‘জলাবদ্ধতা নিরসনে সংশ্লিষ্ট সবগুলো প্রতিষ্ঠানই ব্যর্থ’



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকা মহানগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়ের ঘাটতিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা ওয়াসা, দুই সিটি করপোরেশনসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট সবগুলো প্রতিষ্ঠানই ব্যর্থ হয়েছে। অন্যের কাঁধে দোষ চাপিয়ে নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানেরই এই ব্যর্থতার দায় অস্বীকারের সুযোগ নেই। তাই দায়িত্ব পালনে অবহেলার দায় অন্যের ওপর না চাপিয়ে সংকট সমাধানে এককভাবে সিটি করপোরেশনকেই এই দায়িত্ব দেওয়া জরুরি বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

কার্যত ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের (ঢাকা ওয়াসা, ঢাকা সিটি করপোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড) হাতে ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থাকায় এবং এর ফলে সমন্বয়হীনতা, অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও পারস্পরিক দোষারোপের সংস্কৃতিতে জলাবদ্ধতা সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে বলে মনে করছে সংস্থাটি।

রোববার (২৬ জুলাই) এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আইন অনুযায়ী ঢাকা মহানগরীতে প্রধান ড্রেন লাইনগুলো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার এবং শাখা লাইনগুলোর দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের ওপর ন্যস্ত। ঢাকা শহরের মোট ড্রেনেজ লাইনের মধ্যে ৩৮৫ কিলোমিটার ঢাকা ওয়াসার অধীনে এবং প্রায় ২৫০০ কিলোমিটার ঢাকা সিটি করপোরেশনের অধীনে। এর বাইরে ৭৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ২৬টি খাল ও ১০ কিলোমিটার বক্স কালভার্টের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও ঢাকা ওয়াসার। আইনের এই মারপ্যাঁচে বর্ষায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে একে অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে নিজেদের দায়িত্ব এড়াতে চায় প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে বর্ষা এলেই জনগণের ভোগান্তি বছর বছর আরও তীব্র হয়। তাই অবিলম্বে আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করে একক প্রতিষ্ঠানের হাতে সম্পূর্ণ ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা, পয়ঃনিষ্কাশন খাল ও কালভার্ট রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে নাগরিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুই সিটি করপোরেশনকেই এই দায়িত্ব প্রদান করা উচিত এবং তাদের হাতেই এক্ষেত্রে ওয়াসার এখতিয়ারভুক্ত কাজের পরিবীক্ষণের দায় থাকা উচিত।

জলাবদ্ধতা নিরসনে অর্পিত দায়িত্ব পালনে বিগত বছরগুলোতে ঢাকা ওয়াসা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে নির্বাহী পরিচালক বলেন, ঢাকা ওয়াসার একটি প্রতিবেদনে তাদের আওতাধীন ২৬টি খালের মধ্যে ২০টির প্রবাহ পূর্ণ সচল দাবি করা হয়। এর মধ্যে কাটাসুর খালকেও সচল উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু টিআইবির গবেষণায় দেখা যায়, উল্লিখিত খালের প্রবাহ সচল নেই। বিভিন্ন কঠিন বা ভারী বর্জ্য ড্রেনের উপরিভাগ এবং খালের মুখে জমে রয়েছে যা চিত্রসহ গবেষণা প্রতিবেদনে তুলেও ধরা হয়। এছাড়া গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যেও দেখা যায় সর্বশেষ (২০১৯-২০) অর্থবছরে ঢাকা ওয়াসার ২৬টি খালের মধ্যে অন্তত ১০টিতে কার্যত পুনঃখনন ও পরিষ্কারের কাজ করা হয়নি।

নির্বাহী পরিচালক বলেন, ওয়াসার আওতাধীন খাল ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে নিয়মিত তদারকির ঘাটতিও লক্ষণীয়। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রতি মাসে কমপক্ষে দু’বার খাল ও ড্রেন পরিদর্শনের নিয়ম থাকলেও তা করা হয় না। ফলে খাল দখল, খালের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণসহ বিভিন্নভাবে খাল ভরাট হয়ে থাকে। তাই ওয়াসার ব্যর্থতা অস্বীকারের কোনো সুযোগই নেই। আবার ওয়াসার ওপর এককভাবে সব দোষ চাপিয়ে ড্রেনেজ অব্যবস্থাপনা ও বর্জ্য অপসারণে ব্যর্থতার দায় সিটি করপোরেশনও কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।

