ভারতীয় ভিসা প্রাপ্তিতে নানান প্রতিবন্ধকতায় বেনাপোল ইমিগ্রেশন দিয়ে দুই দেশের মধ্যে একেবারে কমে এসেছে পাসপোর্টধারী চলাচল। এতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে ভ্রমণ খাতে। বাংলাদেশিদের ক্ষতির পাশাপাশি অচলাবস্থা নেমেছে ভারতের পশ্চিম বঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্যে।
সবশেষ শনিবার (২৯ ডিসেম্বর) বেনাপোল-পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন ব্যবহার করে ভারতে গেছে এক হাজার ৪৭১ জন পাসপোর্টধারী। এর মধ্যে বাংলাদেশি ছিল এক হাজার ১৯৪, ভারতীয় ২৭৪, জাপান ২ ও নোপোলিয়ন একজন পাসপোর্টধারী। এদিকে খুলনা-কলকাতা রুটে বন্ধন রেলে যাত্রীসেবা এখনও বন্ধ থাকায় নিরাপদ যাতায়াতে বেড়েছে ভোগান্তি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে যে সব বাংলাদেশি ভারতে যায় তাদের বড় একটি অংশ চিকিৎসা ও দর্শনীয় স্থান ঘুরতে যায়। আর যে-সব ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে আসে তাদের বড় একটি অংশ কম খরচে মেডিকেল শিক্ষায়।
বর্তমানে দেশের ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ১০ হাজারের বেশি বিদেশি অধ্যয়নরত রয়েছে। যাদের বেশির ভাগ ভারতীয়। এছাড়া টুরিস্ট ও ওয়ার্ক ভিসায় এদেশে প্রায় ১০ লাখের মত ভারতীয় চাকরি করছে। জুলাই-আগস্টের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র, জনতা আন্দোলনে নিরাপত্তা জনিত কারণ দেখিয়ে ভারতীয় ভিসা সীমিত ও দুই দেশের মধ্যে রেলপথে যাত্রীসেবা বন্ধ করে দেয়।
৫ আগস্টে আলীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুতির পর দেশ চালানোর দায়িত্বে আসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এরপর দলটির শীর্ষ নেতারা দেশ ছেড়ে আশ্রয় নেয় ভারতে। বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরলেও নানা অযুহাত দেখিয়ে এখনও স্বাভাবিক ভিসা প্রদান ও রেলপথে বেনাপোল রুটে যাত্রীসেবা বন্ধ রেখা হয়েছে। এতে ভিসা না পেয়ে যাত্রী যাতায়াত একেবারে কমে এসেছে। স্বাভাবিক সময়ে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর ব্যবহার করে দুই দেশের মধ্যে ৮ থেকে ১০ হাজার পাসপোর্টধারী যাতায়াত করলেও এখন তা কমে দেড় হাজারের ঘরে নেমেছে। ভিসা না পেয়ে চিকিৎসা গ্রহণে বাঁধার সৃষ্টি হচ্ছে ও সড়ক পথে ভোগান্তি বেড়েছে।
ভারতগামী পাসপোর্টধারী রহমত আলী জানান, আগের ভিসায় যাচ্ছি। ডিসেম্বরে ভিসা শেষ হয়ে যাবে। ভারতীয়রা ভিসা পেলেও বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে এখনো বাঁধা সৃষ্টি করছে ভারতীয় দূতাবাস।
ভারতীয় পাসপোর্টধারী অনিল বিশ্বাস জানান, ভারতীয়দের ভিসা পেতে বা যাতায়াতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কিছু মানুষ উসকানিমূলক তথ্য ছড়াচ্ছে।
তবে ভিসা বন্ধে বাংলাদেশিদের ভারতে আসা কমে যাওয়ায় কলকাতার হোটেল রেস্তোরাঁ ও হাসপাতালগুলো প্রায় জন শূন্য অবস্থা।
বেনাপোল আমদানি, রফতানি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জানান, কেবল বেনাপোল রুটে ভ্রমণ খাতে ভিসা ফি বাবদ বাংলাদেশিদের কাছ থেকে বছরে প্রায় দুইশো কোটি টাকা আয় করে থাকে ভারতীয় দূতাবাস। বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও নানা অযুহাতে ভারত সরকার এখনও রেল পরিষেবা বন্ধ রেখেছে। ফলে ভোগান্তি বেড়েছে এপথে যাতায়াতকারী পাসপোর্টধারীদের। ভিসা বন্ধ থাকায় ব্যবসা,বাণিজ্যেও দুই দেশেই ক্ষতির শিকার হচ্ছে।
বেনাপোল স্থলবন্দর প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের ইনচার্জ আব্দুল হাফিজ জানান, ভিসা স্বাভাবিক না থাকায় যাত্রী একেবারে কমে এসেছে। গতকাল মাত্র এক হাজার ৪৭১ জন পাসপোর্টধারী ভারতে গেছে।