বিনোদনের অভাবে ধুঁকছে মসিকের নতুন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা
পৌরসভা থেকে মহানগরের বাসিন্দা হয়েছেন জুলফিকার ইসলাম। কলেজ পড়ুয়া এ তরুণের বাড়ি ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের (মসিক) ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে। চর ঝাউগড়া, চর গোবাদিয়া ও রঘুরামপুরের ৮ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গড়ে ওঠা মসিকের এ নতুন ওয়ার্ডে নেই বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা।
নগরের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র বলতে ব্রক্ষপুত্র নদছোঁয়া জয়নুল উদ্যান এবং বিপিন পার্ক। কিন্তু সেখানে চর ঝাউগড়া বা চর গোবাদিয়া এলাকা থেকে পৌঁছতেই অনেক সময় এবং অর্থের প্রয়োজন। ফলশ্রুতিতে কলেজ শেষে বিকেলে প্রাতভ্রমণের সুযোগ বঞ্চিত এ তরুণ। সেক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পরিমণ্ডলে ঘুরপাক খেতেই অবসন্ন বিকেল কাটে তার।
এ চিত্র কেবলমাত্র নগরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের নয়। অভিন্ন দৃশ্য বিলুপ্ত পৌরসভার সঙ্গে নতুন করে সংযুক্ত ১২টি ওয়ার্ডের। ফলশ্রুতিতে এসব ওয়ার্ডের বেশিরভাগ শিশু-কিশোরদের অবসর সময়ে প্রধান ভরসাই স্মার্ট ফোন বা ট্যাব।
নতুন যুক্ত হওয়া এসব ওয়ার্ডে বসবাস প্রায় চার লক্ষাধিক মানুষের। নিজের সন্তানদের সুস্থ বিনোদনের অভাবে দুশ্চিন্তায় খাবি খেতে হচ্ছে অভিভাবকদেরও।
ক্ষোভ প্রকাশ করেন জুলফিকারের মা নাজমা খাতুন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘সুশিক্ষা আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় শিশু-কিশোররা বেড়ে উঠলেই তাদের মানসিক বিকাশ মজবুতের জন্য বিনোদন কেন্দ্র অপরিহার্য। কিন্তু আজও ময়মনসিংহ নগরে কোনো শিশু পার্ক নেই।’
জানা গেছে, ২০১৮ সালে পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয় ময়মনসিংহ। ইতিহাস ঐতিহ্যের এই সিটিতে ২০১৯ সালের ৫ মে’র নির্বাচনের পর ইকরামুল হক টিটু প্রথম মেয়র পদে নির্বাচিত হন। ২২ বর্গ কিলোমিটার থেকে সিটির এলাকা বেড়ে দাঁড়ায় থেকে ৯১ বর্গ কিলোমিটারে। জনসংখ্যা হয় প্রায় ৮ লাখ। কিন্তু বিনোদন ব্যবস্থায় সেই পুরনো চিত্রই রয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঈদ বা যেকোনো ছুটিতে ময়মনসিংহ নগরের বাসিন্দাদের বিনোদনের খোরাক মেটাচ্ছে শিল্পাচার্য জয়নুল উদ্যান। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন মিলনায়তনের পাশে ব্রক্ষপুত্র পাড়ে সবুজ প্রকৃতির কোলে গড়ে ওঠা এ উদ্যান বিস্তৃত কাচারিঘাট পর্যন্ত।
নিরিবিলি শান্ত মনোরম পরিবেশ, সারি সারি ছায়া ঢাকা বৃক্ষ, আর নদীকে সামনে রেখে প্রিয়জনের সাথে কিছুটা সময় কাটাতে অনেকেই আসেন এ উদ্যানে। ফলে নগরবাসীর জীবনযাত্রার সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে এ উদ্যান।
সূত্রটি জানিয়েছে, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র মো.ইকরামুল হক টিটু’র উদ্যোগে জয়নুল উদ্যান ও বিপিন পার্ককে নয়নাভিরাম রূপ দেওয়া হয়েছে। চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের পাশাপাশি রয়েছে ফোয়ারা ও ব্যায়ামাগার।
স্টিলের পাইপের সীমানা প্রাচীর আর পাকা স্ল্যাবের হাঁটার পথ, ফুলের বাগান সব মিলিয়ে অন্য রকম সুন্দর এ উদ্যান। তবে নতুন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের জন্য এসব বিনোদনকেন্দ্র কোন কাজেই আসছে না।
নতুন যুক্ত হওয়া একটি ওয়ার্ডের বাসিন্দা ময়মনসিংহ মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শাহীনুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নগর পিতা ইকরামুল হক টিটু নিজের প্রচেষ্টা ও কর্মোদ্যম দিয়ে নগরকে বদলে দিচ্ছেন। তার কাছে আমাদের প্রত্যাশা নতুন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের জন্য আলাদা একটি বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলার।’
সুজন ময়মনসিংহ মহানগরী শাখার সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, ‘নতুন ওয়ার্ডগুলোতেও বিনোদন ব্যবস্থা একদমই নেই। ফলে বাড়িতে বসেই সময় কাটাতে হয় শিশু-কিশোরদের। তবে ওয়ার্ডগুলোতে রয়েছে পর্যাপ্ত জায়গা। প্রকৃতিও বিনোদনের পক্ষে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে স্থানীয় লোকদের বিনিয়োগের সুযোগ দিলেও বিনোদন ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটতে পারে। অথবা সিটি করপোরেশন নিজস্ব উদ্যোগে একাধিক স্থানে গড়ে তুলতে পারে কাঙ্ক্ষিত বিনোদন কেন্দ্র। এতে করে চিত্ত বিনোদনেরও পথও উন্মুক্ত হবে। নগর হবে জনবান্ধব। তাই এখনই উচিত সিটি মেয়রের কার্যকর উদ্যোগ নেবার।’
জানতে চাইলে সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, ‘নগরের তিনটি প্রান্তে ছোট-বড় তিনটি পার্কের পরিকল্পনা করেছি। খুব দ্রুতই চূড়ান্ত পরিকল্পনা শেষে প্রকল্পটি অনুমোদনের মাধ্যমে তা বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করা হবে।’