টিআইবির গবেষণালব্ধ তথ্য অনুযায়ী ওয়াসা তার দায়িত্বে থাকা খাল ও ড্রেনগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও দখলমুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে একথা যেমন সত্য তেমনি এই খাল ও ড্রেনগুলোতে পতিত কঠিন বর্জ্য অপসারণের পর সেগুলো পাড় থেকে অপসারণ না করে ওয়াসার ওপর দায় চাপানোর নজিরও সিটি করপোরেশনের আছে। আবার সিটি করপোরেশনের অধীনে যে প্রায় ২৫০০ কিলোমিটার ড্রেন আছে সেগুলোও কতটা বর্জ্যমুক্ত বা সচল সেটাও প্রশ্নবিদ্ধ। বিশেষ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত ও কার্যকর কোনো পদ্ধতি গড়ে তুলতে ব্যর্থ হওয়ায় যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলা, ড্রেনগুলোর সংস্কার কাজে অযথা সময়ক্ষেপণ এবং নিয়মিত পরিচ্ছন্ন না করা, নাগরিকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যর্থতা ইত্যাদি বিষয়ে সিটি করপোরেশনের দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ড্রেনেজ সম্পর্কিত যে কোনো সংস্কারের ক্ষেত্রে ঢাকা ওয়াসার সাথে সমন্বয়ের কথা থাকলেও সিটি করপোরেশন ড্রেন কিংবা বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের নালা নির্মাণের ক্ষেত্রে বাস্তবে তা অনুসরণ করে না। আবার সিটি করপোরেশন কর্তৃক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ফলে ঢাকা ওয়াসার কোনো ড্রেনের ক্ষতি হলেও সে বিষয়ে ঢাকা ওয়াসাকে অবগত করে না। এর ফলে কোনো প্রতিষ্ঠানেরই কাজের পূর্ণ সুফল জনগণ ভোগ করতে পারে না।

ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক ২০১৮ সালের মে মাসে ‘ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে অপারেশনাল/অ্যাকশন কমিটি’ শীর্ষক একটি কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটির অন্যতম কাজ নির্ধারণ করা হয় জলাবদ্ধতা নিরসনে বিদ্যমান খাল-ড্রেন অবৈধ দখলমুক্ত, পরিষ্কার, খনন ও পুনঃখনন কার্যক্রম পর্যালোচনা করা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে এ কাজগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তাই এই সমন্বয়হীনতার জাল ছিন্ন করতেই সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের সম্পর্কিত করে প্রণীত সুনির্দিষ্ট কৌশল অনুযায়ী ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের সার্বিক দায়িত্ব একক প্রতিষ্ঠানের কাছে ন্যস্ত করতে হবে বলে মনে করছে টিআইবি।

   

হাতি দেখতে গিয়ে প্রাণটাই দিল বাবাহারা সিবাগতুল্লাহ



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মধ্য রাতে হঠাৎ এলাকায় হাজির হাতির দল। সেটি বুঝতে পেরে আশপাশের মানুষ নিজেদের ক্ষেত রক্ষায় চেচামেচি করে হাতিকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য বের হন। এই সময় উৎসুক হয়ে হাতি দেখতে যায় সিবাগতুল্লাহ রিজবী নামের ১৬ বছরের এক কিশোরও। কিন্তু বের হয়েই সে পড়ে যায় হাতির সামনে। মুহূর্তেই হাতির আক্রমণে গুরুতর আহত হয় সে। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আনা হলেও বাঁচানো যায়নি এই কিশোরকে।

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বৈলছড়ী ইউনিয়নের পূর্ব বৈলছড়ীর গোদার পাড় সংলগ্ন লিচু বাগানে এই ঘটনা ঘটে। নিহত সিবাগতুল্লাহ রিজবী বৈলছড়ীর কুলিন পাড়া এলাকার মৃত তৈয়ব উল্লার পুত্র।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। মৃত সিবাগতুল্লাহ কয়েক মাস ধরে পূর্ব বৈলছড়ীর নুন্না পুকুর পাড় এলাকায় মো. ছগিরের মুদির দোকানে চাকরি করে আসছে করে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে লিচু বাগানে হাতি আসার খবর পেয়ে উৎসুক মানুষের সঙ্গে দেখতে গেলে হাতির আক্রমণে গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করায়। পরে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

