আশুলিয়ায় দূষিত পানিতে বন্দি ১০ হাজার পরিবার
মহামারি করোনাভাইরাসের তাণ্ডব চলাকালে দেশে নতুন করে হানা দিয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা। বন্যার পানির তোড়ে প্লাবিত হয়েছে সাভার ও আশুলিয়ার নিম্নাঞ্চল। বিষাক্ত কালো পানি বিভিন্ন শ্রমিক কলোনিতে উঠে পড়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে শ্রমিকদের সাধারণ জীবন।
শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ার অনেক শ্রমিক কলোনিতে বিষাক্ত কালো পানি ওঠে বসবাসের অযোগ্য হওয়ায় বাসা পরিবর্তন করছেন অনেকেই। আর পানিবন্দী হয়ে দিনাতিপাত করছেন ১০ হাজার পরিবার। ধীরে ধীরে বন্যার পানি বাড়ায় সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ের নতুন নতুন অঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
সাভারের আশুলিয়ার বাইপাইল, কাইচাবাড়ি, শিমুলিয়া ও ধামরাইয়ের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে অনেক আঞ্চলিক সড়ক। ফলে কয়েকটি সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ধামরাইয়ে পানি ওঠেছে বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিকেো। এত করে ব্যাঘাত ঘটেছে স্বাভাবিক স্বাস্থ্য সেবার।
আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকার সালাম বলেন, নিম্নাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আশেপাশের ছোট ছোট জলাশয় প্লাবিত হয়েছে। জলাশয়ের কালো পানি আমাদের ঘরের ভিতরে চলে এসেছে। কয়েকদিন এ অবস্থায় ছিলাম। আজ খাটের ওপর পানি ওঠায় বাসা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছি।
আরেক শ্রমিক বলেন, এই পানি এত বিষাক্ত যে পায়ে লাগলেই চুলকাতে থাকে। পরে ঘায়ের সৃষ্টি হয়। আমাদের আয় সীমিত হওয়ায় এই কলোনিতে কম টাকা ভাড়ায় বসবাস করে আসছিলাম। এখন বিপদে পড়ে গেলাম। প্রায় সকল কম ভাড়ার শ্রমিক কলোনিতে পানি উঠে ভরে গেছে। তার উপর বাসা পরিবর্তন করতে হলে গুণতে হবে বাড়তি টাকা।
ধামসোনা ইউনিয়নের বাইপাইল এলাকার ৪২টি গরু নিয়ে খামার করেছেন ইমরান হোসেন। তার বাড়িসহ গরুর খামারেও পানি ওঠেছে। কোনো কুল কিনারা না পেয়ে ২৮টি গরু বাড়ির ছাদে তুলেছেন তিনি। এখানেই কষ্ট করে খাবার সংগ্রহ করে খাওয়াচ্ছেন। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, খুবই কষ্টে আছি। এতগুলো গরু রাখার জায়গা নেই। আরো ২২টি ছোট গরু বিভিন্ন বাড়িতে রেখেছি। আমাদের পাশে এই মুহূর্তে জন প্রতিনিধিদের দাঁড়ানো উচিত। গত তিন দিন ধরে আমরা পানিবন্দি, এখন পর্যন্ত কোনো জনপ্রতিনিধি খবর নেয়নি।
এদিকে ১০ বছর বয়সী নীরব নামের এক কিশোর ফোম দিয়ে ভেলা বানিয়ে মানুষ পারাপারসহ বাসা পরিবর্তন করতে সহযোগিতা করছে।
ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুর রিফফাত আরা বলেন, আমাদের কিছু কমিউনিটি ক্লিনিকের বারান্দায় পানি উঠেছে। আমরা স্বাস্থ্য সেবা স্বাভাবিক রেখেছি। কিন্তু রোগীরা পানির ভেঙে ক্লিনিকে আসছে। তারা অনেকই এ অবস্থা দেখে ফিরেও যাচ্ছেন। তবে নৌকায় করে আমরা স্বাস্থ্য সেবা প্রদান অব্যাহত রেখেছি।
এদিকে ধামসোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মইনুল ইসলাম ভূইয়াকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করেও পাওয়া যায়নি।