দুই প্রতিষ্ঠানের টানাটানিতে সেবা বঞ্চিত রোগীরা

  • সাবিত আল হাসান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নারায়ণগঞ্জ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

দুই প্রতিষ্ঠানের টানাটানিতে সেবা বঞ্চিত রোগীরা

দুই প্রতিষ্ঠানের টানাটানিতে সেবা বঞ্চিত রোগীরা

নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার জালকুড়িতে অবস্থিত মা ও শিশু সেবা কেন্দ্রটি দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ভবনটি নিয়ে দুটি প্রতিষ্ঠানের টানাটানিতে কেউই ঠিকমতো নিজেদের কাজ করতে পারছে না। মূলত দুটি প্রতিষ্ঠান এই ভবনে মা ও শিশুদের সেবা প্রদান করায় কেউই তাদের অবস্থান ত্যাগ করতে রাজি নন। ফলে দীর্ঘ ২৮ বছরেও স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া।

ভবনটিতে নারায়ণগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ তাদের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। একই ভাবে বর্হিবিভাগে দীর্ঘদিন রোগী দেখে যাচ্ছেন মাতৃ– শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা। প্রতিদিন ২ ঘণ্টা সময় দিয়ে তারা নিজেদের একটি শাখা চালিয়ে নিচ্ছেন। অপরদিকে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ পুরো অফিসিয়াল টাইম জুড়েই চালিয়ে নিচ্ছেন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের কাজ।

বিজ্ঞাপন

অভিযোগ রয়েছে, মাতৃ–শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এর কারণে ২০ শয্যা বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ মা ও শিশু কল্যাণ হাসপাতাল স্থাপন করতে পারছে না পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ। ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা ভবনটি ছেড়েও যাচ্ছে না আবার পূর্ণাঙ্গ সেবাও দিতে পারছে না। কিন্তু পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ ভবনটি হাসপাতালে রূপ দেয়ার জন্য একাধিকবার চেষ্টা চালালেও উভয়ের দ্বন্দ্বে সেসব স্থগিত হয়ে রয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে কয়েক বছর পূর্বে একটি জেনারেল হাসপাতাল প্রস্তাব করা হলেও তা ফাইলেই আটকে রয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার জালকুড়িতে অবস্থিত মা ও শিশু সেবা কেন্দ্রটি দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ভবনটির মালিকানার কাগজপত্র তাদের অনুকূলে রয়েছে বলে দাবী করেন। দলিল পত্রে দেখা যায়, ১৯৭৬ সালে ৮ বিঘা জমি পরিবার পরিকল্পনাকে একটি হাসপাতাল করার জন্য পুরোপুরিভাবে দান করা হয়েছে। একই সাথে এই শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে যে পরবর্তীতে এখানে পরিবার পরিকল্পনা থেকে কোনো হাসপাতাল না করলে জমি তাদের ওয়ারিশদের দখলে চলে যাবে।

বিজ্ঞাপন

জমি পাওয়ার পরেই জালকুড়িতে কাজ শুরু করে জাপান সরকারের সহায়তায় জিরো পপুলেশন গ্রোথ নামক একটি প্রজেক্ট। ১৯৮২ সালে প্রজেক্টের কাজ বন্ধ হয়ে যfওয়ার পর বেশ কিছুদিন পরিত্যক্ত থাকে জমিটি। ১৯৯২ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগকে অনুরোধ করা হয় স্থানটিতে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র চালু করতে।

এর এক বছর পর শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সংস্কার কাজ শুরু হলে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয় ভবনটি শিশু মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের প্রশাসনিক আওতায় হস্তান্তর করা হয়। সেই সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিলো পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের জন্য ২টি কক্ষ বরাদ্দ রেখে বাকি ভবনে কাজ করবে শিশু মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট। কিন্তু পরবর্তীতে মাতুয়াইলে ইনস্টিটিউটের কাজ সম্পন্ন হবার পর কয়েকটি কক্ষ দখলে রেখে শাখা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে। এ নিয়ে একাধিকবার চিঠি প্রদান করে স্থাপনা হস্তান্তর করার অনুরোধ করা হলেও বিভিন্ন জটিলতায় তা আর বাস্তবায়িত হয়নি।

এ নিয়ে কথা হয় নারায়ণগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক বসির উদ্দিনের সাথে। তিনি বার্তা২৪.কম’কে বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে শিশু মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটকে ভবনটি আমাদের নিকট হস্তান্তর করার জন্য চিঠি দেয়া হলেও তারা সেটি করেনি। আমরা অপেক্ষায় আছি কবে ভবনটি আমাদের বুঝিয়ে দেয়া হবে। সেটি সম্পন্ন হলেই এখানে সরকারি ২০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র হাসপাতাল তৈরি হবে। যেহেতু শিশু–মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এখানে দীর্ঘ সময়েও কিছু করেনি তাই আমাদের দাবি ভবনটি দ্রুত হস্তান্তর করুক। স্থানীয়রাও চাচ্ছেন এখানে একটি হাসপাতাল হোক। তারা ভবনটি ছেড়ে দিলেই আমরা এখানে সিজার, ডেলিভারি করার ব্যবস্থা করতে পারি। তাছাড়া ভবনটি পুরাতন হয়ে যাওয়ায় এর সংস্কার দরকার। কিন্তু তার পূর্বে ভবনটির একক নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।

সেবার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিশু মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট আর আমাদের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের সেবা প্রায় কাছাকাছি। কিন্ত তারা হচ্ছে একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান আর আমরা হচ্ছি সরাসরি সরকারি আওতাভুক্ত প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে আমাদের জালকুড়ি কার্যালয়ে ৯ জন কর্মকর্তা কর্মচারী সেবা দানে নিয়োজিত রয়েছেন। ৩/৪ টি পদ খালি রয়েছে যা দ্রুতই পূরণ হবে বলে জানতে পেরেছি।

এছাড়া আমাদের মাঠ পর্যায়ে কিছু কর্মী সংকট রয়েছে। আমরা দ্রুতই এসব নিয়োগের ব্যবস্থা নেব।