সিবাগতুল্লাহর প্রতিবেশী প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার তারিক মঈন বলেন, ছেলেটা পরিবারকে সাপোর্ট করার জন্য মুদির দোকানে চাকরি করত। যতটুকু জানি হাতির আক্রমণে মৃত্যু হলে পরিবার ক্ষতিপূরণ পায়। ছেলেটিকে তো ফিরে পাওয়া যাবে না। তার পরিবারকে যেন অর্থনৈতিক সাপোর্ট দেওয়া হয়।

বৈলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন বলেন, ছেলেটা উৎসুক হয়ে হাতি দেখতে গিয়েছিল। কিন্তু রাতের অন্ধকারে হাতির সহজ শিকার হয়ে মারা গেল। রেঞ্জ অফিসকে বিষয়টি জানিয়েছি।

এমন মৃত্যু শুধু অপ্রত্যাশিত নয় পীড়াদায়কও বটে বলে মন্তব্য করেছেন কালীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, নিয়মিত প্রচার প্রচারণা চালানোর পরেও হাতির কাছে গিয়ে মৃত্যুর শিকার হচ্ছে মানুষ! কিশোরটির পরিবারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণের আবেদন করলে আমাদের নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

;

গরু ছাগলের মতো বিক্রি হয়ে মাঠে পুইরা কাজ করি, শ্রমদিবস কি বুঝিনা!



ছাইদুর রহমান নাঈম , উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

তপ্ত দুপুরে মাঠের পাশে ধানের খলায় কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক৷ তারা সবাই একদিনের জন্য বিক্রি হয়েছেন শ্রমের জন্য। মাথার ঘাম টপটপ করে গড়িয়ে পড়ছে। গামছা দিয়ে বার বার ঘাম পরিষ্কার করছেন।

শ্রমদিবস বিষয়ে জানতে তাইলে তাদের মধ্যে আকাশ (৫৬), মরম আলী (৩৬), সবুজ (৩০) বলেন, 'শ্রম দিবস কি বুঝিনা আমরা। কাম করি খাই, আমাদের আবার কিসের অধিকার? রোজ সহালে কামের জন্য আইসা বইসা তাহি৷ লোকজন আইসা পছন্দ হইলে দরদাম কইরা রোজ চুক্তিতে নিয়া যায়। অনেকটা গরু ছাগলের হাটের মতো। সারাদিন কাম করি। সহালে আবার ফজরের পর উইঠা পরতে হয়৷ এই হইলো আমাদের জীবন ভাই।' কথাগুলো বলছিলেন তারা।

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলাসহ হাওর অঞ্চলে এখন পুরোপুরি ধান কাটার মৌসুম চলছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে কাজের লোক স্থানীয় ভাষায় (দাওয়াইল্লা)'রা কাজের জন্য আসেন। এর মধ্যে অনেকেই অস্থায়ী শ্রমিক আবার অনেকেই সবসময়ই কাজ করেন। অনেকেই বিভিন্ন স্টেশন, স্কুলের বারান্দায় শুয়ে রাত কাটান।

শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কটিয়াদী বাস স্ট্যান্ডে প্রতিদিন ভোর সকালে তারা দলবেঁধে অপেক্ষা করতে থাকেন৷ যাদের শ্রমিক প্রয়োজন তারাও সকালে এসে দরদাম করে নিয়ে যায়। এটি এখানকার অনেক পুরনো হাট। দেখলে মনে হবে মানুষ বিক্রির হাট। তবে এখানে মানুষ নয় শ্রম বিক্রি হয়৷

শ্রমিকরা বলেন, রোজ কাজ করে যা ইনকাম হয় তা জমানো সম্ভব হয়না। পরিবার নিয়ে চলতে তাদের কষ্ট হয়। অসুস্থ হলে তো রোজগার বন্ধ। চিকিৎসার অভাবে বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে থাকতে হয়। বর্তমানে জিনিসপত্রের দাম বেশি৷ সেইভাবে তাদের শ্রমের দাম তো বৃদ্ধি হয়নি। কোনরকম বেঁচে থেকে জীবনটা পার করাই লক্ষ্য।

সরকারের কাছে তাদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, জিনিসপত্রের দাম কমানো ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির।

;

রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ২১



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ২১

রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ২১

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে ২১ জনকে আটক করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অপরাধ ও গোয়েন্দা বিভাগ। মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগে তাদের আটক করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সকাল ছয়টা থেকে বুধবার (১ মে) সকাল ছয়টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্য উদ্ধারসহ তাদেরকে আটক করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩৪০ পিস ইয়াবা, ১৫৫ গ্রাম হেরোইন, ৩৩ কেজি ৭০০ গ্রাম গাঁজা ও ১০০ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়েছে বলে জা‌নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অপরাধ ও গোয়েন্দা বিভাগ।

