জামালপুরে ত্রাণের জন্য মানুষের হাহাকার

  • সাহিদুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, জামালপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

জামালপুরে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার (২৪ জুলাই) বিকাল পর্যন্ত যমুনায় ২৪ ঘণ্টায় ১৫ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও মাঠ দীর্ঘদিন পানির নিচে তলিয়ে থাকায় দুর্ভোগ বেড়েছে চরাঞ্চলের মানুষের। চরাঞ্চলগুলোতে চলছে ত্রাণের জন্য হাহাকার। নৌকা বা নৌকার ইঞ্জিনের শব্দ শুনলেই ত্রাণের জন্য ছুটে আসছে বানভাসি মানুষজন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পানি পরিমাপক (গেজ রিডার) আবদুল মান্নান শুক্রবার বিকালে বার্তা২৪.কমকে বলেন, যমুনার পানি ১৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ১০৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

জেলার ৭টি উপজেলার ৬৭৭টি গ্রামের দুই লাখ ৪৮ হাজার ৬৩৪টি পরিবারের প্রায় ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। টানা ১৪ দিন থেকে যমুনার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পানিবন্দি নিম্ন আয়ের মানুষগুলো চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

ইসলামপুরে বন্যা দুর্গত এলাকার সরেজমিনে মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্যার কারণে তারা প্রায় চার সপ্তাহ ধরে কর্মহীন। ফলে তিন বেলা ঠিকমতো খাওয়ার উপায় নেই বেশির ভাগ বানভাসি মানুষের। অনেকেই গবাদিপশুর সঙ্গে ছাপরা ঘর তুলে থাকছেন। অনেকের অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। অনেক বানভাসির হাত-পায়ে পানি বাহিত রোগও দেখা দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

কথা হয় ইসলামপুরের পার্থশী ইউনিয়নের দর্জিপাড়া গ্রামের বেলা বেগমের সাথে। তিনি বার্তা২৪.কমকে জানান, 'স্বামী মারা গেছেন তিন বছর আগে। এক মেয়ে আর একমাত্র সম্বল একটি ছাগল নিয়ে তার অভাবের সংসার কোনো মতে চলছিল। বন্যায় ঘরে পানি ওঠায় অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। তবে মেয়ে আর ছাগলের খাবার নিয়ে চরম সঙ্কটে পড়েছেন তিনি'।

অনেকেই গবাদিপশুর সঙ্গে ছাপরা ঘর তুলে থাকছেন

চিনাডুলী ইউনিয়নের গিলাবাড়ী এলাকায় বাঁধের উপর আশ্রয় নেওয়া বৃদ্ধা মহিজল মিয়া জানান, 'করোনার কারণে বাড়িতে বসে ছিলাম অনেকদিন। এখন আবার বন্যা। এই পানি কমে এই আবার বাড়ে। এভাবেই চলছে দীর্ঘ এক মাস থেকে। কি আর করমু কোনো কাজ কামও নেই। সালাম চেয়ারম্যান একবার শুধু ১০ কেজি চাল দিয়েছিল। তারপর এহন পর্যন্ত কেউ খোঁজখবর নেই নাই। কোনো রকম বেঁচে আছি খেয়ে না খেয়ে'।

আশ্রয় নেওয়া আরও কয়েকজন বলেন , 'বানের পানিতে সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে, তবে আমাগরে শেষ সম্বল গরু ছাগলই আছে। আমরা নই না খেয়ে থাকতে পারি, কিন্তু অবলা প্রাণীদের দিকে চাইলে খুব কষ্ট হয় তাদের খাবার একদুম-ই দিতে পারিনা। আর মাত্র কয়েকদিন পড়ে ঈদ। এহন গরুর যে চেহারা হয়েছে তাতে মনে হয় অর্ধেক দাম এমনিতেই কমে যাবে'।

জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো.নায়েব আলী বার্তা২৪.কমকে জানান, দ্বিতীয় দফা বন্যায় জেলায় প্রায় ১০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, জেলায় বন্যাদুর্গতদের মাঝে ৫১০ মেট্রিক টন জিআর চাল, ২৩ লাখ টাকা, শিশু খাদ্য ও গো-খাদ্য বাবদ চার লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও উপ-বরাদ্দকৃত ৩ হাজার ৪০৮ দশমিক ৫৭০ মেট্রিক টন ভিজিএফ চাল বন্যার্ত এলাকায় বিতরণ করা হচ্ছে।