথা বলার অনুমতি নেই’।
এরপর তিনি ফের বলেন, ‘তবে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলাম কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ হয়নি’।
তদন্তে বেরিয়ে আসা তথ্য জানতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব নবীরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এদিকে জানা গেছে, এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত টাকায় নিজ এলাকায় সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নু।
সূত্র বলছে, চুন্নু নিজ এলাকা পটুয়াখালীতে গড়ে তুলেছেন ‘নাহিয়ান ব্রিকস ফিল্ড’, পটুয়াখালীর কলেজ রোডে দুইতলা বাড়ি, পটুয়াখালী সদর উপজেলার কমলাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ধারান্দি গ্রামে পাঁচ একর জমি, পটুয়াখালীতে ‘নেক্সাস’ নামে একটি গার্মেন্ট শোরুম, সাভারে ১০ কাঠার একটি প্লট, ঢাকার ধানমণ্ডিতে সেন্ট্রাল রোডে ও বেইলী রোডে দুটি ফ্ল্যাট। এছাড়াও রয়েছে, নামে-বেনামে অসংখ্য সম্পদ।