ডিএমপির নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে এ অ‌ভিযান প‌রিচালনা করা হয়েছে বলে জানানো হয়। সেই সঙ্গে আটককৃতদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ১৩ টি মামলা রুজু হয়েছে বলেও জানানো হয়।

;

পাথর শ্রমিকদের বোবা কান্না



মশাহিদ আলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
পাথর শ্রমিকদের বোবা কান্না, ছবি: নূর এ আলম

পাথর শ্রমিকদের বোবা কান্না, ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলা জাফলং। যেখানে ভ্রমণে এসে প্রতিদিন আনন্দ পায় হাজার হাজার পর্যটক। সেই পর্যটন এলাকার মানুষের বোবাকান্না শুনে না কেউই। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের অন্য কোনো কর্মসংস্থান না থাকায় স্থানীয় লোকজন পিয়াইন নদী থেকে বালু এবং পাথর উত্তোলন ও পাথর ভাঙার কাজ করে সংসার চালান। কিন্তু তাদের সংসারে বর্তমানে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। আন্দোলন সংগ্রাম করেও পাচ্ছেন না ফল।

এমন অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করে ৭৫ বছর বয়সী পাথর শ্রমিক সুনামগঞ্জের আলতু মিয়া বলেন, টাকার অভাবে চিকিৎসাও করতে পারি না, অনেক সময় না খেয়েও আমাদের দিন কাটাতে হয়। পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয়। আর শ্রমিক দিবস যে আসলে কি তা আমরাও বুঝি না। আমরা কিভাবে খেয়ে বাঁচবো সে চিন্তায় থাকি।যে সময় মানুষ আন্দোলন করে আমরা তখন যাই।কিন্তু আন্দোলন করে কোনো লাভ হয় না।

তিনি বলেন, ৩০ বছর ধরে জাফলংয়ে বসবাস। পেশায় তিনি পাথর শ্রমিক। পাঁচ সদস্যের পরিবারে একমাত্র উপার্যনকারী। ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।

পিয়াইন নদী থেকে তোলা পাথর, সেই পাথর ভাঙার কাজ করে সংসার চালান অনেক শ্রমিক/ছবি: নূর এ আলম


সকাল পেরিয়ে দুপুরের খরতাপে মাথা থেকে কপাল চুইয়ে মুখ গড়িয়ে পড়ছিল ৬৯ বছরের নিজাম উদ্দিনের ঘাম। ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তিনি। কাজের ফাঁকে কথা হয় তাঁর সাথে প্রতিবেদকের।

তিনি জানালেন, বর্তমানে তাদের পরিস্থিতি খুব খারাপ যাচ্ছে। এক ট্রাক এলসি পাথর ভাঙতে পারলে ১২০০ টাকা পান। এখন একদিন হোক বা ৩দিন হোক যে কয়দিন সময় যাক ওই টাকার উপরে একটা টাকাও কেউ দেবে না।

তিনি বলেন, মে দিবস বা শ্রমিক দিবসে আন্দোলন করে ছার আনা আমাদের লাভ বা কোনো কিছু আমরা পাইনি। আমদের মজুরিও বাড়ছে না। এক টাকা বাড়েনি। বরং আমাদের লস(ক্ষতি) হচ্ছে। আগে এলসি পাথর ভাঙতে পারলে ১৬০০ টাকা নিয়ে ঘরে ফিরতে পারতাম। এখন সেই পাথর ভেঙ্গে ১২০০ টাকা নিয়ে ফিরতে হচ্ছে। যদি পাথর কোয়ারি খুলে দেয়া হতো তাহলে এমন অভাব অটনটনে দিন কাটাতে হতো না। শুধু আলতু মিয়া ও নিজাম উদ্দিন নয়, এমন আরও অনেক শ্রমিকের দিন পাত যাচ্ছে কষ্টে।

পাথরের স্তুপ, ছবি: নূর এ আলম


সরেজমিনে সিলেটের জাফলংয়ে গিয়ে দেখা যায়, তীব্র গরমে নারী-পুরুষ সমান তালে কাজ করে যাচ্ছেন ক্রাশার মিলে। অনেকেই নতুন কাজের সন্ধানে ছুটে যাচ্ছেন দিকবিদিক। জাফলং বিজিবি ক্যাম্পের পাশে কয়েকটি ক্রাশার মিল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে মেশিন ও যন্ত্রপাতিতে মরিচিকা ধরেছে। আর পিয়াইন নদী থেকে ছোট ছোট নৌকা দিয়ে বালু সংগ্রহ করে সেখানেও পাথর খুঁজে বেড়ান কিছু সংখ্যক শ্রমিকেরা।

জানা যায়, ২০১২ সালে জাফলংয়ের পিয়াইন নদীসহ ১৫ কিলোমিটার এলাকাকে ‘পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়। ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এ সংক্রান্ত গেজেটে বলা হয়, ‘অপরিকল্পিতভাবে যেখানে-সেখানে পাথর উত্তোলন ও নানাবিধ কার্যকলাপের ফলে সিলেটের জাফলং-ডাউকি নদীর প্রতিবেশ ব্যবস্থা সংকটাপন্ন, যা ভবিষ্যতে আরও সংকটাপন্ন হবে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। ইসিএভুক্ত এলাকায় যান্ত্রিক বা ম্যানুয়াল কিংবা অন্য কোনো পদ্ধতিতে পাথরসহ অন্য যেকোনো খনিজ সম্পদ উত্তোলন নিষিদ্ধ।’ কেবল জাফলং আর শাহ আরেফিন টিলা নয়, এমন চিত্র সিলেটের প্রায় সবগুলো পাথর কোয়ারি এলাকার। পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর সিলেটের জাফলং, ভোলাগঞ্জ, শাহ আরেফিন টিলা, বিছনাকান্দি ও লোভছড়া–এই পাঁচ কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।

 

পাথর শ্রমিক হিসেবে কাজ করে দিন ১০০ থেকে ৪০০ টাকা করে পান শ্রমিকরা, ছবি: নূর এ আলম


এর আগে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) দায়ের করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলোতে যন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে উচ্চ আদালত।

জাফলং ক্রাশার মিলে কাজ করেন ষাটোর্ধ্ব রহিমা বেগম। তিনি বলেন, সারাদিন কাম-কাজ করে দুই থেকে আড়াইশ টাকা পাই।কিন্তু বর্তমানে যেভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যে দাম এই টাকা দিয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তবুও কাজ করতে হয়।কাজ না করলে ঘরে না খেয়ে মরতে হবে।

রেখা গোয়ালা বলেন, কোনো দিন ১০০ টাকা আর কোনো দিন ৪০০ টাকা পাই। এসব টাকায় পর্তায় পড়ে না। এতো কষ্ট করেও বাচ্চা-কাচ্চাদেএ মুখে হাসি ফুটানো যায় না। তার চেয়ে কোয়ারি খুলে দিলে খেয়ে বাঁচতে পারতাম।


এছাড়াও আরও কয়েকজন শ্রমিক জানান,নদী থেকে পাথর তোলা বন্ধ হওয়ার পর থেকে অভাব অনটনে চলছে তাদের জীবনযাত্রা। কাজ না পেয়ে অনেকেই অপরাধের সাথে জড়িত হচ্ছে। সিলেট ছাড়াও অন্যান্য জেলার যারা শ্রমিক ছিলেন তারাও এলাকায় গিয়ে কাজের সন্ধান করছেন। আমরা না খেয়ে মরলেও কারো কোনো কিছু আসে যায় না।

এ বিষয়ে পিয়াইন পাথর উত্তোলন ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি সহসভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান লিলু বলেন, কোয়ারী সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। না আমরা চলতে পারছি, না আমাদের বাচ্চা-কাচ্চা চলতে পারতেছে। কোয়ারিগুলো বন্ধ থাকায় এখানকার শ্রমিকদের অভাব অনটন ও অনাহারে দিনপার করতে হচ্ছে। কিছু শ্রমিক কাজের জন্য ঢাকায় গার্মেন্টসে ছুটতেছে। যারা ক্ষুদ্র সম্বল নিয়ে ব্যবসায় শুরু করেছিল তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। এখন তারা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরতেছে।

প্রধানমন্ত্রীসহ খনিজ মন্ত্রণালয়সহ সবার কাছে একটাই আবদেন আমাদের কথা ও ছেলে-মেয়েদের কথা চিন্তা করে পাথর কোয়ারি খুলে দিলে আমরা দু-বেলা দুমুঠো ভাত খেয়ে বাঁচতে পারবো।

এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.তৌহিদুল ইসলাম বলেন, মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে বেশ কয়েকটি রিট রয়েছে। তাছাড়া এ বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখভাল করছেন।

;